জরুরি বিভাগের এক পাশের মেঝেতে নিথর হয়ে বসে আছেন রিয়ার বাবা কোরবান আলী। তিনি নারায়ণগঞ্জের পোশাক কারখানা রিয়া ফ্যাশনের মালিক। মেয়েকে হারিয়ে একেবারে নিস্তব্ধ। পাশে পরিবারের অন্য সদস্যরা বিলাপ করছেন।
নারায়ণগঞ্জের রিয়া পড়াশোনা করতেন মালয়েশিয়ায়। শনিবার (২ মার্চ) তার দেশটিতে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে আর হলো না। রাজধানীর বেইলি রোডের ভবনে লাগা আগুনে নিহত হয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) বেইলি রোডের একটি বাণিজ্যিক ভবনে আগুনের ঘটনায় অন্তত ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। ভবনের নিচতলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানিয়েছে সিআইডি।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দৃশ্য যে কাউকে নাড়িয়ে দেবে। অসংখ্য মানুষের ভিড়; কারও চোখে পানি, কেউবা বুকফাটা আর্তনাদ করছেন। তাদের পাশেই লাশবাহী ট্রলি নিয়ে অপেক্ষায় মর্গের সদস্যরা।
জরুরি বিভাগের এক পাশের মেঝেতে নিথর হয়ে বসে আছেন রিয়ার বাবা কোরবান আলী। তিনি নারায়ণগঞ্জের পোশাক কারখানা রিয়া ফ্যাশনের মালিক। মেয়েকে হারিয়ে একেবারে নিস্তব্ধ। পাশে পরিবারের অন্য সদস্যরা বিলাপ করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাদের একজন প্রতিবেশী বলেন, ‘দুই মেয়ের জন্য ভদ্রলোক কি না করতেন। কিন্তু এখন এক মেয়েকে হারিয়ে ফেললেন। নিজেকে হয়তো সামলে নিতে পারবেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘২ তারিখ রিয়ার মালয়েশিয়া ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কার ভাগ্যে কী লেখা কে বলতে পারবে !’
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা জানান, ২৯ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টা ৫০ মিনিটে তারা আগুনের খবর পান। প্রথম ইউনিট রাত ৯টা ৫৬ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছে।
রাত ১১টা ৫০ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট ওই ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে বলে জানান কর্মকর্তারা। ভবনটি থেকে ৪২ জনকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
রাত ২টা পাঁচ মিনিটের দিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন গণমাধ্যম কে বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৩ জন মারা গেছেন। শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিটিউটে এখন পর্যন্ত ১০ জন মারা গেছেন।’
রাত আড়াইটার পরে আরও দুজনের মৃতদেহ ঢামেকে আনা হয় বলে রমনা থানার সূত্রে জানা গেছে। পরিস্থিতিকে ভয়াবহ উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যারা এখন পর্যন্ত বেঁচে আছেন, তাদের বেশিরভাগের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বার্ন ইউনিটে ভর্তি আছেন।’
Discussion about this post