বিশেষ প্রতিবেদক :
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে পরিবেশ দূষণের মামলায় জিএনবি ইটভাটার তিন মালিককে জেলে পাঠানো হয়েছে। একজন সচেতন আইনজীবীর দায়ের করা মামলায় জামিন নিতে গেলে বিজ্ঞ বিচারক তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। তথাপি মালিক পক্ষের লোকজন ইটভাটাটিতে বীরদর্পে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে এলাকার প্রায় সকলেই অভিযোগ করেছে ।
কারাগারে রয়েছে অবৈধ ইটভাটার তিন মালিক আর অপরদিকে এই অবৈধ ইটভাটা চলমান থাকায় এলাকার অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, এ টা আবার কোন নাটক পরিবেশ অধিদপ্তরের ? নারায়ণগঞ্জের পরিবেশ ধ্বংশ করে পরিবেশ অধিদপ্তরের অসাধু কর্মকর্তা আর কর্মচারীরা প্রতিমাসেই যে নাটক মঞ্চায়ণ করে যাচ্ছে এমনটি ই হচ্ছে তার প্রমাণ।
নাম প্রকাশ না কার অনুরোধে ইটভাটার এক সংশিষ্ট এক ব্যবসায়ী বলেন, এই জিএনবি ব্রিক্স ফিল্ডের মালিক তিন ভাই । তিন ভাইয়ের মধ্যে এই ভাটা অবৈধভাবে পরিচালনা করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের অসাধু কর্মকর্তাদের প্রায় প্রত্যেককেই নিয়মিত মাসোয়ার দিয়ে আসে মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে লিটন। লিটন ই প্রসাশনের অসাধু কর্তাদের নিয়মিত বখড়া দিয়ে এই অবৈধ ইটভাটা চালিয়ে আসছে। আর অপর দুই ইটভাটার অন্যান্য বিষয় দেখভাল করেন ।
আদালতে হাজির হওয়ার কয়েকদিন পূর্বে ফতুল্লা স্টেডিয়ামের পূর্ব পাশে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদেরকে মাসোয়ারা দিতে গিয়ে পরামর্শ নেয় লিটন । পরিবেশ অধিদপ্তরের অসাধু কর্তাদের কে মাসোযারাা দিতে গেলে তারাই লিটনকে পরামর্শ আদালতে হাজির হওয়ার। “ইটভাটা চালু থাকুক । আমরা যদি ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেই তবে কি আদালত নিজেরা যাবে আপনাদের ইটভাটা বন্ধ করতে যাবে !” পরিবেশ অধিদপ্তরের অসাধু কর্মকর্তাদের এমন আশ্বাসের পর তিন ভাই আদালতে হাজির হলে কারাগারে পাঠায় বিজ্ঞ বিচারক। ওই অসাধু কর্মকর্তাদের আশ্বাস অনুযায়ীই চলছে ইটভাটা।
জানা যায়, আদালতের নির্দেশ অমান্য করে পরিবেশ দূষণের অপরাধে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের জিএনবি ব্রিকস নামক ইটভাটার তিন মালিকের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আসামিরা হলেন- আড়াইহাজার উপজেলার ছোট ফাউসা গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলীর ৩ ছেলে ও জিএনবি ব্রিক্স নামের ইটভাটার স্বত্বাধিকারী মো. সামসুল হক, মো. জহিরুল হক ও মো. লিটন।
এমন ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক ওসি মো. আসাদুজ্জামান এর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আদালতের নির্দেশ অমান্য করে পরিবেশ দূষণের অপরাধে আড়াইহাজার উপজেলার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের জিএনবি ব্রিকস নামক ইটভাটার তিন মালিকের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
জানা গেছে, গত (১২ ডিসেম্বর) আইনজীবী আমিনুল হক ভূইয়া জনস্বার্থে বিবেচনা করে নারায়ণগঞ্জের স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের বিচারক মো. কাউছার আলমের আদালতে মামলার আবেদন করেন।
পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ করলে ৬০ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নিয়ম রয়েছে কিন্তু ১০ বছর অতিবাহিত হলেও একটি অভিযোগ আমলে নেয়নি পরিবেশ অধিদপ্তর।
বিষয়টি আদালতের নজরে আসলে মামলা গ্রহণ করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি এবং একই সাথে আড়াইহাজার থানার অফিসার ইনচার্জকে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা তামিল সংক্রান্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, এড. আমিনুল হক ভূইয়া জনস্বার্থে ২০১২ সালে ৩ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও একই তারিখে নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন।
তিনি অভিযোগ করেন, জিএনবি ব্রিক্স নামের ইটভাটাটির পরিবেশ দূষণের কারণে এলাকাবাসী মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে। এই ইটভাটার আধা কিলোমিটারের মধ্যে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা স্বাস্থ্য ঝুঁঝিতে রয়েছেন।
এছাড়া এলাকার কৃষি জমির মাটি ব্যবহার করায় কৃষি উৎপাদন ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে পরিবেশ দুষণের পাশাপাশি এলাকার জনস্বাস্থ্য পড়েছে হুমকির মুখে। তাই সামগ্রীক কারনে জনস্বার্থে মামলাটি আবেদন করা হয়েছে।
অবৈধ এই ইটভাটা চালু থাকায় নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের অসাধু কর্মকর্তাদের সঠিক বিচার করেলেই বন্ধ হচ্ছে পরিবেশ ধ্বংসের নীলনক্সা। একই সাথে এলাকাবাসি অবৈধ ইটভাটা অবিলম্বে বন্ধের দাবী জানান।
Discussion about this post