ষ্টাফ রিপোর্টার :
পরিবেশে কথা চিন্তা করে জাতীয় সংসদে আইন পাশের মাধ্যমে পলিথিনকে নিষিদ্ধ করেছে সরকার । এমন নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল থাকলেও সারাদেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জে এই নিষিদ্ধ পলিথিনের কারবার চলছে বিরামহীন ভাবে। নিষিদ্ধ এই পলিথিনের ব্যবসা প্রসার ঘটাতে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করতে । সরকারের যে সকল আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে সে সকল দপ্তরের কর্মকর্তারা ম্যানেজ থাকায় প্রকাশ্যে নারায়ণগঞ্জের সর্বত্র ই চলছে পলিথিনের উৎপাদন, বিপনন, বিতরণ । যার পুরো প্রক্রিয়াই নিষিদ্ধ ।
কিভাবে চলছে এই নিষিদ্ধ পলিথিনের কারবার এমন তথ্যের খোজ নিতে গিয়ে রেড়িয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য । পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র নেয়ার বিধান থাকলেও প্রতিমাসে নারায়ণগঞ্জের প্রত্যেক নিষিদ্ধ পলিথিন কারবারীদের কাছ থেকে বিশাল অংকের মাসোয়ারা তুলে একত্রে মিলিয়ে তা টেবিলের নীচের কর্মকান্ড শেষ করে পলিথিন চক্রটি । এই চক্রের মূল হোতা শহরের ২নং রেল গেইট এলাকার নিষিদ্ধ পলিথিন কারবারীদের গডফাদার বাবুল মিয়া । বাবুল মিয়া কয়েক দফা গ্রেফতার, নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ ও ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানের কবলে পরলে বর্তমানে সে (বাবুল) নিজে নেপথ্যে থেকে নিষিদ্ধ পলিথিনের ক্যাশিয়ার চাঁদা আদায়কারী সাগরের মাধ্যমে সকল সরকারী দপ্তর নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে । ফলে নারায়ণগঞ্জের কোন এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালত এমন নিষিদ্ধ কর্মকান্ডে বিরুদ্ধে অভিযান চালালেই আগে থেকেই সতর্ক বার্তা আসে ।
”মোবাইল কোর্ট আইতেছে, সাবধান ।”
এমন খবরে অনুসন্ধ্যান চালিয়ে জানা যায়, ”মোবাইল কোর্ট আইতেছে”- এমন খবরে নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ ও শহরের সকল নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরীর কারখানা এবং পলিথিনের পাইকারী ও খুচরা দোকান সকাল থেকেই বন্ধ হয়ে যায় । বিশেষ করে শহরের ২নং রেল গেইট এলাকার বাবুল ও তার মেয়ের জামাতার ছোয়া এন্টার প্রাইজ, চাঁদাবাজ সাগরের দোকান ও ফ্যাক্টরী, টানবাজারের লিটন ও রাজিবের ফ্যাক্টরী, দিগুবাবুর বাজারের অঞ্জন, সিদ্দিকের পাইকারী দোকান, শাহাপাড়ার বাদল সাহার ফ্যাক্টরীসহ সকল নিষিদ্ধ পলিথিন ও উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়ে সটকে পরে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
নিষিদ্ধ পলিথিন কারখানায় তালা দিয়ে সটকে পরার প্রাক্কালে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে ফতুল্রার ভোলাইল এলাকার এক ম্যানেজার জানায়, কেনই বা এরা নিষিদ্ধ ব্যবসা করে আর কেনই বা ভ্রাম্যমান আদালতের নাম শুনে কারখানা, দোকান বন্ধ করে ? অপরাধ করার ই বা দরকার কি আবার পালানোর ই বা কি প্রয়োজন ! আমি ভাই পেটের দায়ে এদের এখানে চাকুরী করি। নারায়ণগঞ্জে এই নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরী ও ব্যবসার গডফাদার হলো ২নং রেল গেইটের বাবুল ও তার মেয়ের জামাই । একই সাথে এই নিষিদ্ধ ব্যবসা করে সাগর আজ কোটি কোটি টাকার মালিক। এই সাগর নারায়ণগঞ্জের সকল পলিথিনের কারখানা ও দোকান থেকে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা উঠায় ডিসি অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের নামে । ডিসি অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের নাকি বিশাল টাকা দিতে হয় । আর এই টাকার দেয়ার কারণে কখন মোবাইল কোর্ট অভিযান চালাবে তার আগেই খবর দিয়ে দিলে আমরা কারখানা ও দোকান বন্ধ করে দিয়ে সটকে পরি । নইলে জেল জরিমানা দিতে হবে।
এমন অভিযানের পর কয়েকটি কারখানা থেকে গত দুদিনে সাগর ও বাবুলচক্র শহরের দিগু বাবুর বাজারের অঞ্জন, সিদ্ধিকসহ চারটি নিষিদ্ধ দোকান থেকে ২০ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করে । একই ভাবে খানপুরের বৌ বাজারের পলিথিনের কারখানার মালিক সবুজ, নয়ামাটির শ্যামা সুন্দর সাহা, টানবাজারের রাজিব, লিটন, এক্সপোর্ট ব্যবসায়ী বাদল সাহা, জে জে পলি ফ্যাক্টরীর লোকমান, ২নং রেল গেইটে এলাকার সোহাগের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের চাঁদা আদায় করার পর আজ আবার মোবাইল কোর্ট অভিযান চালাবে বলে সকল ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে । তাই সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নিষিদ্ধ পলিথিন বিক্রির সকল দোকান ও কারখানা বন্ধ রাখা হয় ।
গামেন্টসের জন্য বিদেশ থেকে আমদানী করা পলিথিনের দানা অসাধু পথে নারায়ণগঞ্জে নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরী করতে একটি বিশাল চক্র দীর্ঘদিন যাবৎ জেলা প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তরের অসাধু কর্মকর্তা, থানা ও ডিবি পুলিশের অসাধু কর্মকর্তাদের নিয়মিত মোটা অংকের মাসোয়ারা দিয়ে সরকারের কঠোর আইন থাকলেও তা না মেনে অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে ।
বিগত সময়ে জেলা প্রশাসনের এনডিসি মাঞ্জারুল মান্নান নারায়ণগঞ্জ নিষিদ্ধ পলিথিনের গডফাদার বাবুলের কয়েক ট্রাক নিষিদ্ধ পলিথিন আটক করলেও তোলপাড়ের ঝড় উঠে শহরজুড়ে। এরপর আর বাবুলসহ অন্যান্যদের অনেক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে দেখা না যাওয়ায় সমালোচনা রয়েছে সর্বত্র ।
Discussion about this post