স্বরণকালের চাঞ্চল্যকর চাষাড়ার বোমা হামলা মামলার ২২ বছর আজ। আজ ১৬ জুন। ২২ বছর পূর্বে ২০০১ সালে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের অফিসে বোমা হামলা মামলার ঘটনা ঘটে । চাঞ্চল্যকর এই মামলার বিচার এই বছরেও বিচার কাজ শেষ হয়নি। সেদিন শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে প্রাণ হারান ২০ জন। ভয়াবহ ওই বোমা হামলায় প্রিন্টারে ক্ষতবিক্ষত হয়ে আহত হন সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ আরও অর্ধশত নেতা কর্মী। যাদের অনেকেই হাত–পা হারিয়ে এখনো পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে আছেন।
এমন চাঞ্চল্যকর বোমা হামলার ঘটনায় নানা নাটকীয়তা, রাজনৈতিক ফয়দা হাসিল করতে ব্যস্ত হয়ে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক দলের নেতারা নানাভাবে এই মামলা ভিন্নখাতে প্রবহিত করার অপচেষ্টা এখনো অব্যাহত রেখেছে । রাজনৈতিক ফায়তা এবং নিজেদের অবস্থান টিকিয়ে রাখেতে এই চাঞ্চল্যকর মামলাটিকে এখনো রাজনৈতিক ঢাল হিসেবেই ব্যবহার করে যাচ্ছে আসামী এবং বাদী পক্ষের কেউ কেউ । এমন ক্ষোভ প্রকাশ করে বোমা হামালার শিকার এক পরিবারের সদস্য তাদের নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে বলেন, ‘আওয়ামীলীগ ক্ষমতায়, আবার আওয়ামীলীগ সরকারের শাসনামলেই এই বোমা হামলায় আমাদের একমাত্র অবলম্বন হারিয়েছি । শকুনের মতো এই মামলা পুঁজি করে কে বা কারা কিভাবে লাভবান হয়েছেন তা আমরা জানি। এই মামলার কারণে যাদের ক্ষতি হয়েছে তা আর পূরণ হবে না কিন্তু এই ঘটনায় কারা লাভবান তার হিসাব করলেই বেড়িয়ে আসবে চাঞ্চল্যকর আরো তথ্য।”
জানা যায়, ২০০১ সালের ১৬ জুন ঘটনার দিন সন্ধ্যায় সংসদ সদস্য নেতা কর্মীদের নিয়ে চাষাঢ়ায় দলীয় কার্যালয়ে আসেন। এর কিছুক্ষণ পরে বিকট শব্দে কেপে উঠে পুরো এলাকা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই উড়ে যায় অফিসের টিনের চাল। হাত–পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বহু মানুষের। আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার পরদিন আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট খোকন সাহা বাদী হয়ে বিএনপি নেতা কর্মীদের আসামি করে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা দায়ের করেন।
এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন–তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, ঢাকা সিটি করপোরেশনের কমিশনার আরিফুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদল নেতা শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ ১০ জন।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৪ সালে বিস্ফোরণ ও হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করে তদন্তকারী সংস্থা। আসামি করা হয় ভারতে আটক জঙ্গি নেতা দুই ভাই মোরসালিন ও মোত্তাকীন, মুফতি হান্নান, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু, যুবদলের নেতা শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল ও ওবায়দুল হককে।
কারাগারে আছেন যুবদল নেতা শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল। পলাতক রয়েছেন দুই ভাই আনিসুল মোরছালিন ও মাহাবুবুল মুত্তাকিম। আর জামিনে রয়েছেন কাউন্সিলর শকু। এই কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু কে ঘিরে নারায়ণগঞ্জে রয়েছে বিশাল সমালোচনা। এরপরেও বীরের বেশে এই নগরীতে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও তার ভাই সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের নির্বাচনী এলাকায় বারবার কাউন্সিলর হিসেবে জনপ্রতিনিধির আসনে অবস্থান করছে বিএনপির একনিষ্ট নেতা হয়েও। এমন ঘটনা ছাড়াও রয়েছে নানা গুঞ্জন ।
এরই মধ্যে এই বোমা হামলা মামলার আসামী হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান ভিন্ন একটি মামলায় তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এ ছাড়া ওবায়দুল হকের অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। তিনি পলাতক নাকি মৃত তা জানেন না কেউ। বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে না আসায় বিচারকাজ স্থবির হয়ে আছে।
মামলার বাদী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা বলেন, ‘মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ বর্তমানে চলমান রয়েছে। বেশ কিছু সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে আদালত। এই ঘটনা মূলত শামীম ওসমানকে হত্যা করার জন্যই এ হামলা সংঘটিত হয়েছিল। দ্রুত সময়ে বিচার হবে বলে প্রত্যাশা রাখছি।’
বোমা হামলার পঙ্গুত্ববরণ করা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দনশীল বলেন, ‘ভারতে থাকা দুই ভাই আনিসুল মোরসালিন ও মুহিবুল মোত্তাকিনকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছি। এই ঘটনার পেছনে মাস্টারমাইন্ড কারা ? তাদের খুঁজে বের করা দরকার। দ্রুত যেন এই মামলার বিচার পাই সেই দাবি জানাচ্ছি ।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মনিরুজ্জামান বুলবুল বলেন, ‘এই মামলার ২০ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আর অল্প কিছু সাক্ষী বাকি রয়েছে। আশা করছি, খুব দ্রুত সম্পন্ন হবে। আসামিদের মধ্যে মোরসালিন ও মোত্তাকিন একটি মামলায় ভারতে রয়েছে। সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে তাদের দেশে আনতে হবে।’
Discussion about this post