স্টাফ রিপোর্টার :
রূপগঞ্জে স্কুলছাত্রী ধর্ষণ মামলায় জামিন পেয়েছেন কারারক্ষি মৃদুল হোসাইন। সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে শুনানি শেষে আদালত তাকে ৭ দিনের জন্য জামিন মঞ্জুর করেন। আদালতে বাদীর পক্ষ থেকে জামিনের কোন বিরোধীতা করা হয়নি।
মাত্র ৭ দিনের মধ্যে ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামীর জামিনের ঘটনায় জেলা জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। জামিনপ্রাপ্ত আসামী মৃদুল হোসাইন কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের একজন কারারক্ষি।
সূত্রে জানা যায়, আসামী গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই একের পর এক চমকপ্রদ ঘটনা ঘটতে থাকে। মামলার বর্ণনা অনুসারে ভিকটিমের জবানবন্দি ছিলো অমিল। মামলা এবং জবানবন্দির কাগজে ভিকটিমের বয়স ১৫ বছর এবং দশম শ্রেণী উল্লেখ থাকলেও বিয়ের হলফনামায় দেখানো হয় বয়স ১৫ এবং পেশা গৃহিনী। ঘটনার এক দিন আগে হলফনামাটি সম্পাদন করার তারিখ দেখানো হয়।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ জানুয়ারি রূপগঞ্জ উপজেলার তারাব পৌরসভার দক্ষিণপাড়া এলাকায় বাসিন্দা দশম শ্রেণীর ছাত্রী (১৫) কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ছাতিয়ান গ্রামে তার নানা বাড়ি বেড়াতে যায়। পরের দিন ২৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে ওয়াজ মাহফিলে যাওয়ার পথ থেকে তাকে উঠিয়ে নিয়ে যায় ওই গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে মৃদুল (২২), গোলবক্সের ছেলে সিয়াম (২৩) ও সোলেমান মিয়ার ছেলে নিজাম উদ্দিন (২৫)। একটি বাঁশ ঝাড়ের পাশে নির্জন জায়গায় নিয়ে প্রধান আসামী মৃদুল তার ২ সহযোগীর সহায়তায় মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। মেয়েটি তাদের কাছ থেকে ছুটে এসে বিষয়টি তার আত্মীয়-স্বজনদের জানায়। পরে এ ঘটনায় ৩ জনের নাম উল্লেখ করে রূপগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন মেয়েটির মা।
মামলার পর মেয়েটির ডাক্তারী পরীক্ষা নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে সম্পন্ন হয়। মেয়েটি ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানান হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আসাদুজ্জামান।
২৭ জানুয়ারি বিকেলে রূপগঞ্জ থানা পুলিশের একটি টিম ঢাকা থেকে এই ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামী মৃদুলকে গ্রেপ্তার করে।
একই দিন বিকেল ৩টার দিকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মেয়েটির জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। জবানবন্দিতে ঘটনাটি ধর্ষণ উল্লেখ না করে স্বেচ্ছায় শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন বলে দাবি করে।
জবানবন্দিতে মেয়েটি নিজের বয়স ১৫ বলে দাবি করে বলেন, ‘ আমি দশম শ্রেণীর ছাত্রী। গত ২৪ জানুয়ারি ছাতিয়ান গ্রামে আমার নানার বাড়ি বেড়াতে যাই। পরের দিন শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে নানার বাড়ির পাশে খলিল নানার দোকানে মজা কিনতে যাই। দোকান থেকে আসার পথে আসামী মৃদুল আমাকে ডাকে। তার সাথে আরও ২ জন ছিলো। আমার সাথে খালাতো বোন ছিলো। আমি মৃদুলকে আগে থেকে চিনতাম ও ভালোবাসি। মৃদুল আমায় ডাকলে তার সাথে যাই। তখন আমার খালাতো বোন চলে যায়। মৃদুল আমাকে নিয়ে বাঁশ ঝাড়ের পাশে একটি বাড়ির চিপায় নিয়ে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করে। এ সময় অন্য ২ জন পাহারা দেয়। আমার খালাতো বোন নানা বাড়ি গিয়ে খবর দিলে আমার আত্মীয়-স্বজন ওই জায়াগায় আসে। পরে আমার মা এই মামলা করে। এই আমার জবানবন্দি।’
অপরদিকে গ্রেপ্তার আসামী মৃদুলের বিরুদ্ধে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালত রিমান্ড মঞ্জুর না করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আদালতে শুনানীকালে মৃদুলের পক্ষের আইনজীবী একটি হলফনামা দাখিল করেন। যেখানে মৃদুল ও মেয়েটিকে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে দাবি করা হয়। হলফনামায় মেয়েটির বয়স দেখানো হয় ১৮ বছর।
আদালতে দাখিল করা হলফনামা সম্পাদনকারী এড. বদরুননেছা মুক্তা নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেটকে বলেন, এমন হলফনামার বিষয়ে আমার কাছে কোন তথ্র নাই । আমি এ্মন হলফনামার বিষয়ে কোন কিছুই আমার মনে পরছে না । তিবে আমার সিনিয়ার আইনজীবী এড. আবদুর রব এ বিষয়ে বলতে পারবেন ।
এডভোকেট আবদুর রব এর সাথে মুটোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি প্রতিবেদকের কাছ থেকে সকল তথ্য জানার পর তিনি এ বিষয়ে সাক্ষাতে কথা বলবেন বলে জানিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
গত ২৪ জানুয়ারি নোটারী পাবলিক এর কার্যালয়, নারায়ণগঞ্জ এ হলফনামাটি সম্পাদন করা হয়। হলফনামায় উল্লেখ করা হয়, উভয় পক্ষের অভিভাবকগণের উপস্থিতিতে মৃদুল ও মেয়েটির বিয়ের দেন মোহর ধার্য করা হয় ১০ লাখ টাকা।
গত রোববার ছিলো মৃদুলের জামিন শুনানি। কিন্তু সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট সুলতানুজ্জামানের মৃত্যুর কারণে ওই আদালত বসেনি। যার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার ( ৪ ফেব্রুয়ারি) জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ধর্ষণ মামলার এই প্রধান আসামী মৃদুলের জামিন শুনানী হয়। আদালত তাকে এই মামলায় ৭ দিনের জন্য জামিন মঞ্জুর করেন। এ সময় আদালতে মৃদুলের ভাই কারারক্ষী আল মামুন, ভিকটিমসহ দু’পক্ষের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
কারারক্ষি মৃদুল হোসাইন জামিনের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌসূলী এড. ওয়াজেদ আলী খোকন নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেটকে বলেন, স্কুল ছাত্রী ধর্ষনের ঘটনায় বাদী বিবাদী উভয় পক্ষ আদালতে উপস্থিত থেকে সূখের সাথে ঘর সংসার করার জন্য আবেদন করলে এবং ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ায় আদালত কারারক্ষি মৃদুলের জামিন দিয়েছে ।
Discussion about this post