এ যেন আজব কর্মকাণ্ড চলছে নারায়ণগঞ্জের চিকিৎসার ক্ষেত্রে।
অত্যান্ত অসহায় হয়ে একজন মানুষ অসুস্থ হয়ে চিকিৎসক অথবা হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে উপস্থিত হলে অসুস্থতার সুযোগে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে নরকের দারপ্রান্তে নিয়ে যায় অসহায়দের।
অসুস্থদের সাথে এমন তামাশার ঘটনা প্রতিনিয়তঃ ঘটলেও সংশ্লিষ্ট আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার অসাধু চক্র যেন একে অপরের পরিপূরক । আর পাঠার বলি হচ্ছে অসুস্থ অসহায় মানুষ।
অসংখ্য ঘটনার পর এবার সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ডস্থ প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালে ভুল চিকিৎসা রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। মৃত্যুর পর লাশ আইসিইউতে নিয়ে বেঁচে আছে বলে আশ্বাস দিয়ে ৫২ হাজার টাকা বিল করার অভিযোগ স্বজনদের।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সকালে রোগী মারা গেলেও স্বজনদের জানানো হয় বিকেল ৪ টায়।
এতে নিহতের স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে হসপিটালে হট্টগোল করেন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
নিহতের নাম সালমা হোসেন (৫২)। তিনি ফতুল্লার ইসদাইর বাজার এলাকার ফারুক হোসেনের স্ত্রী।
নিহতের বড় বোন হোসনে আরা ইসলাম জানান, পেট ব্যথার কারণে সালমাকে ২৭ মার্চ দুপুরে প্রো-অ্যাকটিভ হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়। এর সারা রাত সে ভাল ছিল। আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে। ভোরে তাকে একটি ইনসেকশন দেওয়ার পর অবস্থা খারাপ হয়। তখন তাড়াহুড়া করে তাকে আইসিইউতে নিয়ে যায়। ভাল রোগীকে আইসিইউতে নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে বলা হয় রোগী কোমায় চলে গেছে।
আইসিইউতে রাখলে ঠিক হয়ে যাবে। সকাল ৮ টার দিকে বোনের শরীরে হাত দিয়ে দেখি বরফের মত ঠান্ডা। চেহারা কালো হয়ে গেছে। আমার বোন মারা গেছে বলার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় চিন্তার কোন কারণ নেই রোগী বেঁচে আছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, ব্যবস্থাপত্রে যে ডাক্তারের নাম উল্লেখ রয়েছে তিনি রোগীর চিকিৎসা করেননি। চিকিৎসা করেছেন অন্য একজন। যিনি চিকিৎসা করেছেন তিনি ডাক্তার না।
নিহতের ভাই আতাউর রহমান বলেন, বোনের মৃত্যুর খবর পেয়ে বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে হাসপাতালে আসি। তখনো আমাদের বলা হয়নি রোগী মারা গেছে। পরে ৯৯৯ নম্বারে ফোন করলে পুলিশ আসার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে রোগী মারা গেছে। রোগী সকালে মারা গেলেও মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে দিনভর আইসিইউতে রেখে ৫২ হাজার টাকা বিল করেছে। ব্যবসা করার জন্য তারা ভুল ইনজেকশন দিয়ে রোগীকে মেরে আইসিইউতে নিয়েছে।
হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল ইসলাম বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক একে.এম ফেরদৌস রহমানের তত্ত্বাবধানে রোগীর চিকিৎসা চলছিল। সকালেও তিনি রোগী দেখে গেছেন। দুপুর ২ টা ৪৯ মিনিটে ৫ নম্বর আইসিইউতে চিকিৎসাধিন অবস্থা রোগীর মৃত্যু হয়। ডাক্তার ফেরদৌস রহমানের মোবাইল নাম্বার চাইলে তিনি দেননি। তিনি চলে যাওয়ার পর কে চিকিৎসা করেছে জানতে চাইলে তার নাম না বলে জানান নিহতের স্বজনদের সঙ্গে সামাধান হয়েছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক নজরুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে কর্তৃপক্ষ ও রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলি। মৃত্যুর কারণ জানতে লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠাতে চাইলে স্বজনরা রাজি হয়নি। তারা লিখিত অভিযোগও করতে ইচ্ছুক নয়। মৃত্যুর বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই মর্মে নিহতের স্বামী ফারুক হোসেন লিখিত দিয়ে সাড়ে ৫ টার দিকে লাশ নিয়ে গেছেন।
এমন একের পর এক অঘটনের খবরে এলাকার অনেকেই বলেন, এই প্রো অ্যাকটিভ হাসপাতালটির কতটা বৈধতা আছে ? ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার কুশিলবদের অন্যতম চক্রের লোকজন নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে অসুস্থদের নিয়ে তামাশা করেই যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর এমন প্রতারণা করে নেয়া অসুস্থদের অর্থ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্বাস্থ্য খাতের নারায়ণগঞ্জের গডফাদার মামুন চক্র এবং সরকার বিরোধী একটি চক্রকে নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়ে অবৈধ ব্যবসা করছে প্রো অ্যাকটিভ । একই সাথে প্রতিটি রোগীর জন্য দালালী ও প্রদান করে এই প্রতিষ্ঠান। এদের রুখবে কে ?
Discussion about this post