৬ জুন যেন পিছু ছাড়ে নাই সেই কামরুল ইসলাম বাবুলের। পাপ যেন বাপকেও ছাড়ে না। ৬ বছর পূর্বে বন্দর উপজেলার পিয়ন কামরুল ইসলাম বাবুল তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা মিনারা নাজমীনের সরকারী বাসভবনে চুরির ঘটনা ঘটায়। ২০১৬ সালের ৬ জুন চুরির ঘটনায় উপজেলা পরিষদের পিয়ন কামরুল ইসলাম বাবুল গ্রেফতার হয়ে রিমান্ডের পর দীর্ঘদিন কারাভোগ করলেও তার স্বভাবের কোন পরিবর্তন হয় নাই ।
ইউএনও এর বাসায় তোলপাড় সৃষ্টি হওয়া বিশাল ওই চুরি করেও টিকিটিও স্পর্শ করতে না পারার দাম্ভিকতায় তিনি যেন বন্দর উপজেলার মহারাজা । এমনটি মনে করেই ধর্ষনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে গিয়ে সালিশী বৈঠকের আয়োজন করেন সদর উপজেলার অফিস সহকারী কামরুল ইসলাম বাবুল।
এবার ২০২২ সালের ৬ জুন কাকতালীয়ভাবে সেই কামরুল ইসলাম বাবুল ধর্ষনের ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধণী ২০০৩; তৎসহ ২৬(২) ডিজিটার নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ধারায় আসামী হয়ে পলাতক থেকে নিজ দপ্তরে অসুস্থতা জনিত কারণ দেখিয়ে ছুটি নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। শহরের দেওভোগ ও গলাচিপা এলাকায় লুকিয়ে থেকে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেয়ার চেষ্টাও চালাচ্ছে ।
সেই কামরুল ইসলাম বাবুলের বাবার নাম আলাউদ্দিন। বিগত ২০১৬ সালের নির্বাহী কর্মকর্তা মিনারা নাজমীনের সরকারী বাসভবনে চুরির ঘটনা ধামাচাপা দিতে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছিলো নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কার্মকর্তা কর্মচারীদের অনেকেই। সেই ঘটনায় বন্দর থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক তৎকালীন সময়ে জেলার সদর উপজেলায় বদলী করলেও সেই অপরাধী সিন্ডিকেট নানা অপরাধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলো। আর এই সদর উপজেলা বাবুল সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্যদের মধ্যে হিসাব সহকারী আরিফ, কর্মচারী মোফাজ্জলসহ আরো কয়েকজন ধর্ষিতার আত্মহত্যার ঘটনা থেকে অপরাধীদের রক্ষা করতে ফের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ।
এবার ধর্ষিতা রূপা আক্তারের (২২) বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সালিশী বৈঠকের আয়োজন করে সেই ইউএনও এর বাড়ির চুরির মামলার আসামী কামরুল ইসলাম বাবুল । এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতে নানা অপরাধের পাশাপাশি সালিশী বৈঠকের চেষ্টা চালায় এই কামরুল ইসলাম বাবুল।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার একটি নির্ভর যোগ্য সূত্র জানায়, অপরাধী সিন্ডেকেটের হোতা বাবুল, মোফাজ্জল ও আরিফ চক্র নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে থানা পুলিশকে ম্যানেজের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । একই সাথে কুখ্যাত আসামী কামরুল ইসলাম বাবুলের ছুটির দরখাস্ত অপর সহযোগিদের স্বহস্তে লিখে সদর ইউএনও দপ্তরের জমা দিতে এবং বাবুল কে পলাতক থাকতে সকল ধরণের সহায়তা করেছে সহকর্মী মোফাজ্জল ও আরিফ ।
এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে নারায়ণগঞ্জ সদর ইউএনও কার্যালয়ের হিসাব সহকারী আরিফের মুঠোফোনে যোগায়োগ করলে প্রথমে তার কোন ব্যস্ততা নাই বললেও কামরুল ইসলাম বাবুলের উল্লেখিত বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে তিনি খুব ব্যস্ত বলে ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। একইভাবে নারায়ণগঞ্জ সদর ইউএনও কার্যালয়ের অফিস সহকারী মোফাজ্জলের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নাই ।
এদিকে সদর উপজেলার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে এক কর্মকর্তা বলেন, চতুর্থ শ্রেণীর এই কর্মচারীরা এতাটাই ভয়ংকর যে তারা যে কোন অপরাধ করতে কোন ভয় পায় না । এরা মানুষ খুনও করতে পারবে ! এই চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা ডিসি, এসপি ইউএনও, এনডিসি, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগনরে নাম ব্যবহার করে অনেক অপরাধ করে । যা কেউ টের ই পান না।
এমন অপরাধীদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের কঠোর হওয়া জরুরী । নইলে ভয়ংকর কোন অঘটন ঘটাতে পারে এরা।
জানা যায়, বন্দরে তরুণী রূপা আক্তার আত্মহত্যার ঘটনায় থানায় আরো একটি মামলা দায়ের হয়েছে ৬ জুন সোমবার । সোমবার দুপুরে ধর্ষিতা আত্মহননকারী রূপা আক্তারের মা বাদী হয়ে লম্পট ধর্ষক নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী শ্যামলি বেগম ও স্থানীয় মেম্বার কচি, ইউএনও কার্যালিয়ের অফিস সহকারী কামরুল ইসলাম বাবুলসহ সহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে বন্দর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন তৎসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এ মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনায় পুলিশ মামলা দায়েরের ওই দিন বিকেলে বন্দর উপজেলার ফরাজিকান্দা এলাকায় অভিযান চালিয়ে একই এলাকার মৃত আনিছুজ্জামান মিয়ার ছেলে উল্লেখিত মামলার ৩নং এজাহারভুক্ত আসামী কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল মোমেন কচি (৫২) ও ৭ জুন মঙ্গলবার বিকেলে আলীনগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে উক্ত এলাকার মৃত আউয়াল মিয়ার ছেলে উল্লেখিত মামলার ৯নং এজাহারভুক্ত আসামী দবির চৌধুরীকে (৪৫) গ্রেপ্তার করেছে।
এরপর নানা তদ্বিরে জিমিয়ে পরেছে মামলার কার্যক্রম । আসামী গ্রেফতারে কোন জোড়ালো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে ।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা বন্দর থানার উপ-পরিদর্শক সাইফুল আলম পাটোয়ারী জানান, গ্রেপ্তারকৃত মেম্বার কচি ও দবিরকে উল্লেখিত মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে প্রেরণ করছে।
৬ জুন সোমবার সকালে ভুক্তভোগী তার নিজ বাড়িতে আত্মহত্যা করে। ভুক্তভোগী তরুনী দীর্ঘদিন ধরেই বন্দরের কলাগাছিয়া ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামের নুরুল আমিন ওরফে নুরুর (৪৫) দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়ে আসছিলেন। এই ঘটনায় গত ২৯ মে থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করলে ক্ষিপ্ত হয়ে ধর্ষণের ধারণকৃত ভিডিও ছড়িয়ে দেয় নুরু ।
নিহতের বোন জামাতা বলেন, ‘ভুক্তভোগী আমার স্ত্রীর বড় বোন। অর্থনৈতিকভাবে তাদের অবস্থা ভালো না হওয়ায় নুরুর বাড়িতে রান্নাবাড়ার কাজ করে দিয়ে আসতো। কাজ করা অবস্থাতেই তার দিকে কুনজর দেয় নুরু। সে ভুক্তভোগীকে ধর্ষণ এবং তারই স্ত্রী সেই ভিডিও ধারণ করে মাসের পর মাস নির্যাতন করে আসছিলো। সম্প্রতি বিষয়টি জানাজানি হলে সামাজিক ভাবে মিমাংসার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাতে ব্যার্থ হলে থানায় মামলা দায়ের করি আমরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নুরু তার মুঠোফোনে থাকা ভিডিও ছড়িয়ে দেয়। ঘটনার পর মানসিকভাবে ভেঙ্গে পরে ভুক্তভোগী। নুরু তার স্ত্রীকে ব্যবহার করে পাল্টা ধর্ষণ মামলা দায়ের করে ভুক্তভোগীর পিতা ও বোন জামাতার বিরুদ্ধে। পাল্টাপাল্টি মামলার ঘটনার পর ৫ জুন স্থানীয় মেম্বার সহ অন্যান্য লোকজন এই ঘটনায় বিচার বসায়। তারা চাচ্ছিলো মামলা থাকলেও এখানে মিমাংসা করে মামলা নিষ্পত্তি করে দিতে। কিন্তু তারা বিচারে মাতব্বররা জানায় নুরু বিদেশে পালিয়ে গেছে। সালিসে তারা নুরুর পক্ষ নিয়ে উল্টো ভুক্তভোগীকেই দোষারোপ ও গালমন্দ করে। এক পর্যায়ে তাদের বলে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে। এসব ঘটনায় অপমান অপদস্তের শিকার হয়ে সোমবার সকালে ঘর খালি থাকার সুযোগ পেয়ে আত্মহত্যা করে ভুক্তভোগী।
এ ব্যাপারে বন্দর থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা গনমাধ্যমকে জানান, আত্মহত্যার ঘটনায় ২৪ ঘন্টার মধ্যে স্থানীয় মেম্বার কচিসহ ২ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। বাকি আসামীদের গ্রেপ্তারের জন্য আমাদের অভিযান অব্যহত রয়েছে ।
Discussion about this post