নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার তিন থানায় (সিদ্ধিরগঞ্জ – ফতুল্লা ও সদর) চলতি বছরে মোবাইল হারিয়েছে মর্মে শত শত সাধারণ ডায়রী নথিভুক্ত হয়েছে । এমন মোবাইল হারানোর সাধারণ ডায়রীর (জিডি) প্রায় ৯০ শতাংশ ঘটবা ছিনতাইয়ের। কিন্তু থানায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় অভিযোগ করতে গেলে প্রথনেই ডিউটি অফিসার বলেন, “অনেক ঝামেলায় পরেছেন ছিনতাইকারীর কবলে পরে, এখন একটা জিডি করে যান যাতে আপনার লুন্ঠন করা মোবাইল দিয়ে ছিনতাইকারী কোন অঘটন ঘটালে যাতে রক্ষা পান। আর জিডি লিপিবদ্ধ করার পর মোবাইল ফিরে পেতে হলে মোবাইল দামী হলে মোটা অংকের খরচা দিলে উদ্ধার করে দেয়া সম্ভব।” এভাবেই চুক্তি কিরে জিফি করতে বাধ্য হন শত শত ভুক্তভোগী।
এমন অসংখ্য ঘটনায় সচরাচর কোন অপরাধী ধরা না পরলেও এবার পুলিশের এক কন্সস্টেবল ছিনতাইকারীর কবলে পরার খবর প্রকাশিত হয় মংগলবার দৈনিক সময়ের নারায়ণগঞ্জ পত্রিকায়। এমন সংবাদে জানা যায়, পুলিশের এই কন্সস্টেবল ছিনতাইয়ের ঘটনায় ২৪ ঘন্টার মধ্যেই আটক করা হয়েছে । এমন সংবাদের পর নগরীজুড়ে শুরু হয়েছে ব্যপক আলোচনা সমালোচনা। অনেকেই ২৪ ঘন্টার মধ্যে ছিনতাইকারীদের গ্রেফতারে টিপ্পনী কেটে বলেন, “ছিনতাইয়ের কবলে পুলিশ, সাধুবাদ পুলিশ !”
ভোরে কিংবা গভীর রাতে চক্রটি ওৎ পেতে থাকে সড়কের আশেপাশেই। রিকশা বা অটো রিকশায় কোন যাত্রীকে দেখলেই কৌশলে থামিয়ে অস্ত্র ঠেকায়। সঙ্গে মোবাইল, টাকা যা আছে লুটে নেয়। তবে কদাচিৎ কিছু না পেলে অপহরণ করে নেওয়া হয় নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার মাসদাইরের ছোট কবরস্থান এলাকার একটি বাসায়।
সেই বাসায় অপহরণকারীকে আটকে হাত পা বেঁধে বেধড়ক মারধর করা হয়। মুকে স্ক্রচটেপ লাগিয়ে মারধরের সেই ভিডিও পাঠানো হয় অপহৃত ব্যক্তির পরিবার কিংবা স্বজনদের কাছে। ভয়াবহ নির্যাতনের সেই ছবি ও ভিডিও দেখিয়ে মুক্তিপণ বাবদ হাতিয়ে নেওয়া হয় মোটা অংকের টাকা। টাকা না পাঠানো পর্যন্ত চলে নির্যাতন। হোয়াটসআপ বা ইমুতে সেটা সরাসরি দেখানো হয় বিপরীতে থাকা স্বজনদের। হুমকি দেওয়া হয় পুলিশকে জানালে প্রাণে মেরে ফেলবে।
এমনই এক ছিনতাইয়ের শিকার হন ডিবির একজন কনস্টেবল।
সেই সূত্র ধরে ওই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবির একটি টিম। ওই সময়ে গ্রেপ্তারকৃত মূল হোতার মোবাইলে মিলেছে নির্যাতনের সেইসব ভয়াবহ কিছু চিত্র।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ‘ক’ জোনে কর্মরত তুষার মোল্লা নামে এক কনস্টেবলকে যাত্রাপথে আটকিয়ে মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে ফতুল্লার মাসদাইর কবরস্থানের সামনে এই ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতারা করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো মাসদাইর জামালের গ্যারেজের এলাকার মো. ফারুকের ছেলে মো. পারভেজ (২৫), মাসদাইর ছোট কবরস্থান এলাকার মৃত সেকান্দরের ছেলে রাজু (২৬) ও পশ্চিম মাসদাইর পাকাপুল এলাকার জামালের ছেলে রাকিব হোসেন বিজয় (২১)। তাদের নামে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে তুষার মোল্লা উল্লেখ করেন, রাতের ডিউটি শেষে ২৬ সেপ্টেম্বর ভোরসাড়ে ৫ টায় তুষার মোল্লা নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখা কার্যালয় থেকে অটোরিকশা করে ফতুল্লা পুলিশ লাইনসে যাচ্ছিলেন। রিকশায় মাসদাইরে পৌছানোর পরে আসামীরা চাপাতি, ছুরি, রামদা ও হাতুরি সহ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তার রিকসা গতিরোধ করে ভয়ভীতি দেখিয়ে সাথে থাকা মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
সেই সাথে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে চলে যেতে বলে অন্যথায় তাকে কুপিয়ে মেরে মেলার হুমকি দেয়।
পরে তিনি আবার নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখা কার্যালয়ে এসে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবগত করেন।
সেই সাথে অন্যান্য কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ফতুল্লার মাসদাইরে ছোট কবরস্থান এলাকায় অভিযান চালানো হয়। সেখানে পারভেজের ভাড়াকৃত একটি কক্ষ থেকে পারভেজকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কোমরের পেছনে গোজা অবস্থায় স্টিলের চাপাতি, আইফোন, দ্বিতীয় আসামী রাজুর ডান হাত থেকে লোহার চাপাতি, রাকিব হোসেন বিজয়েরর কাছ থেকে মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। পরে তারা স্বীকার করেছে যে, মাসদাইর কবরস্থান এলাকাতে সড়কে দাঁড়িয়ে থেকে তারা রিকশা অটো রিকশা ও যানবাহন থামিয়ে ব্যক্তিদের আটক করে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা পয়সা ফোন ছিনিয়ে নেয়।
এমন লোমহর্ষক ছিনতাইয়ের ঘটনায় আসামীদের গ্রেফতারের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পরও টনক নডেনি কোন ছিনতাইকারীর। মংগলবার দিবাগত মধ্যরাতেও নগরীর ছিনতাইকারীদের আখড়া হিসেবে পরিচিত শহরের গলাচিপা মোড় ও মন্ডলপাড়া জিমখানা বস্তির বংগবন্ধু সড়কের উভয় পাশে চিহ্নিত ছিনতাইকারীদের অবস্থান দেখা যায় ।
Discussion about this post