নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও আইনশৃংখলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার নাকের ডগায় দীর্ঘদিন যাবৎ কোন ধরণের অনুমতি ছাড়া চলে আসছিলো মক্কা কনজুমারস প্রোডাক্ট নামের অবৈধ খাদ্যপন্য প্রস্ততকারক প্রতিষ্ঠান । এই প্রতিষ্ঠান কোনো প্রকার লাইসেন্স এবং বিএসটিআই অনুমোদনবিহীন এ প্রতিষ্ঠান টি স্যাকারিন ,টেক্সটাইল রং , বিভিন্ন ফ্লেভার ব্যবহার করে তৈরী করছে জুস ,লিচি ড্রিংকস ,ওর স্যালাইন,চানাচুর ,মটর ডাল ,চিপস,বিস্কুট ,সেমাইসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী । যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি ।
জেলার সোনারগাঁও উপজেলার এই খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত কারক প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে ভেজাল খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুতি ও অনুমোদনহীন হওয়ায় ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে র্যাব-১১ এর ভ্রাম্যমাণ আদালত। অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রমক কারাদন্ড প্রদান করা হয়।
৬ আগস্ট মঙ্গলবার বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত র্যাব সদর দপ্তারের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গাউছুল আজমের নেতৃত্বে উপজেলার কাঁচপুর বিসিক এলাকার ‘মক্কা কনজুমার ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড’ নামে কারখানায় ওই অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় সহযোগিতায় ছিলেন র্যাব-১১ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর তালুকদার নাজমুস সাকিব ও সিনিয়র সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।
প্রসঙ্গত গাউছুল আজম এক সময়ে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও এর আগে ইউএনও হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ওই সময়ে তাঁর পরিচালিত একের পর এক মোবাইল কোর্ট ছিল বেশ আলোচিত।
গাউছুল আজম জানান, নিম্নমানের কাঁচামাল ও রঙ কেমিক্যাল দিয়ে শিশুদের খাদ্য দ্রব্য প্রস্তুত করা হচ্ছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মক্কা কনজুমার ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড নাম কারখানায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। পরে অভিযানে দেখা যায়, আম ছাড়া আমের জুস, লিচু ছাড়া লিচি ডিংক্স, রঙ কেমিক্যাল মিশিয়ে বুট ভাজা, চিপস সহ নিম্নমানের খাদ্যদ্রব্য তৈরি করা হচ্ছে। যার অপরিস্কার ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। এখানে যেসব রঙ কেমিক্যাল ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো ডাইং কারখানায় কাপড়ে ব্যবহারের রঙ। যা শরীরে লাগলে সহজে উঠবে না। তাছাড়া নিম্ন মানের সেকারিন ও ফ্লেবার ব্যবহার করা হচ্ছে। যার স্বাস্থের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরো বলেন, প্রতিষ্ঠানটির কোন প্রোডাক্টের জন্য বিএসটিআই এর অনুমোদন নেই। এমন কোন কোন কাগজপত্র দেখা তারা দেখাতে পারেনি। তাই ওই কারখানার স্টোরকিপার ও দুইজন শ্রমিককে আটক করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে কারখানাটিকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। অনাদায়ে আটক তিনজনের ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদ- প্রদান করা হয়। এছাড়াও ভেজাল সেকারিন ও ফেলেবারগুলো ড্রেনে ফেলে দেয়া হয়।
আটককৃতরা হলো স্টোরকিপার ইমান আলী খান (৩৭), মোহাম্মদ তৌহিদ মিয়া (১৮) ও মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম (৪২)।
নাম প্রকাশ না করা অনুরোধ করে কাঁচপুর বিসিক শিল্পনগরীর কয়েকজন ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই ফ্যাক্টরীতে থানা পুলিশ, বিশেষ পেশার লোকজন, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের অনেকেই নিয়মিত মাসোয়ারা নিতো বলেই এতোদিন বীরের বেশে এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে আসছিলো প্রতিষ্ঠানটি । সোনারগায়ের বিশাল একটি তালিকাও রয়েছে অনেকের কাছে । এই অবৈধ প্রতিষ্ঠান ছাড়াও সোনারগাঁ এবং নারায়ণগঞ্জের অনেক প্রতিষ্ঠান ঈদকে সামনে রেখে অবৈধভাবে সেমাই কারখানা তৈরী করে চালিয়ে যাচ্ছে রমরমা কারবার । যাদের কোন ধরণের বৈধতা নেই এই কারখানা চালানোর । এদের বিরুদ্ধে কঠোর নজরদারী ও আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী তুলেছেন বিসিকের অন্যান্য ব্যবসাযীরা ।
Discussion about this post