একেকজন পরিবহন ড্রাইভার, মালিক কিংবা শ্রমিক যেন পুরো শহরের মালিক মহাজন ! এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে পুরো নগরবাসীকে জিম্মি করে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসাধু কর্মকর্তাদের নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়ে ট্রাফিক পুলিশ কে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে যা খুশি তা করে বেড়াত গণ পরিবহন। এমন ঘটনা কোন অবস্থাতেই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে নাই কেউ ।
খোদ নাসিক মেয়র নিজে শহরের ২নং রেল গেইট এলাকায় দাড়িয়ে থেকেও গণপরিবহনের নামধারী সন্ত্রাসীদের দৌড়াত্ম বন্ধ করতে পারে নাই ।
কোন ধরনের অনুমতি ছাড়া, রুট পারমিট, ড্রাইভার লাইসেন্স, গাড়ির ফিটনেস কিংবা সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে এক ধরনের রাম রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছিলো চিহ্নিত অপরাধী চক্র ।
শেষ পর্যন্ত গত শনিবার নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে নারায়ণগঞ্জ শহরের যানজট ও হকার সমস্যা দূরীকরণে কয়েকটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তার মধ্যে একটি হচ্ছে, রুট পারমিট ছাড়া বাসগুলোকে সড়কে চলতে না দেওয়া। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন পরিবহনের অধিকাংশ বাসই রুট পারমিট ছাড়া সড়কে চলাচল করছে।
এবার টনক নড়ে উঠে পরিবহন সংশ্লিষ্ট অপরাধী চক্রের।
এবার ‘রুট পারমিট ছাড়া’ নারায়ণগঞ্জে কোন পরিবহন (বাস-মিনিবাস) চলতে পারবে না বলে সিদ্ধান্ত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে বাস মালিকদের বৈঠক করতে বাধ্য হয়েছে ।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এই বৈঠক হয়।
এই সময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক, জেলা পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত) আমীর খসরু, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মৌসুমী বাইন হীরা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) রুহুল আমিন সাগর, বিআরটিএ নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শামসুল কবীর, সিটি করপোরেশনের পক্ষে কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না, উৎসব ট্রান্সপোর্টের চেয়ারম্যান মো. শহীদুল্লাহ, বন্ধনের পরিচালক আইয়ুব আলী, বাসমালিক ও আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিম চেঙ্গিস, বাস মালিক রওশন আলী উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, সোমবার বাস মালিকদের নিয়ে বৈঠকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বাস মালিকদের নিয়ম মেনে সড়কে বাস নামানোর জন্য নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, ‘রুট পারমিট ছাড়া কোন গাড়ি সড়কে চলতে পারবে না। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন সম্পূর্ণ শক্ত অবস্থানে রয়েছে। রুট পারমিট ছাড়া গাড়ি পাওয়া গেলে সেসব ডাম্পিং এ দেওয়া হবে। একইসাথে জেল-জরিমানাও করা হবে।’
তিনি বলেন, যেসব বাসের রুট পারমিট আছে তাদের ‘কিউআর কোড’ সম্বলিত স্টিকার প্রদান করা হবে। প্রতিটি বাসেই তা লাগানো থাকবে যাতে বাস সম্পর্কে সবধরনের তথ্য সহজেই ‘কিউআর কোড স্ক্যান’ করেই জানা যেতে পারে।
এছাড়া বৈঠকে রুট পারমিট ছাড়া বাসগুলোর বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাদের পারমিটের জন্য আবেদন করতে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না বলেন, ‘যেসব বাসের রুট পারমিট নেই তারা সকলে কাগজপত্র জমা দিবেন এবং পারমিটের জন্য দশ তারিখের মধ্যে আবেদন করবেন। সকলকে দুই মাস সময় দেওয়া হয়েছে। আবেদন সাপেক্ষে ওই গাড়ির বিপরীতে একটি কার্ড দেওয়া হবে যার মাধ্যমে অন্তবর্তীকালীন সময়ে তারা সড়কে বাসগুলো চালাতে পারবেন। কিন্তু রুট পারমিট নেই এবং প্রক্রিয়ার মধ্যেই আসবেন না তাদের কোন ছাড় দেওয়া হবে না।’
তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবনা আকারে আরও কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, বাসগুলো টার্মিনাল থেকে ছাড়ার পর দুই নম্বর রেলগেইট ও চাষাঢ়ায় কোন যাত্রী তুলতে পারবে না। চাষাঢ়ায় যেই কাউন্টারটি ছিল তা সরিয়ে অন্তত ৩০০ গজ দূরে নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্টরা এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে সড়ক পরিদর্শনও করেছেন। একইসাথে রুট পারমিট দেওয়ার ক্ষেত্রে সড়কের ধারণক্ষমতা ও যাত্রী চাহিদার বিষয়টি বিবেচিত হবে।
এক সময় উৎসব পরিবহনের নামে বাসগুলোর রুট পারমিট থাকলেও বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা রুটে উৎসব ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড কোম্পানির অন্তত ৪০টি বাস চলাচল করে। যদিও একটি বাসেরও রুট পারমিট নেই। এই ব্যাপারেও বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাসগুলোর বিপরীতে রুট পারমিট চেয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন ও কাগজপত্র জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
একই সাথে একই নম্বরে একাধিক বাস চলাচল করে কিনা সেই ব্যাপারেও তদন্ত করে দেখার বিষয়েও তাগিদ দেওয়া হয়েছে বৈঠকে।
Discussion about this post