নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
“আমার বিরুদ্ধে এই বস্তিতে আগুণ দেয়ার অভিযোগ দিয়েছে থানায় । থানা পুলিশ আমার সাথে কথা বলে গেছে । প্রমাণ থাকলে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ । এই সম্পত্তি সরকারী । আমি আগুন দিতে যাবো কেন । আমার এই কার্যালয় কিছু সরকারী সম্পত্তির উপর করছি আর কিছু আমার নিজের ক্রয় করা। ওরা আমার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছে আমিও ওদের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছি । কারণ আমার অফিসের এসি পুড়ে গেছে, অফিসের পিছরে আগুনে সামান্য ক্ষতি হয়েছে । ওরাই এই আগুণ দিয়েছে বলে আমার ধারণা ।“ -এভাবেই নানা অপকর্মের হোতা রফিক ভেন্ডার দলবল সাথে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট এর সাথে তার নিজ কার্যালয়ে উল্লেখিত মন্তব্য করেন ।
শামীম ওসমান, সেলিম ওসমানসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতাদের ছবি টাঙ্গিয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিস তৈরী করে দিব্বি নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন রফিক ভেন্ডার । এরই মধ্যে কথা বলতে গেলে তিনি আরো বলেন, আমি আওয়ামীলীগের রাজনীতি করি । তাই এই নেতাদের ছবি রেখেছি ।
অথচ অনেকের জোড়ালো অভিযোগ থেকে জানা যায়, রফিক ভেন্ডার এমন কোন অপকর্ম নাই যা সে করে না । রফিক ভেন্ডারের নানা অপরাধ মূলক কাজের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস করে না । কথায় কথায় এমপি শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান, ভিপি বাদলসহ জেলার প্রভাবশালী নেতাদের নাম ব্যবহার করে যা খুশি তাই করে যাচ্ছে । সরকারী সম্পত্তির উপর রফিক ভেন্ডারের লোভের আগুণে পুড়ে গেলো অসংখ্য পরিবার । ঈদের মাত্র কয়েকদিন আগে এই পোড়া আগুণের কষ্টের উপর দাড়িয়ে অনেকেই আলু পোড়া দিয়ে খাচ্ছে । যার প্রতিফলন হলো, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তার দপ্তরে এসে পুলিশ আড্ডা দিতে দেখা যাচ্ছে । কোন মামলা হচ্ছে না । নেয়া হচ্ছে না কোন ব্যবস্থা ।
রফিক ভেন্ডারের কার্যালয়ে পুলিশের আড্ডা দেয়ার দৃশ্য দেখে ক্ষতিগ্রস্থ অনেকেই বলেন, আগুণে পোড়ার দৃশ্য যতটা না কষ্ট পেয়েছি তার চাইতে কষ্ট পেয়েছি পুলিশ আর রফিক ভেন্ডারের আড্ডা দেয়ার দৃশ্য দেখে ।
খোজ নিয়ে আরো জানা যায়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশে ফতুল্লা রেজিস্টি অফিস, জেলা কারাগার ও পেট্টোল পাম্প সংলগ্ন বস্তিতে আগুণ দেয়ার ঘটনায় এখনো কোন মামলা বা প্রতিবেদন দাখিল করতে পারে নাই কোন দপ্তর । আগুন দেয়ার ঘটনায় রফিক ভেন্ডারের বিরুদ্ধে ফতুল্লা থানায় ক্ষতিগ্রস্থরা অভিযোগ দায়ের করলেও দিব্বি আয়েশের সাথেই রেজিষ্ট্রি অফিস সংলগ্ন সরকারী জমির উপর অবৈধভাবে গড়ে তোলা কার্যালয়ে বসেই অফিস করে যাচ্ছেন মহাধূর্ত রফিক ভেন্ডার ।
প্রায় ৫০/৬০ টি ঘর ছিল এই বস্তিতে। আর এই ৫০ টি ঘরকে কেন্দ্র করে ব্যবসা করে ৫০ পরিবারের প্রায় কয়েক শ’ সদস্যের জীবিকা নির্বাহ হতো। কিন্তু রফিক ভেন্ডারীর লোভের আগুনে পুড়ে এক রাতেই সব পুড়ে ছাই হয়ে গেলো।
বস্তির ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা যায়, মূলত বস্তিটি সরকারী জায়গার উপর গড়ে উঠেছিল। আর এই বস্তির পূর্ব পার্শ্বের জমির মালিক হচ্ছে রফিক ভেন্ডারী। ভেন্ডারী হিসেবে কাজ করায় জমি জমার মারপ্যাচ সম্পর্কে তার ভাল দক্ষতা রয়েছে। সেই সূত্র ধরেই তিনি অনেকদিন ধরেই এই বস্তি দখলের লোভ করে আসছিলেন। বস্তিবাসীকে বস্তি ছাড়ার জন্য কয়েকবার হুমকি ধমকি দিয়েছেন তিনি। কিন্তু এই হুমকি ধমকিতে কাজ না হওয়ায় এবার তিনি অন্য পন্থা বেছে নিয়েছেন। আর সেটা হলো আগুনে পুড়িয়ে দেয়া।
আগুণে ক্ষতিগ্রস্থ ঝুট ব্যবসায়ী মাসুদ শেখ বলেন, রফিক ভেন্ডারী কয়েকদিন পর পরই এই বস্তির ছাড়ার জন্য হুমকি দিয়ে আসছিল। সর্বশেষ বলেছিল, ভাড়া দিতে হবে, অন্যথায় বস্তি ছাড়তে হবে। আমরা বলেছিলাম, যেহেতু আমাদের কাছে নোটিশ আসে নাই, তাহলে কেন বস্তি ছাড়বো। আর তাই আমাদেরকে সড়ানোর জন্যই এবার বস্তি আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। বস্তি আগুনে পুড়িয়ে জায়গা দখলের পায়তারা করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য এক ব্যবসায়ী বলেন, আমাদেরকে সময় দিলে আমরা চলে যেতাম। কিন্তু আমাদেরকে সময় না দিয়েই বস্তি আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হলো। আমরা ঈদ উপলক্ষ্যে দোকানে নতুন মাল তুলেছিলেন। এই মাল বিক্রি করা আগেই সব মাল পুড়িয়ে দেয়া হলো। এখন আমরা কোথায় যাবো। ঈদ উপলক্ষ্যে হাতের সকল টাকা দিয়ে মাল তুলেছিলাম। ফলে এখন হাতে টাকাও নেই, যে নতুন করে অন্য জায়গায় আশ্রয় নেব।
এদিকে এই ঘটনায় ৩ আগস্ট শনিবার ওই এলাকার বাসিন্দা আব্দুল আজিজের ছেলে মোঃ মুনছুর ফতুল্লা মডেল থানায় রফিক ভেন্ডারী ও তার দুই সহযোগী জনি ও আলাউদ্দিনের নামে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ তিনি উল্লেখ করেছেন, তিনি সহ ৫০ পরিবার ফতুল্লা রেজিস্টি অফিস সংলগ্ন বস্তিতে বসবাস করে আসছিলেন। রফিক ভেন্ডার ওই এলাকার পূর্ব পার্শ্বের জমির মালিক। সে দীর্ঘদিন যাবত মুনছুর সহ এই এলাকায় বসবাস রত প্রত্যেক পরিবারকে বস্তির ছাড়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছিল। কিন্তু সরকার কর্তৃক উচ্ছেদের ঘোষণা কিংবা নোটিশ না আসায় তারা এই বস্তি ছাড়ে নাই। এতে রফিক ভেন্ডার তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে যান।
তারই সূত্র ধরে গত ৩১ জুলাই দুপুরে রফিক ভেন্ডার ও জনির যোগসাজেসে রফিকের ম্যানেজার আলাউদ্দিন ও অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ লোক নিয়ে বস্তিতে হুমকি দেয়, যদি স্বেচ্ছায় বস্তি না ছাড়া হয় তাহলে বস্তি জ্বালাইয়া দিবে। এমতবস্থায় গত ২ আগস্ট ভোর রাতে বসবাসরত বস্তিবাসী ঘুমে থাকাবস্থায় টের পান যে, বস্তিতে আগুন লাগছে। তারা বাহির হয়ে দেখেন আগুনে বস্তির ঘর বাড়ি ও বিভিন্ন ঝুটের দোকান আগুনে পুড়ে ভূস্মীভূত হয়ে গেছে।
আর তাই তাদের সন্দেহ রফিক ভেন্ডার সহ তার সহযোগীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বস্তিতে আগুন লাগিয়ে সকলকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করতে পারে। বর্তমানে তারা গৃহহারা পরিবার পরিজন নিয়ে খোলা আকাশে নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
শুক্রবার ২ আগষ্ট ভোরে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় আগুনে পুড়ে গেছে ঝুটের গোডাউন সহ ৭০ বস্তিঘর। এতে হতাহতের কোন খবর পাওয়া যায়নি। কিন্তু ব্যবসায়ীদের অভিযোগ জায়গা খালি করতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা । অগ্নিকান্ডের ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের ৭ টি ইউনিট দেড় ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, এখানে অর্ধ শতাধিক ঝুটের গোডাউন হওয়ায় কেউ বসবাস করে না। ফলে কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। আগুনের সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমান তদন্ত শেষে বলা যাবে।
নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট এর সাথে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎকার গ্রহণকালে রফিক ভেন্ডারের মুঠোফোনে অজ্ঞাত স্থান থেকে ফোন করলে রফিক ভেন্ডার প্রতিবেদকের সামনেই বলতে থাকেন, আরে ভাই ওসব কিছু না । মামলা হয় নাই, অভিযোগ দিয়েছে থানায় । পুলিশ ম্যানেজ হয়ে গেছে । বাদল ভাই, আরে ভিপি বাদল ভাই কথা বলেছে উপর মহলে, এগুলি কিচ্ছুই হবে না ।
এ ঘটনায় ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম হোসেন, ইন্সপেক্টর তদন্ত হাসানুজ্জামনের সরকারী মুঠোফোনে যোগােযোগ করলে কেউ ফোন রিসিভ না করায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নাই ।
অপরদিকে জেলা পুলিশের ডিআইও টু ইন্সপেক্টর সাজ্জাদ রুমন বলেন, বিষয়টি ফতুল্লা থানা দেখছে । তারাই ভালো বলতে পারবেন । তবে উত্থাপিত অভিযোগ নিয়ে আমি স্যারদের সাথে আলাচনা করবো ।
Discussion about this post