সম্প্রতি একজন সাংবাদিকের সাংবাদিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে উঠে এসেছে নানা প্রশ্ন । আসলেই ঘটনা কি ? এমন অসংখ্য প্রশ্ন সামনে রেখে অনুসন্ধান করে জানা গেলো চাঞ্চল্যকর ভিন্ন চিত্র
নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
প্রতারণার শিকার আনিসুর রহমানসহ আরো কয়েকজন নিঃস্ব হয়ে বিচারের দাবীতে ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রশাসনের এক দপ্তর থেকে অন্য দপ্তরে। বিচারের দাবী জানানোর পর শুনতে হচ্ছে ফের হুমকি ।
ঘটনার বিষয়ে খোজ নিয়ে জানা যায়, জীবন জীবিকার তাগিদে নিজ ভূমি ছেড়ে সৌদি আরব চলে যান আনিসুর রহমান। সেখান থেকেই তিনি নিজের কষ্টে অর্জিত টাকায় ১৬ শতাংশ জমি কিনেন। দীর্ঘদিন পর তিনি দেশে ফিরে এসে নিজ জমিতে গিয়ে শুনেন এটি তার জমি নন! এই জমিটি কামাল প্রধান নামক এক ব্যক্তি অপর একজনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন!অমন কথা শুনে হতবিহ্বল আনিসুর রহমান।
এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন নিজের কাগজপত্র নিয়ে। পরে নানা ভাবে খোঁজাখুঁজির পর তিনি জানতে পারেন কামাল প্রধান একটি পাওয়ার অব অ্যার্টনীর মাধ্যমে তার জায়গাটি অন্য একজনের কাছে বিক্রি করেন।
আনিস আরও জানতে পারেন, কামাল প্রধানকে তিনি পাওয়ার অব অ্যাটর্নী দিয়েছেন। এতে তার স্বাক্ষর ও টিপ সই রয়েছে। আদতে কামাল প্রধানকে পাওয়ার অব অ্যার্টনী দেওয়াতো দূরের কথা এই কামাল প্রধান কে, তা তিনি নিজেও চিনেন না এবং এতে যে স্বাক্ষর ও টিপ সই রয়েছে তা তার নিজেরও নয়।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে বন্দর উপজেলার কুশিয়ারা এলাকায়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগি আনিসুর রহমান ৩১ অক্টোবর বাদী হয়ে বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। যার নং ৪৫।
মামলায় তিনি বন্দরের বাগবাড়ি এলাকার প্রধান বাড়ি এলাকার আবুল প্রধানের ছেলে কামাল প্রধান ও উপজেলার ৮৯ নং উইলসন রোড এলাকার মৃত হাজী সদর উদ্দিনের ছেলে আক্তারুজ্জামানসহ আজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামী করেছেন।
এর আগে আনিসুর রহমান একই ঘটনায় পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদের কাছে এ ব্যাপারে ন্যায় চেয়ে একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছিলেন। এই অভিযোগের তদন্ত করতে পুলিশ সুপার নির্দেশ দেন জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলমগীরকে।
কান্না জড়িত কণ্ঠে আনিসুর রহমান জানান, আমি সৌদি আরব প্রবাসী। সেখানে পরিশ্রম করে অর্জিত টাকায় বন্দর উপজেলার কুশিয়ারা মৌজাস্থ পৃথক তিনটি দলিল মূলে ১০, ৪ এবং ২ শতাংশ জমি ক্রয় করি ২০০৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০০৭ সালের ২৯ জুলাই। এরপর আমি সৌদি আর চলে যাই। দীর্ঘদিন পর তথা ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরে এসে জানতে পারি আমার কষ্টে অর্জিত টাকায় কেনা জমিটি কামাল প্রধান নামক ব্যক্তি একটি ‘ভূয়া’ পাওয়ার অব অ্যাটর্নীর মাধ্যমে ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর বিক্রি করে দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, কে এই কামাল হোসেন, আমি চিনতে পারছিলাম না। পরবর্তীতে আক্তারুজ্জামানের কাছ থেকে কামালের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করি। কিন্তু দীর্ঘদিন তাকে খুঁজেও পাচ্ছিলাম না। ফের চলতি বছরের ১৫ অক্টোবর কামাল প্রধানের বন্দর বাগবাড়ি এলাকার নিজ বাড়িতে গিয়ে এমন প্রতারণ কারণ কি, জানতে চাইলে তিনি আমাকে অজ্ঞাত আরও কয়েকজন ব্যক্তিসহ ভয়ভীতি এবং মামলা মোকাদ্দমা করলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন।
এদিকে সম্প্রতি ওই কামাল প্রধান নিজেকে তিনটি পত্রিকার প্রকাশক উল্লেখ করে গণমাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে দাবি করেছেন, জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের এসআই আলমগীর তাকে ডিবি কার্যালয়ে জোরপূর্বক ডেকে নিয়ে হুমকি ধামকি প্রদান করেছেন!
তবে, ডিবি পুলিশর এসআই আলমগীর এ ব্যাপারটি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, এসপি বরাবর আনিসুর রহমান নামক এক ব্যক্তি একটি অভিযোগ দেন। সেটির তদন্ত করতে দায়িত্ব দেওয়া হয় আমাকে। কিন্তু কামাল প্রধান কে, সেটি চিনতে পারছিলাম না। এরমধ্যে কোর্ট এলাকার একটি ক্যান্টিনে বাদি আনিসুর রহমান দেখিয়ে দেন উনিই কামাল প্রধান। তখন তাকে ঘটনাটা বলি এবং উভয় পক্ষকে বসে এর একটা সমাধান করার জন্য বলি। পরে তিনি নিজে সময় দিয়েছিলেন আসবেন বলে। কিন্তু তিনি না এসে পরের দিন পত্রিকাতে একটি সংবাদ প্রকাশ করান যার সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।
অন্যদিকে আনিসুর রহমানও জানান, ক্যান্টিনে আমার সামনেই কামাল প্রধান বসার তারিখ নির্ধারণ করে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার দেওয়া তারিখ মতো আমি আমার সমস্ত কাগজপত্র সাথে করে এসপি অফিসে উপস্থিত হলেও তিনি আর আসেননি।
মামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বন্দর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আজহারুল ইসলাম এর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কামাল প্রধানের বিরুদ্ধে এর আগেও বেশ কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছিলো। এরমধ্যে প্রতারণার অভিযোগে একটি কোট পিটিশন রয়েছে। এছাড়াও আদালতে তার বিরুদ্ধে আরও একাধিক মামলা রয়েছে।
Discussion about this post