আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি:
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার মেঘনার কুল ঘেষা ইউনিয়ন কালাপাহাড়িয়া। নদীর বুকে ভেসে ওঠা চরে ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত কালাপাহাড়িয়া। এখানকার মানুষ বিভিন্ন পেশার সঙ্গে জড়িত। তবে বেশীভাগই কৃষি ও মেঘনা নদী থেকে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরুত্বের এই জনপদে যাতায়তের একমাত্র রাস্তা নৌযান। তবে সদর থেকে স্থানীয় খাগকান্দা ইউনিয়নের নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি পর্যন্ত যানবাহন চলাচল করে।
আইনশৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখতে তেমন একটা ভুমিকা রাখতে পারছে না । পাশে ব্রাঞ্ছারামপুর জেলার হোমনা উপজেলা । অপরাধীরা অপরাধ করেই চলে যায় পাশের উপজেলায়। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখানে অনেকটাই অসহায়। চেয়ারম্যান স্বপনের প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষ মদদে প্রতি বছরই এখানে খুনের মতো ভয়ংকর ঘটনা ঘটছে। প্রতিনিয়তই ঘটছে আইনশৃঙ্খলার অবনতি। কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম স্বপনের প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষ মদদে মারামারি ও খুনোখুনির ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে ২৫ জুন বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বপনকে সহ তার সাঙ্গপাঙ্গ আরো ১৮ জনের বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ১১ বছর ধরে কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নে স্বপনের ছত্রছায়ায় চলছে ধর্ষণ, হত্যা, ডাকাতি, মারামারি সহ নানা ধরনের অপরাধ। এর মধ্যে ২০১০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন গ্রামে ১৩টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর পেছনে চেয়ারম্যান স্বপনের মদদ রয়েছে। জানা গেছে, সর্বশেষ ২৭ মে বিকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে আয়ুব আলী (১৪) নামে এক স্কুলছাত্র মারা যায়। সে কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের স্থানীয় ইজারকান্দী পূর্বপাড়া এলাকার মৃত জালাল উদ্দিনের ছেলে এবং স্থানীয় কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। পাশাপাশি স্থানীয় আলোর সেতু পাঠাগার দেখাশোনার দায়িত্বেও ছিল।
এদিকে মৃতের পরিবারের অভিযোগ কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন তাকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে। এতে তার মৃত হয়। মৃতের মা আয়েশা বেগম বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছেন। স্বপনের আর্শিকবাদপুষ্ট সাদ্দাম হোসেকে প্রধান আসামি করে মামলায় ২৩ জনের নাম উল্লেখ্য করাসহ অজ্ঞাত আরো ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এখানেই শেষ নয় । ২০১০ সালের ২৩ মার্চ একই দিন পৃথক সময় ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি সালাকে হত্যা করা হয়। পরের দিন আওয়ামী লীগ নেতা লাল মিয়াকে হত্যা। ২০১১ সালে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে খাগকান্দা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই নাসির সিরাজীকে হত্যা । ২০১২ সালের ফিরোজ হত্যা। তবে এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি । ২০১২ সালে কাঁঠমিস্ত্রী রব মিয়া হত্যা । ২০১৫ সালে খালিয়ার চর গ্রামর প্রবাসী রাসেল হত্যা । ২০১৫ সালে পূর্বেরকান্দি গ্রামের মাদ্রাসার ছাত্রী শারমিনকে ধর্ষণের পর হত্যা। ২০১৪ সালে পূবকান্দী গ্রামের যুবলীগ নেতা রব মিয়া হত্যা। ২০১৫ সালে খালিয়ার চর গ্রামে প্রবাসী রাসেল হত্যা। একই সালে পূর্বকান্দী গ্রামে মাদ্রাসা ছাত্রী শারমিনকে ধর্ষণের পর হত্যা। একই সালে কদমির গ্রামে আমান হত্যা। পূর্বকান্দী গ্রামে তোফাজ্জল হত্যা। ২০১৬ সালে খালিয়ার চর গ্রামের যুবলীগ নেতা ডালিম হত্যা। ২০১৭ সালে কদমির চর গ্রামের পুলিশ কনস্টেবল রুবেল মাহমুদ সুমন হত্যা। এ মামলায় স্বপনকে আসামি করা হয়েছিল।
২০১৯ সালে অহিদুর রহমান ওরফে পরশিদ হত্যা মামলা হত্যা। হাতের কব্জি কাটার এক মামলায় সাদ্দামকে আসামি করা হয়। মামলা ১৬(২)২০২০ইং। ২০১৪ সালে রুকু মেম্বারসহ আলোচিত যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস ছাত্তারকে প্রধান আসামি করে থানায় অস্ত্র মামলা একটি হয়েছিল যাহার নং ৫(৫)২০১৪ইং।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, খালিয়ার চর গ্রামে চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম স্বপনের মদদে ইউসুফ, শাহীন, ইমান আলী, আবু কালাম, মনির, ইমন, সাইদুল, জসিম, রবি, আল আমিন, রুমান, রিপন, শুক্কুর আলী, মোজাম্মেল, পাবেল, আজগর, বেদন, নাদিমের অত্যাচারে ১২০টি পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে রাজধানীর হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গীর চর এলাকায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
এতো অভিযোগের পরও স্বপন চেয়ারম্যান ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের প্রায়ই পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে নিজ গাড়ীতে করে লং ড্রাইভে ঘুরতে দেখা গেছে । অসংখ্য হত্যা মামলার পর ওয়ারেন্ট জারি হলে নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ আলী নিজে স্বপন চেয়ারম্যানের গাড়ীূতে করে আদালতে আসতে এবং তাকে নিয়ে আবার বের হতেন । মূলতঃ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশের ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ আলীসহ আরো কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে নিজের করায়ত্ব করে রেখেছেন স্বপন চেয়ারম্যান । এমন ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনা ও তোলপাড় রয়েছে নারায়ণগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণে ।
এসব বিষয়ে সঠিক তদন্তের দাবি জানান এলাকাবাসী।
এমন জোড়লো অভিযোগের বিষয়ে কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। সামনে ইউনিয়ন নির্বাচনে হবে। তাই আমাকে অযোগ্য করার উদ্দেশ্যেই এসব উদ্দেশ্যমূলকভাবে করানো হচ্ছে ।
Discussion about this post