নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
শহরের চাষাঢ়ায় ৭ দিন যাবৎ চলছে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা কুরবানির পশুর অস্থায়ী হাট। এক সপ্তাহ পেরোলেও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কিংবা জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে হাট উচ্ছেদে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তবে ৭ আাগষ্ট সকালে নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবের স্যুটিং সম্পাদক কাজী ইমরুল কায়েস অবৈধ হাটটির বৈধতার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছেন নারয়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ সেলিম রেজা।
ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পশ্চিম পাশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মালিকানাধীন আর্মি মার্কেটে বসানো হয়েছে এই হাট। হাটের প্রবেশ মুখেই রয়েছে বিআরটিসি, বন্ধন, উৎসব, হিমাচল, শীতল, শ্যামলী পরিবহনসহ নারায়ণগঞ্জ থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলোর প্রধান কাউন্টার। চাষাঢ়া চত্বর থেকে প্রায় আড়াইশো গজ দূরত্বের অবৈধ এই হাট উচ্ছেদ না হলে ঈদে ঘরমুখি মানুষ যানজটের কবলে পরবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সালেহ আহাম্মেদ।
বুধবার দুপুরে সরেজমিনে হাট দেখতে যাওয়ার পথেই চাষাঢ়া গোল চত্বর এলাকায় হাটের প্রচারে ব্যবহৃত মাইকের উচ্চ শব্দ কানে আসে। ‘বিরাট গরু ছাগলের হাট’ লিখা হাটের প্রবেশ পথে তৈরী করা তোরণে কোন ইজারাদারের নাম ছিলো না। ভেতরে পাশাপাশি দুটি মাঠে বাঁশ বসিয়ে বেধে রাখা হয়েছে প্রায় পাঁচ শতাধিক গরু।
হাটের পাশে থাকা দোকান মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২ এপ্রিল থেকে হাট বসানোর কাজ শুরু হয়। চার এপ্রিল থেকে হাটে গরু নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবের কর্তকর্তা ইমরুল কায়েসসহ আরো একজন কর্মকর্তা ও তার সহযোগী কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতা হাটটি বসিয়েছেন বলে তারা জানেন। হাটে গরু নিয়ে আসা ব্যাপারীরা জানান, তাদের অধিকাংশই গত তিনদিন যাবৎ এই হাটে আছেন। অবৈধ হাটে গরু নিয়ে এসেছেন কেন ? প্রশ্নের উত্তরে গরু ব্যাপারীরা জানান, প্রধান শহরের পাশে অবৈধ গরুর হাট বসতে পারে এমনটি তারা ভাবেননি । নাম না প্রকাশের শর্তে দুজন ব্যাপারী অভিযোগ করেন, জামালপুর থেকে গরু নিয়ে নারায়ণগঞ্জ ঘাটে আসার পর তাদের জোর করে এই হাটে নিয়ে আসা হয়েছে। গত তিন দিনেও হাট কর্তৃপক্ষ গরুর বিষ্টা পরিস্কার করেননি। এমনকি বিক্রেতাদের যেসব সুযোগ সুবিধা দেয়ার কথা বলে হাটে নিয়ে আসা হয়েছো তার অধিকাংশই রক্ষা করা হচ্ছে না বলেও তাদের অভিযোগ।
অবৈধ হাটটি উচ্ছেদ না করার কারন জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী এহতেশামুল হক বলেন, হাটের বৈধতার জন্য সিটি কর্পোরেশনের কাছে আবেদন এসেছিলো । আমরা বিষয়টি বিবেচনার জন্য জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করেছি। তারাই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। হাট উচ্ছেদের বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের সহায়তা পয়োজন হলে আমরা সেটা করবো।
এ বিষয়ে নারয়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ সেলিম রেজা গণমাধ্যমকে বলেন, হাটটি জেলা প্রশাসক ঘোষিত হাট নয়। ইজারার আবেদনের আগে থেকেই অবৈধভাবে এই হাট চলছে। ৭ জুলাই সকালে ইমরুল কায়েস নামের এক ব্যক্তি হাটের অনুমতির জন্য আবেদন করেছেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা সদর ইউএনও এবং ট্রাফিক পুলিশের কাছে হাট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছি। তাদের অনাপত্তি পেলে আমরা দরপত্রের মাধ্যমে হাট ইজারা দেবো। সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দরদাতাই হাটের ইজারা পাবে। তবে হাট বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশ কিংবা সদর ইউএনও কোন প্রকার আপত্তি জানালে আমরা অবৈধ হাটটি উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
চাষাঢ়া চত্ত্বরের কাছাকাছি এবং ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশে হওয়ায় হাটটি যানজট তৈরী করতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সালেহ আহাম্মেদ। তিনি বলেন, যখন হাট জমে উঠবে তখন মূল সড়ক ধরেই গরু আনা নেয়া হবে। হাটের সামনে মানুষের জটলা থাকবে। একই সময়ে ঈদে ঘরমুখি মানুষ এই সড়ক ধরে বাড়ি ফিরবে। তখন যানজটের সম্ভাবনা আছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে হাটের বৈধতার আবেদনকারী ইমরুল কায়েসের মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনি কথা বলার কারন জানতে চান। হাট বিষয়ে কথা হবে কি না জানতে চেয়ে তিনি বলেন, ‘এবিষয়ে কিছুক্ষণ পর কথা বলবো।’ তারপর থেকে ইমরুল কায়েসের ব্যবহৃত মুঠোফোন নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে একাধিকবার চেষ্টা করে এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। (প্রথম আলো )
Discussion about this post