বছরের পর বছর যাবৎ নারায়ণগঞ্জের কয়েকশত ওষুধ ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির নামধারী কতিপয় নেতার বিশাল অপকর্মের ফিরিস্তি হাতে এসেছে।
জেলার প্রতিটি উপজেলায় নিজস্ব বাহিনী সৃষ্টি করে নিরীহ ওষুধ ব্যবসায়ীদের নানাভাবে হয়রানী করে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির নামধারী চক্র৷
কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজির ঘটনায় জেলার শতাধিক ওষুধ ব্যবসায়ী যখন সোচ্চার হয়ে উঠলে গেলে বছর ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের একটি কমিউনিটি সেন্টারে ব্যবসায়ীদের আমন্ত্রণ করে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করে এই সমিতির হোতারা ।
ওষুধ ব্যবসায়ীদের জিম্মি করার পাশাপাশি পুরো জেলাবাসীকে জিম্মি করতে এমআরপি বাস্তবায়ন করে । ফলে কোন ক্রেতার কাছে যে কোন ওষুধ ব্যবসায়ী পাইকারী মূল্যে ওষুধ বিক্রি করতে পারে না ।
খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালের এক ওষুধ ব্যবসায়ী এমআরপি মূল্যের চাইতে কম মূল্যে ওষুধ বিক্রি করায় প্রকাশ্যে ওই দোকানীকে কান ধরে উঠবস করিয়েছে সমিতির হোতারা। এমন অসংখ্য অভিযোগ উল্লেখ করে ওষুধ প্রশাসনের বরাবর স্বারকলিপি প্রদান করেছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা
বিশেষ প্রতিনিধি :
অভিনব কায়দায় বিশেষ বাণিজ্যে নেমেছেন নারায়ণগঞ্জ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির শীর্ষ নেতারা।
করোনাকালে ওষুধ বিক্রেতাদের এ সংগঠনটির ক্ষুদ্র ওষুধ বিক্রেতাদের পাশে থাকার কথা থাকলেও উল্টো তাদের উপর গজব হয়ে নেমে এসেছেন। জেলার প্রায় অর্ধশত বিক্রেতাদের অভিযোগ, নানা অজুহাতে ওষুধের দোকান বন্ধ করে দিয়ে পুনরায় খুলে দেবার অনুমতি দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় কোটি টাকা !
সিভিল সার্জন, ড্রাগ সুপার ও ভ্রাম্যমান আদালতের নাম করে ওইসব দোকানগুলো থেকে অবৈধভাবে এসব অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন সমিতির শীর্ষ নেতারা।
তবে কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির দাবি, লাইসেন্সবিহীন ব্যবসা, মানোর্ত্তীণ ওষুধ বিক্রি ও নানা অনিয়মের কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে ।
এ বানিজ্যের শিকার কয়েকজন ওষুধ বিক্রেতা জানান, রমজানের শুরুতে নারায়ণগঞ্জ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি শাহজাহান খাঁন সমিতির কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে সঙ্গে নিয়ে এ অভিনব অভিযানে নামেন। ঔষধের দোকানে লাইসেন্স না থাকার অভিযোগ এনে ওইসব দোকানে তালা মেরে দেন। দোকানের চাবি নিজের হেফাজতে নিয়ে নেন।
পরে তাদের সমিতির অফিসে দেখা করতে বলেন। দোকান খুলে দিতে হলে প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে হবে-এমন জুজুর ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে দোকান প্রতি ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে এমনকি লাখ টাকাও হাতিয়ে নেন। নগরীর আশপাশ, বন্দর, গোগনগর ও কাশীপুরে প্রায় অর্ধশত ঔষধ বিক্রেতা তাদের এমন চাঁদাবাজির শিকার হয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কাশীপুর এলাকার এক ঔষধ বিক্রেতা জানান, রমজানে তার দোকানে তালা মেরে চাঁবি নিয়ে যান শাহজাহার খাঁন। পরে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে চাঁবি ফেরত নিয়ে আসেন।
ওই ঔষধ বিক্রেতার অভিযোগ, করোনা মহামারির সময় কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতি পাশে থাকার কথা থাকলেও উল্টো তাদের উপর মরার উপর খরার ঘা হয়ে নেমে আসেন।
শুধু তাই নয়, করোনাকালে কম মুনাফায় ঔষধ বিক্রির অভিযোগে বন্দরের মেসার্স সালমা ফার্মেসীসহ কয়েকটি ফার্মেসীর উপর এ খড়গ নেমে আসে। কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির নেতা হাফিজুর রহমান খোকা ও নাজিমুদ্দিন গং বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীকে চাপ প্রয়োগ করে ওইসব দোকানগুলোতে ঔষধ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এ বিষয়ে বন্দর উপজেলা ঔষধ বিক্রেতা মালিক সমিতি বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।
সূত্রটি আরও জানায়, কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি শাহাজাহান খাঁন ও সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা এ কাজে ঔষধ কোম্পানীর আঞ্চলিক ব্যবস্থাপকদের (আরএসএম) ব্যবহার করছে। টার্গেট করা দোকানগুলোর একটি তালিকা তারা আঞ্চলিক ব্যবস্থাপকদের মোবাইলে মেসেজ দিয়ে ঔষধ সরবরাব বন্ধ করতে চাপ দেয়। দাবিকৃত চাঁদা দেয়া হলে পরে ফিরতি মেসেজে ঔষধ সরবরাহ শুরু হয় ।
বিষয়টি স্বীকার করে ঔষধ কোম্পানীগুলোর আঞ্চলিক ব্যবস্থাপকদের সংগঠনের নেতা সালাউদ্দিন আনসারী বলেন, বিষয়টি অন্যায়। তবে কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির নেতাদের চাপে এসব করতে হচ্ছে। যেসব ফার্মেসী তাদের কোম্পানীর ঔষধ বিক্রি করে তাদের সাথে এমন আচরণ অমানবিক বলেও মন্তব্য করেন।
তবে এসব চাঁদাবাজিতে তাদেরও অংশ রয়েছে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আপনি অফিসে এসে আমার সাথে দেখা করুন।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি শাহাজাহান খাঁন বলেন, ঔষধ বিক্রেতাদের এসব অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। লাইসেন্স ছাড়া অনেকে ব্যবসা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় তারা অপপ্রচার করছে।
নারায়ণগঞ্জ ড্রাগ সুপার বরারর এমন অভিযোগ সম্বলিত স্বারকলিপি প্রদানকালে ভুক্তভোগি ঔষধ ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এমন অপকর্মের বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য (নারায়ণগঞ্জ ৪ ও ৫) , নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক, বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কর্মকর্তাকে অনুলিপি দেয়া হয়েছে। এমন অভিযোগের ভিডিও সংরক্ষণে রয়েছে।।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের ঔষধ তত্ত্বাবধায়ক (ড্রাগ সুপার) ইকবাল হোসেন বলেন, প্রশাসন ও ভ্রাম্যমান আদালতের নামে তারা এসব করতে পারেন না। এটা অন্যায়। কারো লাইসেন্স না থাকলেও তারা দোকান বন্ধ করতে পারেন না। এটা প্রশাসনিক বিষয়। তবে তাদের সাংগঠনের চাঁদাবাজি তাদের সংগঠনের বিষয়। কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে আমাকে অবগত করেনি। এখন অভিযোগ পেলাম তদন্ত করে দেখা হবে ।
Discussion about this post