“আমি জানতাম না এটি মত বিনিময় সভা হবে। আমাকে মিসগাইড করা হয়েছে। আমি জানতাম প্রেসক্লাব ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে ।“
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর এমন মন্তব্য ঘিরে নগরীতে ব্যাপক গুঞ্জন ও আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে ।
সোমবার (৮ এপ্রিল) বিকেলে চাষাঢ়ায় বিকেএমইএ ভবনে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন ৷
মেয়র আইভীর বক্তব্যের শুরুতে এমন মন্তব্য করায় মতবিনিময় সভায় উপস্থিত অনেকের গুঞ্জন আলোচনা সমালোচনা থেকে জানা যায়, “মেয়র আইভীর কথাই যদি সত্যি হয়, তবে এই আয়োজন অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ। নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের আয়োজনে এমন মত বিনিময় সভাস্থল কেন প্রেসক্লাবে না করে এই বিকেএমইএ ভবনে করা হলো ? এতো আযোজন, এতো খরচা কি করে প্রেসক্লাব করলো ? তবে কি এই ইফতার মাহফিলের অন্তরালে মতবিনিময় সভার নেপথ্যে আর কি কি আছে ? এমন প্রশ্নও ছিলো মতবিনিময় সভায় পিস্থিত অনেকের মাঝে । যা ঘিরে ব্যপক সমালোচনার ঝড় বইছে নগরীতে।
নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমানের উপস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিল্লাল হোসেন রবিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবনের সঞ্চালনায় ভিবিন্ন সংগঠন ও ব্যবসাীদের অংশগহণ ছিলো লক্ষ্যনীয়।
এ সময় মেয়র আইভী বলেন, ‘নগরীর বড় একটি সড়কের একপাশ হকারদের ব্যবসার জন্য দিলেও তারা বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাতে বসায় ‘জনপ্রতিনিধের অপমান’ করা হচ্ছে । হকার সমস্যা সারা বাংলাদেশে সব জায়গায় আছে। জনপ্রতিনিধিদের স্বদিচ্ছা আছে, প্রশাসন এগিয়ে এসেছে। খুব শ্রীঘ্রই সমাধান হয়ে যাবে৷ যাদের এত বড় জায়গা দেয়ার পরও বঙ্গবন্ধু সড়কে যাচ্ছে, তাতে আমি মনে করি এটা জনপ্রতিনিধিদের অপমান করা হচ্ছে।’
নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনের পাশে রেলের কর্মচারী ট্রাস্টের নামে মার্কেট নির্মাণের প্রসঙ্গ টেনে নাসিক মেয়র বলেন, ‘এক নম্বর রেলগেট এলাকায় বিশাল বড় মার্কেট হচ্ছে। রেলওয়ের প্রাক্তন কর্মচারীরা মার্কেট করছে। আমরা সকলে নিশ্চুপ, জানি না, বলছিও না। বারবার চেষ্টার পরও একটি শহরে আমরা মানুষদের জায়গা দিতে পারছিনা। এর মধ্যে রেলওয়ের প্রাক্তন কর্মচারীদের জন্য ভবন করে মার্কেট বানানো হচ্ছে। যেখানে সরকারিভাবে ‘মাল্টিমডেল হাব’ হবার কথা। সংসদে সংসদ সদস্যরা এ প্রকল্প পাশ করিয়েছে। নৌমন্ত্রণালয়, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন তিনটি প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে একটি বড় হাব হবে। যেখানে রেল স্টেশন, নৌ টার্মিনাল ও বাস টার্মিনাল থাকবে। সেটাকে তোয়াক্কা না করে এত বড় মার্কেট হচ্ছে। সকলে নিশ্চুপ, কিন্তু নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নিশ্চিুপ না। আমরা চেষ্টা করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক কাজই তো করতে পারি না, মন খুলে বলতেও পারি না। ইভেন্টে ডাকছেন, আসছি, কথা বলছি। চেষ্টা করছি সবার সাথে মিলে কাজ করার জন্য। কিন্তু এর মানেই এ না যে এ শহরে যে যা খুশি তা করবে। অন্যান্য সংস্থা এসে আমাদের অধিকার খর্ব করে তারা নিজের জন্য ব্যবস্থা করবে আর নারায়ণগঞ্জের মানুষ চেয়ে চেয়ে দেখবে ? এটা হয় না।‘
হকার সমস্যা নিয়ে আইভী বলেন, ‘সমস্যা আমি খুব বেশি দেখি না। যে দু-একটা সমস্যা আছে সেটা শামীম ও সেলিম ভাই বসে যদি শুধু বলে দেয় তাহলেই তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান হয়ে যায়। আমি শামীম ভাইকে বলেছিলাম আপনি যদি বলেন, তাহলে কাল থেকে বঙ্গবন্ধু সড়কে কেউ বসবে না। একজন হকারও বসবে না। শামীম ভাই তো বললো না। বললে তো একজন হকারও থাকে না।’
তিনি বলেন, ‘এটা সত্য, উনি (শামীম ওসমান) বললে থাকবে না। আসাদ কই পালায়ে যাবে খুঁজেও পাবে না। উনি ৫ মিনিট সময় দিলে সে দুই মিনিটে পালিয়ে যাবে। যানজট থেকে শুরু করে সবকিছুর সমাধান হবে। শামীম ভাই, সেলিম ভাই চাইলে শহরে কিছুই থাকবে না।’
সিটি মেয়র বলেন, ‘সেলিম ভাই বলেছেন মাথা ঠান্ডা রাখতে। আমি কখনোই গরম হই না। চেষ্টা করি ঠান্ডা মাথায় কথা বলার জন্য। ঈদের পর বসবে, আমি চেষ্টা করবো বসার জন্য। সিদ্ধিরগঞ্জে লেক আমরা করেছি। লেক করেছি বলে নারায়ণগঞ্জের মানুষ বেঁচে থাকবে। এগুলো যদি ভরাট করা হয় তাহলে নারায়ণগঞ্জ বাঁচবে না। আমাদের প্রত্যেক সড়কের সঙ্গে কানেকটিং ড্রেন আছে। আর্মি কাজ শেষ করলে আমরা চেষ্টা করবো তারা যেখানে পানি ফেলছে সেখানে কানেকশন দিয়ে দেয়ার।’
নগরীতে উত্থাপিত এমন কঠোর সমালোচনার বিষয়ে জানতে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবনের মুঠোফোনে ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ না করতে না পারায় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক আবু সাউদ মাসুদ মুঠোফোনে এমন সমালোচনার ব্যাখ্যা দেন।
নগরীতে গুঞ্জন আলোচনা ও সমালোচনার বিষয়ে আবু সাউদ মাসুদ বলেন, ‘এখানে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। মেয়র মহোদয় কে আমরা কখন, কোথায়, কি হচ্ছে তা সব কিছুই অবহিত করা হয়েছে । তিনি (মেয়র) হয়তো দেখেন নাই। আমাদের প্রেসক্লাবের স্বার্থ থাকার কারণ সেলিম ওসমানের সাথে যোগাযোগ করে বিকেএমইএ ভবনে অনুষ্ঠান টি করা হয়েছে । আর এই গরমে আমাদের এই ভবনে কি করে এতো মেহমান স্থান দেবো এমন বিবেচনায় বিকেএমইএ ভবনে অনুষ্ঠানটি করতে হয়েছে। মেয়র মহোদয়ের বক্তব্যে প্রেসক্লাব মর্মাহত হয়েছে।
Discussion about this post