সারাদেশে তীব্র গরমে ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করেছে সরকার। এই অবস্থায় একটু স্বস্তি নিতে আবালবৃদ্ধবনিতা ছুটে বেড়াচ্ছেন সর্বত্র । শুক্রবার (২৬) এপ্রিল বিকেল থেকেই নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র দেওভোগ রাসেল পার্কে হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসেন এক পরশ স্বস্তির জন্য । কোমলমতি শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধদের অনেকেই এসেছেন নাতি নাতনীদের নিয়ে এই পার্কের ভিতরে । আর এই রাসেল পার্ক কে পতিতালয় আখ্যায়িত করেছেন ডিআইটি মসজিদের ঈমাম নানাভাবে বিতর্কিত মাওলানা আউয়াল।
বিগত সময়ের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে বিতর্কিত মাওলানা আউয়াল ও তার অনুসারী চক্র এইটি পরিবারের দালালী করে নানাভাবে বিতর্ক সৃষ্টি করে নগরীর শান্ত পরিবেশ অশান্ত করার পায়তারা করেছে, যা এখনো করেই যাচ্ছে । বিগত সময়ে সানী লিওন কে নিয়ে মসজিদের মিম্বরে বসে খুৎবায় আলোচনা করে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পরেন মাওলানা আউয়াল। সাংবাদিকদের মোবাইল ল্যাপটপ লুট হয় সাইনবোর্ড এলাকার হোফাজতের আন্দোলনে আর সেই লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার হয় বিতর্কিত মাওলানা আউয়ালের মাধ্যমে ডিআইটি মসজিদে বসে। এমন অসংখ্য ঘটনা ছাড়াও সম্প্রতি মসজিদে বসে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে লাশ ফেলার হুমকি দেয় মসজিদে বসেই। এ ছাড়াও অসংখ্য ঘটনায় এই আউয়াল চক্র শহরকে অশান্ত করতে একটি পরিবারের পদলেহন করে অসংখ্য নাশকতার মামলা থেকে রক্ষা পেয়ে একটি পক্ষের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী যা খুশি তা করেই যাচ্ছেন । আর এই রাসেল পার্ক খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছেন । তাহলে কি এই মাওলানা আউয়ালের ভাষ্যমতে প্রধানমন্ত্রী পতিতালয়ে উদ্বোধন করেছেন ?
এমন প্রশ্ন ছুড়ে শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, “গত বছর ১৪ নভেম্বর মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নতুন করে গড়ে তোলা শেখ রাসেল নগর পার্ক আর দৃষ্টিনন্দন বাবুরাইল ও সিদ্ধিরগঞ্জ খাল এখন উদ্বোধন করেন। এগুলো চালু থাকায় ১০টি প্রকল্প শোভা পাল্টেছে নারায়ণগঞ্জ নগরীতে। আর এই প্রধানমন্ত্রীর উদ্ভোধন করা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ট পুত্র শেখ রাসেলের নাম অনুসারে রাসেল পার্ককে পতিতালয় বলার ঔধ্যত্ব কেমনে পায় এই আউয়াল ? নারায়ণগঞ্জের আওয়ামীলীগ নেতারা তাইলে করে টা কি ? মাওলানা আউয়ালের এমন ঔধ্যত্বপূর্ণ বক্তব্যে নিয়ে এখনো নিশ্চুপ কেন নেতা-এমপিরা ?
এ ছাড়াও গত কয়েকদিন যাবৎ একটি চমৎকার দৃষ্টিনন্দন এবং নারায়ণগঞ্জ শহরের পরিবেশ রক্ষায় অতি গুরুত্বপূর্ণ পার্ককে যারা পতিতালয়ের সাথে তুলনা করে তারা কোন মানসিকতার মানুষ ? আসলে তারা কি মানুষ নাকি জানোয়ার? এই প্রশ্নগুলি করছেন এখন এই শহরের সর্বস্থরের মানুষ।
গত দুই দিন এই শহরের দেওভোগ বাবুরাইল পাইকপাড়া নিতাইগঞ্জ সহ বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে তারা মনে করেন সিটি করপোরেশনের মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী এই পার্কটি নির্মাণ করে এই শহরের পরিবেশ রক্ষায় যে ভূমিকা রেখেছেন সেটা যুগ যুগ ধরে এই শহরের মানুষ মনে রাখবে।
তারা মনে করেন এই যে এই সময়ে এসে তীব্র গরমে মানুষ সীমাহীন কষ্ট ভোগ করছে তাতে শেখ রাসেল পার্কের মতো যদি সারা দেশের শহরগুলিতে গাছপালা থাকতো তাহলে নিশ্চয়ই এতোটা গরম সইতে হতো না। তাই এমন একটি সুন্দর পার্ককে যারা পতিতালয় বলে তাদের চেয়ে নোংরা মানসিকতার মানুষ হতে পারে না বলেই সাধারণ মানুষ মনে করেন।
তাই এই পার্কে গিয়ে প্রতিদিন যে হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন প্রকৃতিকে উপভোগ করেন, ব্যায়াম করেন, বিশ্রাম নেন। ওই সকল মানুষ এখন বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। তারা ভয়ংকর এই ধর্ম ব্যবসায়ীরা এই পার্কে ঢুকে যে ভাংচুর চালিয়েছে তার বিচার চায়।
এদিকে নারায়ণগঞ্জবাসী মনে করেন কথিত মাওলানা আউয়াল আর ফেরদৌস নারায়ণগঞ্জে মারাত্মক বিতর্কিত দুইজন মানুষ। বিগত সময়ে তারা বিভিন্ন সময়ে বর্তমান সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নানা রকম বক্তব্য দিয়ে এসেছে। কিন্তু সুবিধাবাদী এই দুই আলেমরুপী ব্যক্তি নারায়ণগঞ্জের একজন প্রভাবশালী এমপির সাথে সখ্যতা বজায় রেখে চলেছেন বলে বিভিন্ন সময়ে নানা রকম বিতর্কিত কর্মকান্ড করেও তারা পার পেয়ে গেছেন।
আর বিগত বছরগুলিতে এই দুই জনের মাঝে ফেরদৌস একজন ভয়ংকর ব্যক্তি হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। ইসলামী সংগঠনের নামে এই ফেরদৌস নানা রকম ব্যবসা বাণিজ্য জড়িত রয়েছে। তার কর্মকান্ডও ইসলাম সম্মত নয় বলে জোরালো মতামত রয়েছে। এই ফেরদৌস ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতির নামে ধর্ম ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও অনেকে মনে করেন। তাদের সরকার বিরোধীতাও ভাওতাবাজী। বাস্তবে এরা সরকারী দলের ওই এমপির সাথে সখ্যতা রেখে সকল কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে। ওরা লোক দেখানো কাজ করছে।
তবে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, এদেরকে এখন আর ওই এমপি কোনো রকম পাত্তা দিচ্ছেন না। তিনিও চান মেয়র আইভীর সাথে মিলেমিশে কাজ এই শহরের গণমানুষের জন্য কাজ করতে। যদিও এই মুহুর্তে কোনো একজন এমপি তাদেরকে মেয়রের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফেরদৌস আর আউয়াল গংই ওই এমপির সাথে মেয়রের ঐক্যটাকে মোটেও মেনে নিতে পারছে না। ওরা যেকোনো মূল্যে আবারও মেয়রের সাথে ওই এমপির বিরোধ সৃষ্টির পায়তারায় লিপ্ত রয়েছে।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এরা নিজেরাই বার বার ওই এমপির নাম ব্যবহার করে এমপিকে বিতর্কিত করেছে। ওরা এখন হাত পা ভেঙ্গে দেয়ার কথা বলছে। মানুষ খুন করার হুমকি দিচ্ছে। পার্কের ভেতর ঢুকে ভাংচুর করার অপরাধে ওদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আদালতে মামলা করেছে সিটি করপোরেশন। মেয়র আইভী এখন দেশের বাহিরে অবস্থান করছেন। ওরা মামলা ফেস না করে মানুষ খুন করার মতো হুমকি দেয়ার সাহস কোথা থেকে পায়। তাহলে এই শহর কি মগের মুল্লুক?
তাই এখনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান না নিলে যেকোনো অঘটনের জন্য প্রশাসন দায়ী থাকবে বলে নগরবাসী মনে করেন। এই সুন্দরতম পার্কটির ভেতরে ঢুকে যারা ভাংচুর চালিয়েছে ওদের বিরুদ্ধে আদালতও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে নগরবাসী আশা করছেন।
এদিকে এ বিষয়ে জানতে নারায়ণগঞ্জের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আইনের ঊর্ধ্বে তো কেউ নয়। একটা প্রতিষ্ঠানের ভেতর ঢুকে ভাংচুর করবে আর তার বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না। এটি কেমন আবদার? তারা নির্দোষ হলে রেহাই পাবে। কিন্তু মামলা করাতে হুমকী ধমকী দেয়া এ কিসের আলামত? ‘হাত ভেঙে দেবে’ ‘পা ভেঙে দেবে’ ‘খুন করবে’ এসব হুমকির অর্থ কী? এটা কি জঙ্গি-রাষ্ট্র নাকি? ওরা এই সাহস পায় কোথায়?
তিনি আরো বলেন, এটা একটা দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। যারা অন্তরে পতিতা লালন করে বাইরে তারা সর্বত্রই পতিতা দেখে। যাদের অন্তরে আল্লাহর অস্তিত্ব বিরাজমান তারা সর্বত্র আল্লাহর সৃষ্টির সৌন্দর্য অনুভব করে। আমি তো বাইরে কেবল মা, বোন, কন্যাদেরই দেখি, কোথাও তো অন্য কিছু দেখি না। এই জায়গায় যখন দিনের বেলায় অসামাজিক কাজ হতো, মাদকের বিস্তার ছিল, তখন এই বক-ধার্মিকদের বিরোধীতা দেখা যায় নাই। এর আগেও তারা ধর্ম-রক্ষার নামে নারায়ণগঞ্জে গোলযোগ সৃষ্টির পাঁয়তারা করছিল। এখনো ওরা ওদের সেই অবস্থান
থেকে বেরিয়ে আসতে পারে নাই। বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে ওরা নতুন করে লাফালাফি শুরু করেছে বলে ধারণা করছি।এদিকে এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণ মানুষ এই আউয়াল আর ফেরদৌসের উপর চরম ভাবে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। তারা মনে করেন ফেরদৌস গং ধর্মের নামে নানা সময়েই লম্ফঝম্ফ করে এসেছে, এখনো করছে। কিন্তু ওরা যে ধর্মকে পুঁজি করে কিছু ব্যক্তিকে হাত করে এসব করছে এটা এখন জানে নারায়ণগঞ্জের সবাই। নারায়ণগঞ্জ শহর এবং আপপাশের এলাকায় বাস করেন অন্তত দশ লাখ মানুষ। তাদের মাঝে সর্বোচ্চ ২/৩ শ মানুষ ওদের অনুসারী।
এদেরকে জড়ো করেই ওরা নানা সময়ে নানা রকম মিশন নিয়ে মাঠে নামে। ফলে শহরের অধিকাংশ মানুষ মনে করেন ধর্ম ব্যবসায়ী এই চক্র নিজেদের ফায়দা হাসিলের জন্য বিভিন্ন সময়ে নানা কিসিমের অপকর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে। কিন্তু যখনই প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে তৎপর হয়েছে তখনই ওরা লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে। অতএব আরো আগে থেকেই এরা একটি চিহ্নিত অপশক্তি হিসাবে নগরবাসীর মাঝে চিহ্নিত হয়ে আছে ।
Discussion about this post