তিনি আনোয়ার হোসেন । তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ অভিভাবকদের। সদ্য সমাপ্ত এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে দিবেন না বলে প্রায় ১০ জন শিক্ষার্থীর প্রবেশপত্রসহ সকল কাগজপত্র আটকে দেন এই আনোয়ার হোসেন । এ নিয়ে এসএসএস পরীক্ষার পূর্বে আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে অভিভাবকগণ। শেষ পর্যন্ত পরীক্ষার মাত্র ৫/৬ দিন পূর্বে আনোয়ার হোসেনের এমন কান্ডে খোদ নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের নজরে আনার অভিভাবকদের ঘোষণায় মহাধূর্ত আনোয়ার হোসেন সকল পরীক্ষার্থীর প্রবেশ পত্র ও অন্যান্য কাগজ শিক্ষার্থীদের হাতে দিতে বাধ্য হন। এমন অসংখ্য কর্মকাণ্ডের পর এবার গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে সেই আনোয়ার হোসেনের কর ফাঁকির ঘটনা।
জানা যায়, নগরীর আমলাপাড়ায় অবস্থিত স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ ওঠেছে।
এ অভিযোগে তাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রকাশ।
দুদকের কড়া নজরদারিতে থাকা শিক্ষক আনোয়ার হোসেন নিজেকে বিপদমুক্ত করতে সম্প্রতি চাষাঢ়ায় জনৈক কর কমিশনারের বাসভবনে দীর্ঘসময় বৈঠক করেছেন বলেও ওই সূত্রের দাবি।
প্রশ্ন ওঠেছে, একজন স্কুলশিক্ষক কীভাবে এতো বিপুল পরিমাণ টাকার মালিক হয়েছেন ? আর কেনোই বা তিনি বিশাল অংকের টাকার ট্যাক্স ফাঁকি দিলেন ? এসব প্রশ্নের জবাব খোঁজা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক অভিভাবক। তার মতে, দীর্ঘদিন যাবৎ ই উক্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ভর্তি বাণিজ্যের অভিযোগ চলে আসছিলো ।
এ ছাড়াও ম্যানেজিং কমিটির কর্তাব্যক্তিদের চোখ ফাঁকি দিয়ে তিনি নানা কৌশলে স্কুল থেকে অবৈধভাবে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিতেন বলেও কানাঘুষা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ২০১১ সালের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বছরের শুরুতে স্কুলে ছাত্র ভর্তি নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব, জাতীয় যুব সংহতির কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং জাতীয় পার্টির সদ্য সাবেক এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার তুমুল বচসা হয়েছিলো। ওই সময় এই ঘটনা বেশ আলোড়ন তুলেছিলো।
প্রসঙ্গত, ২০০০ সালে নগরীর আমলাপাড়ায় নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন, শহরের ব্যবসায়ী কাসেম জামাল। আর ওই সময় থেকেই আনোয়ার হোসেন স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদে আসীন। দীর্ঘ ২৪ বছর এই পদে থেকে তিনি স্কুলের প্রায় সবকিছুই তার আয়ত্ত্বে নিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন। বর্তমানে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কয়েক হাজার। সেই হারে স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যাও বেড়েছে কয়েক গুণ। কয়েক বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুল শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।
ফলে নারায়ণগঞ্জ শহর এবং শহরতলীর বেশিরভাগ অভিভাবক ভালো রেজাল্টের আশায় তাদের সন্তানদের এ স্কুলে ভর্তি করাতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। আর এ সুযোগটাকেই অবৈধপন্থায় কাজে লাগিয়ে প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন দিনদিন আঙুল ফুলে কলাগাছে রূপান্তরিত হয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে।
এ প্রসঙ্গে আনোয়ার হোসেনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি নিয়মিত ট্যাক্স পরিশোধ করে আসছেন জানিয়ে বলেন, গোদনাইলে তার একটা ৬ তলা বিল্ডিং নির্মাণাধীন রয়েছে। সেই বিল্ডিং নিয়েই ট্যাক্স অফিস ভুল ক্লেইম করেছে।
এমন ঘটনায় অভিভাবকদের অনেকেই বলেন আসলে এই বিদ্যালয় টিতে কত কেলেংকারী যে ঘটে যা অভিভাবকদের মাঝে প্রচন্ড ক্ষোভ থাকার পরও প্রশাসন ম্যানেজ থাকায় সকলেই যেন অসহায় ।
Discussion about this post