চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে জালাল মিয়া নামে এক আসামির মৃত্যু হয়েছে। আদালতের হাজতখানায় জামিনপ্রাপ্ত এই আসামী মৃত্যুর কোলে ঢলে পরলে নানাভাবে হাসপাতালে নিতে টালবাহানা করেন হাজতখানার দায়িত্বরত এএসআইদের কয়েকজন।
এএসআইদের কয়েকজন কেউ মুঠোফোনে কেউ আসামীর পরিবারকে ডেকে আনতে দৌড়ঝাপ করেন বলেও জানায় পুলিশের একটি সূত্র ।
নিহত জালাল মিয়া আড়াইহাজার থানার রামচন্দ্রী গ্রামের মনির উদ্দিনের ছেলে।
জমি নিয়ে বিরোধের মামলায় গ্রেপ্তার ৬৫ বছরের বৃদ্ধ জালাল উদ্দিন জামিন পাবার পর আদালত পুলিশের হাজতে মারা গেছেন বলে অভিযোগ তার স্বজনদের৷ বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) দুপুর সোয়া তিনটার দিকে এ ঘটনা ঘটে৷
এদিন বিকালে তার আইনজীবী জামিন আবেদন করলে আদালত জালাল মিয়ার জামিন মঞ্জুর করেন। পরে কোর্ট হাজত থেকে বের হওয়ার পরই জালাল মিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েন।
রাত নয়টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে কথা হয় নিহত জালাল উদ্দিনের ভাই আব্দুল হামিদের নাতি আব্দুল্লাহর সাথে৷ জালালের মরদেহ তখনও হাসপাতালে ছিল৷ বাইরে সদর মডেল থানা পুলিশকে দেখা যায়৷
আব্দুল্লাহ বলেন, রামচন্দ্রদী পূর্বপাড়া গ্রামে দেড় শতাংশ জমির উপর একতলা বাড়িতে বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকতেন নিহত জালাল উদ্দিন৷ এই জমি নিয়ে প্রতিবেশী ব্যবসায়ী ওমর আলীর সাথে বিরোধ রয়েছে৷ এ জমির ভুয়া দলিল করার অভিযোগে জালালসহ স্বজনদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন৷ গত বুধবার আদালতে ওই মামলার হাজিরার তারিখ ছিল ৷ ওইদিন আদালত জালাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ৷
তিনি বলেন, ‘দুপুরে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন৷ কিন্তু জামিনের কাগজ বের করতে না পারায় তারে কোর্টের হাজত থেকে বাইর করতে পারি নাই ৷ কোর্ট থেকে কাগজ বের করার চেষ্টায় ছিলাম, হঠাৎ দুপুর তিনটার দিকে কোর্ট পুলিশের একজন বললো, জালাল উদ্দিনের স্বজনদের কে আছে, সে তো অসুস্থ হইয়া পড়ছে৷ তখন হাজতে গিয়া দেখি কেচি গেটের (কলাপসিবল) ভেতরে হাজতের মধ্যে দাদায় পইড়া আছে ৷ পুলিশের কেউ তারে ধরতেছে না ৷ আমরা তারে ধইরা দেখি হাত-পা ঠান্ডা হইয়া গেছে ৷ পরে আমরাই তারে ধরাধরি কইরা পুলিশের একটা গাড়িতেই হাসপাতালে নিয়া আসি ৷’
পরে কোর্ট ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামনের আদেশে জালাল মিয়াকে তার ছেলে শহরের খানপুর হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিমেল এএসআইদের কয়েকজন। সেখানে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান জানান, আদালত চত্বরে জালাল মিয়া হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন তার ছেলে সঙ্গে ছিলেন।
কোর্ট হাজতে আসামী মৃত্যুর ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে অবস্থান নিতে দেখা যায় ৷ এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে একজনের মৃত্যুর খবর দিলে পুলিশ সেখানে যায়৷ হাসপাতালে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক ৷ আগে কী হয়েছে তা কোর্ট পুলিশ বিস্তারিত বলতে পারবে ৷ তবে থানা পুলিশ সুরতহালে তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পায়নি ৷’
এ ঘটনায় আইনি প্রক্রিয়া প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান আনিচুর রহমান মোল্লা ৷
Discussion about this post