দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী পারটেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা, বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য এমএ হাশেমের ছেলে শওকত আজিজ রাসেলের গাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
শওকত আজিজ রাসেল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও রাজধানীর অভিজাত ক্লাব ‘গুলশান ক্লাবে‘র সভাপতি ।
আর এই অস্ত্র ও মাদক মামলা থেকে ছেলে শওকত আজিজ রাসেল এবং নাতিসহ ডিবি পুলিশের হাতে আটক পুত্রবধূকে রক্ষা করতে এসপি অফিসে স্বপরিবারে এসে ধরণা দিয়েছিলেন দেশের প্রতিষ্ঠিত শীর্ষ স্থানীয় শিল্প গ্রুপ পারটেক্স এর কর্ণধার আবুল হাসেম নিজেই । যার কথায় ক্ষমতাসীন থাকাবস্থায় “বাঘে মহিষে এক ঘাটে পানি খেত” সেই আবুল হাসেম স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে আটককৃতদের ছাড়ানোর জন্য ।
এমন ঘটনা ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে ।
রোববার ২ নভেম্বর সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তিনি তার স্ত্রীসহ নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার কার্যলায়ে অবস্থান করেন। তবে, মামলা থেকে ছেলেকে রক্ষার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়াতে বিমর্ষ মুখে হাসেম ও তার স্ত্রী ফিরে যান। তবে, সাথে করে নিয়ে গেছেন নাতি ও পুত্রবধূকে।
জানা যায়, ১ নভেম্বর দিবাগত রাত সোয়া তিনটার দিকে সাইনবোর্ড এলাকার চৌরঙ্গী পাম্পের কাছ থেকে গুলশান ক্লাবের সভাপতি এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও আম্বার গ্রুপের চেয়ারম্যান শওকত আজিজ রাসেলের ব্যক্তিগত গাড়ি থেকে বিদেশী মদ, বিয়ার ও গুলি উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
এ সময় রাসেলের ব্যক্তিগত গাড়ি চালক মো. সুমনকে (২৯) আটক করা হয় । জব্দ করা হয়েছে মাদকের কাজে ব্যবহৃত সাদা রঙের একটি জিপ (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৩-৮৩৭৫) গাড়ি।
ঘনিষ্ঠ একঠি সূত্র থেকে জানা যায়, এসময় গাড়িতে শওকত আজিজ রাসেলের স্ত্রী ফারাহ রাসেল ও ছেলে আনাব আজিজও উপস্থিত ছিলেন। তাদেরকেও ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়েছিলো । তবে, পারটেক্স গ্রুপের কর্ণধার আবুল হাসেম তার স্ত্রী একই গ্রুপের চেয়ারম্যান হাসেমের স্ত্রী সুলতানা হাসেমের হেফাজতে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জলিল মাতুব্বর বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছেন। উভয় মামলাতেই গাড়ি চালক সুমনের পাশাপাশি পারটেক্স গ্রুপের কর্ণধার আবুল হাসেমের ছেলে শওকত আজিজ রাসেলকে আসামী করা হয়েছে।
জলিল মাতুব্বর জানান, শওকত আজিজ রাসেলের গাড়ি থেকে ২৮ রাউন্ড গুলি, ১ হাজার দুইশত পিস ইয়াবা, ২৪ বোতল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশী মদ, ৪৮ ক্যান বিদেশী বিয়ার, নগদ ২২ হাজার ৩শ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে । এ সময় গাড়ি চালক রাজধানীর বাটারা থানার নুরের চালা এলাকার জসিম মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া মো. সৈয়দের ছেলে মো. সুমনকে আটক করা হয়।
তিনি আরও জানান, এদিন রাত একটার দিকে তেজগাঁও থানার সাত রাস্তার মগবাজার ফ্লাইওভারে কাছে যানজট সৃষ্টি হয়। সেখানে এসপির গাড়ি চালক জুয়েল মিয়া হর্ণ দিলে সামনে থাকা উল্লেখিত গাড়ি থেকে একজন নেমে এসে গালাগাল করতে শুরু করে। পরে কনস্টেবল (গাড়ি চালক) গাড়ি থেকে নামলে পুলিশের লোক বুঝতে পেরে ওই ব্যক্তি তার গাড়ি নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন তার পিছু নিয়ে কনস্টেবল দেখেতে পান গাড়িটি নারায়ণগঞ্জের দিকে প্রবেশ করছে। তখন সে ফোনে বিষয়টি আমাকে জানালে সঙ্গীয় ফোর্সসহ সাইনবোর্ড এলাকায় অবস্থান নিয়ে গাড়িটি আটক করে তল্লাশী চালিয়ে ওই মাদক দ্রব্য ও গুলি উদ্ধার করি ।
শনিবার ২ নভেম্বর বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসপি হারুন অর রশীদ বলেন, শওকত আজিজ রাসেলের গাড়ি তল্লাশী করে ইয়াবা, পিস্তলের গুলি ও বিদেশী মদ উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে আমরা ধরতে পারি নাই, সে পালিয়ে গেছে। তবে তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে দু’টি মামলা হয়েছে। তাকে ধরার জন্য গুলশান এলাকায় যাই ও ঢাকার একটি ক্লাবে যাই, তার বাসায় যাই কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। আসামি রাসেলকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
Discussion about this post