নারায়ণগঞ্জের চিহ্নিত অপরাধী চক্র নানাভারে কখনো রাজনৈতিক পরিচয়ে, আবার কখনো অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহারের পর সাধারণ মাসুষকে ভোগান্তির মধ্যে ফেলে ফায়দা হাসিল করতে ব্যস্ত থাকে । কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে এমন কয়েকটি অপরাধী চক্র কোরবানীর হাটের নামে প্রতি বছরের ন্যয় এবারো নিজেদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে । আর এমন অপরাধীদেরকে মদদ দিচ্ছে জেলায় দায়িত্বরত অসাধু প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অনেকেই ।
নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকার একটি ব্যস্ততম সড়ক দখল করে কোরবানীর পশুর হাট বসিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ৭ খুন মামলার প্রধান আসামী নূর হোসেনের ভাতিজা শাহ্ জালাল বাদল।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তা দখল করে পশুর হাট বসানোর কারনে তারা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। জনগণের ভোটে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে তাদের ভোগান্তি সৃষ্টি করায় ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাদলের তীব্র সমালোচনা করছেন স্থানীয়রা।
গতকাল সরেজমিনে গেলে জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে সাহস না পেলেও তারা বলেছেন, আমরা বাদলের চাচা ৭ খুন মামলার প্রধান আসামী নূর হোসেনের অন্যায়, অত্যাচার, নির্যাতন ও জুলুম সহ নানা অপকর্ম করতে দেখেছি। নূর হোসেন এলাকায় না থাকলেও তার যোগ্য ভাতিজাকে রেখে গেছেন। নির্বাচনের আগে এলাকার বাসিন্দাদের হাতে পায়ে ধরে ভোট নেন। আর ভোট ফুরালেই চলে এলাকাবাসীর উপর নানা জুলুম-অত্যাচার। এলাকাবাসী কেন সন্ত্রাসী বাদলকে ভোট দেয় এবার যেন তারা সে প্রতিদানই পাচ্ছেন। জনগণের চলাচলের রাস্তা দখল করে সে বসিয়েছে কোরবানির পশুর হাট। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন তার সন্ত্রাসী বাহিনী।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএফএম. এহতেশামূল হক বলেন, কেউ ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে রাস্তায় হাট বসালে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৩নং ওয়ার্ডের মাদানীনগর বালুর মাঠ উল্লেখ করে অস্থায়ী গরুর হাট ইজারা নেন কাউন্সিলর বাদলের ডান হাত হিসেবে এলাকায় পরিচিত শাজাহান সাজু। প্রকৃতপক্ষে এলাকায় মাদানীনগর বালুর মাঠের কোন অস্তিস্ত¡ নেই। শাজাহান সাজু নামে হাটের ইজাদার নিয়ে তা নিয়ন্ত্রন করছেন কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল। মাঠ না থাকায় মাদানী নগর ক্যানেলপাড় চৌরাস্তা থেকে পশ্চিম দিকে মৌচাক পর্যন্ত সড়ক সম্পূর্ণ বন্ধ করে বসানো হয়েছে এই হাট। চৌরাস্তা থেকে সানারপাড় যেতে প্রধান সড়কের নিমাইকাশারী পর্যন্ত ও চৌরাস্তা থেকে পূর্ব দিকে (দুই লেন) বটতলা সড়কের ১ লেন দখল করে এ হাট বসানো হয়েছে। এতে এই তিনটি সড়ক দিয়ে কোন যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। পায়ে হেটে যেতেও চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে পথচারীদের।
সড়কের উপর গরুর হাট বসানো সরকারি ভাবে নিষেধ করা হলেও তা আমলে নেয়নি কাউন্সিলর বাদল। এতে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে জনমনে।
এলাকার অনেকেই ক্ষোভের সাথে বলেন, মাদানীনগর চৌরাস্তা থেকে নয়াআটি মুক্তিনগর বটতলা ক্যানেলপাড় হয়ে চিটাগাং রোডের এই সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু কাউন্সিলর বাদল রাস্তাটি পুরোপুরি দখল করে গরুর হাট বসিয়েছে। ফলে এ ওয়ার্ডের পশ্চিম ও উত্তর অংশের লোকজনের যাতায়াতের জন্য বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে।
নিমাইকাশারী এলাকার বাসিন্দা আব্দুল জলিল জানান, ভাই সরকার রাস্তা করে জনগনের চলাচলের জন্য কিন্তু কাউন্সিলর হয়েও বাদল নিজের পকেট ভারী করার জন্য রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে হাট বসিয়েছে । জনগণকে ভোগান্তির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাই।
বাগমারা এলাকার সামছুল হক জানায়, বাদল ৭ খুন মামলার প্রধান আসামী নুর হোসেনের ভাতিজা হওয়ায় ক্ষমতার জোরে জনগণকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে মাদানীনগর থেকে মৌচাক বাসস্ট্যান্ডে রোডের রাস্তাটি পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। এতে করে আমাদের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া নিমাইকাশীর রাস্তারও একপাশ দখল করে রেখেছে। প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান ধরে চলছে।
সড়ক দখল করে হাট বসানো বিষয়ে কাউন্সিলর শাহ্জালাল বাদলের সাথে যোগাযোগ করার জন্য তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি কলটি রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী এএফএম এহতেশামুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, কাউন্সিলররা যেভাবে আমাদেরকে অবগত করেছে আমরা সে ভাবেই হাটের ইজারা দিয়েছি। কেউ যদি রাস্তা দখল করে হাট বসিয়ে জনগনের ভোগান্তি সৃষ্টি করে তার বিরুদ্ধে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। আমি এখনই ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের সাথে কথা বলছি ও সিটি কর্পোরেশনের লোক পাঠাচ্ছি দেখার জন্য।
নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার বরাবরই অবৈধ হাটের ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারী দিয়ে আসছেন। এব্যাপারে পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সবাই।
Discussion about this post