জুম্মার নামজের খুৎবার সময় পুলিশ থানা পুলিশের দারোগাকে গণপিটুনী দেয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামী গ্রেফতার করাকে কেন্দ্র করে ফের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দাদের সঙ্গে পুলিশ ও র্যাবের সংঘর্ষ হয়েছে । এতে পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
সোমবার (১৩ জুন) ভোরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় এ সংঘর্ষ ঘটে। ক্যাম্পের বাসিন্দাদের ইটপাটকেলের জবাবে শটগানের গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল মেরে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় র্যাব-পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার আদমজী জেনেভা ক্যাম্প এলাকার মসজিদে জুমার নামাজের আগে বক্তব্য দেওয়ায় এক পুলিশ কর্মকর্তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় হওয়া মামলায় রোববার রাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে ৩২ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এর প্রতিবাদে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সিদ্দিরগঞ্জ থানার সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন কয়েকশ নারী-পুরুষ। এক পর্যায়ে তারা সড়কের ওপর কাঠের টেবিল, চৌকি ফেলে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। এতে নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-ডেমরা সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভোগান্তিতে পড়েন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। তাদের সড়ক থেকে সরে যেতে আহ্বান জানায় পুলিশ। তবে তারা সরে না যাওয়ায় পুলিশ ও র্যাব একসঙ্গে লাঠিপেটা করে এবং শটগানের গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
সংঘর্ষে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ আমির খসরু, পুলিশ সদস্য রিপন ও ইকরাম, বিহারী আব্দুল হামিদ, মো. রনিসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হেন।
এ বিষয়ে আদমজী বিহারী ক্যাম্পের চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার জুমার নামাজের সময় শাহী মসজিদে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় রোববার রাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক পুলিশ ক্যাম্পে অভিযান চালায়। পুলিশ অনেক নারী-পুরুষকে মারধর করেছে। যারা ঘটনার সময় মসজিদে যায়নি এবং হামলায় ছিল না তাদেরও গ্রেফতার করেছে। এ ঘটনায় ক্যাম্পের অধিবাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। পরে আমি থানায় গিয়ে বিষয়টি ডিউটি অফিসারকে জানিয়ে চলে আসি। ওসিকে ফোন করার পরও তিনি রিসিভ করেননি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরে ওসি ফোন দিয়ে থানায় যেতে বলেন। সকাল ৭টার দিকে আমি থানায় যাই। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি ক্যাম্পের অনেক মানুষ থানার সামনে অবস্থান করছে। ওসি তখন বলেন, রাতে অভিযানে কোন নিরপরাধ লোক আটক হয়ে থাকলে আলোচনার মাধ্যমে ছেড়ে দেয়া হবে। কিন্তু ক্যাম্পের লোকজনের দাবি সবাইকে ছেড়ে দিতে হবে।’
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান গণমাধ্যমে কে বলেন, ‘পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেউ যেনে নাশকতা না করতে পারে সেদিকে আমরা সজাগ আছি। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৩২ জনকে গ্রেফতার করেছি। তাদের আজ সকালে নারায়ণগঞ্জ আদালতে পাঠানো হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমির খসরু বলেন, গত শুক্রবার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সৈয়দ আজিজুল হকের ওপর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে এ অভিযান চালানো হয়। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৩২ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর মধ্যে অনেকই একাধিক মামলার আসামি ছিলেন। গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিহারি ক্যাম্পের লোকজন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এ সময় আমরা তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেই। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে ।’
Discussion about this post