নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে পরিপক্ক নেতা গিয়াস উদ্দিন। অনেক ঘাট পাড়ি দিয়ে এখন নারায়ণগঞ্জে জেলা বিএনপির সভাপতি তিনি। তার রাজনৈতিক চালে (কুটকৌশলে) পরাস্ত অনেক বাঘা বাঘা নেতা । শাসক দলের নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী নেতাদের অনেকেই এই মু. গিয়াসউদ্দি কে হিসেবের মধ্যেই রেখেই রাজনীতি করেন। এক সময়ে আওয়ামীলীগের এই নেতা বর্তমানে জেলা বিএনপির সভাপতি হওেয়ার ক্ষেত্রে অনেক প্রতিকূলতার প্রতিযোগিতা করেই এখন রাজনৈতিক দাবার গুটি এই গিয়াস উদ্দিনের হাতে।
যে এলাকায় কোন মিছিল মিটিং করতে পুলিশের হাজারো বিধি নিষেধ মানতে হয় । আবার কোন কোন নেতা মিটিং মিছিল করার আগে শাসক দলের নেতাদের মাধ্যমে আইনশৃংখলা বাহিনীর অনুমতি নিয়ে রাজপথে নেমে শোডাউন ফটোসেশন করে তড়িগড়ি করে তা গুটিয়ে ফেলতে হয় । আর সেই জেলায় পুলিশের অনুমতি ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন চলছে পুরোদমে।
শনিবার (১৭ জুন) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিলে গিয়াসউদ্দিন মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই সম্মেলন।
আর এবারের সম্মেলনে সভাপতি পদে সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গিয়াসউদ্দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হলেও সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা মেরুকরণ। এ পদে বর্তমান সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকনের প্রতিদ্বন্দ্বী অপর যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীবকে এরই মধ্যে দল বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ। গত ১৫ জুন রাতে ওই নোটিশের পর থেকেই বদলে যেতে শুরু করেছে সম্মেলনের মেরুকরণ।
বিএনপি দলীয় সূত্র বলছে, ২০১৩ সালের আগস্টে বিএনপি ভেঙে বিএনএফ (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট) গঠন করার চেষ্টা করা হয়। ওই সময়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও সদর উপজেলার কমিটি গঠন করা হয়েছিল। জেলা বিএনএফ এর ১৪ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি নিবন্ধন আবেদনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছিল আবু আল ইউসুফ খানকে। তিনি এখন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব।
সদস্য সচিব ছিলেন মাসুকুল ইসলাম। যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে ছিলেন রহিমা শরীফ, আনোয়ার প্রধান, কামরুল হোসেন। আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা হলেন কবির প্রধান, কাজী রুবায়েত হোসেন, মাহফুজুর রহমান, আল আমিন, সাখাওয়াত হোসেন, সাফিয়া ইসলাম, মাহবুব সোবহান, কুতুবউদ্দিন ও আবদুল ইউসুফ। এসব নেতাদের সবাই বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের ঘনিষ্ঠ অনুগামী হিসেবে নারায়ণগঞ্জে রাজনীতি করে থাকেন।
১৭ জুন জেলা বিএনপির সম্মেলনের আগে বিষয়গুলো প্রকাশ পেলে ১৫ জুন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক চিঠিতে মাসুকুল ইসলাম রাজীবকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন।
নোটিশে বলা হয়, ‘আপনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট নামে একটি ভূঁইফোড় সংগঠনের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছেন বলে আমরা গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন তথ্যসূত্র থেকে জানতে পেরেছি। দল আরও অবহিত হয়েছে যে, আপনি শুধুমাত্র উক্ত সংগঠনের সাথে যুক্তই হন নি, বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি, নানাবিধ অপপ্রচার ও দল-বিরোধী ষড়যন্ত্রে জড়িত আছেন। আপনার এহেন তৎপরতা শুধু সংগঠন বিরোধীই নয়, বর্তমান দুঃসময়ে দলের প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
এমন নেটিশের পর মহাধূর্ত মাসুকুল ইসলাম রাজীব ও তার সমর্থকরা ওই নোটিশের বিপরীতে আরেকটি নোটিশ সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করে বিভ্রান্তিতৈরীর অপচেষ্টা চালায় ।
সুতরাং উল্লেখিত ষড়যন্ত্র ও অপ-তৎপরতার জন্য কেন আপনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, সে বিষয়ে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে একটি লিখিত জবাব দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। বিষয়টি অতীব জরুরি।’
এর আগে ২০১১ সালের ৫ ডিসেম্বর রাজীব ও তার পাঁচ সহযোগীকে ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার করেছিল জেলা গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষ শাখা (ডিবি)। ২০১২ সালে জেলা ছাত্রদলের কমিটির সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়ে পরাজিত হয়ে সম্মেলনের কয়েকদিন পর শহরের চাষাঢ়ায় অবস্থিত সরকারি মহিলা কলেজের কমিটি গঠনের সময়ে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ আরও কয়েকজন নেতাকে কলেজে প্রবেশে বাধা দেয়। এ ঘটনায় রাজীবকে প্রথমাবস্থায় ছাত্রদল থেকে বহিষ্কার করা হলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
সম্মেলন প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াসউদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আশা করি উৎসবমুখর পরিবেশেই ভোট গ্রহণ হবে। সম্মেলনটি আমার নিজস্ব স্কুল প্রাঙ্গণে হবে। এ বিষয়ে এর আগেই প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকন বলেন, সম্মেলন হবে উৎসবমুখর। এখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশারফ হোসেন।
তবে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলেন, বিএনপির কাউন্সিল করার বিষয়ে জেলা বিএনপি আমাদের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নেয়নি। এরই মধ্যে স্থানীয় এলাকাবাসী এখানে সম্মেলনের অনুমতি না দিতে আমাদের কাছে আবেদন করেছে ।
‘এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির চরম কোন্দলে দলের বৃহত্তর স্বার্থ হাসিলের চাইতে বিশাল একটি চক্র শাসক দলের নেতাদের সাথে গোপনে আতাঁত করে দলের মধ্যে নানা নাশকতা করতে তৎপর রয়েছে । এই চক্রের সকলেই নিজ দলের নেতাদের চাইতে শাসক দলের নেতাদের কাছ থেকে সুবিধা নিতেই বিএনপিকে ব্যবহার করেই যাচ্ছে । আর এমন কুটকৌশলের কাছেও দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে গিয়াসউদ্দিন। গিয়াসউদ্দিনের মূল মন্ত্র শামীম ওসমান প্রতিপক্ষ। অপরদিকে প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের লেজুড়বৃত্তি করেই গিয়াস বিরোধী চক্র আদাজল খেয়ে মাঠে রয়েছে।’ এমন মন্তব্য করেছেন আজ শনিবার (১৭ জুন) বিএনপির সম্মেলনে অংশ নেয়া কয়েকজন কাউন্সিলর।
Discussion about this post