নারায়ণগঞ্জ খানপুর হাসপাতাল অর্থাৎ ৩০০ শয্যা হাসপাতাল যেন অবৈধ অর্থ উপার্জনের সূতিকাগার । এই হাসপাতালের ড্রাইভার হিসেবে চাকরী দেয়া হয়েছিলো একজন ঠিকাদারের বাড়ির চাকরকে। যিনি ড্রাইভারী কোন সময়ই করেন নাই । যিনি ওই মামলাবাজ ঠিকাদারের বাড়ির বাজার করা থেকে শুরু করে ধোয়া মোছার কাজ করতো। সেই ব্যক্তিকে গাড়ী চালকের চাকরী দেয়া হয় দূর্ণীতির মাধ্যমে। আর পিএ সিদ্দিক নামের এক নিম্ন শ্রেণীর কর্মচারী এই হাসপাতাল চাকরী করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ । শত শত কোটি টাকার মালিক। তার টিকিটিও স্পর্শ করতে পারে নাই কেই। আরেক ড্রাইভার আবু সিদ্দিক এম্বুলেলেন্সে মাদক বহণের অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
এতো অভিযোগের কারণে হাসপাতালের সভাপতি সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সেলিম ওসমান কর্মচারী ঠিকাদারদের চরম দূর্ণীতির কারণে হাসপাতালের দাযিত্ব থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন ।
মারাত্মক দূর্ণীতিতে নিমজ্জিত সরকারী এই হাসপাতলের প্রধান সহকারী নাসরিন সুলতানা ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর সোহেল রানা হাসপাতালে অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নতুন জনবল নিয়োেগ করে জনপ্রতি এক লাখ ২০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে অস্থায়ী নিয়োগ সম্পন্ন করেন।
এমন ঘটনার বিষয়ে বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালকের পক্ষে সহকারী পরিচালক ডা. মুহাম্মদ মইনুল হক বরাবার অভিযোগের পর ব্যাপক তোলপাড়ের সৃস্টি হয় ।
এমন ঘুষের টাকাসহ হাসপাতালের অন্যান্য খাতের নানা দূর্ণীতির অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের দুই কর্মচারীকে বদলি করা হয়েছে।
গত ৬ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালকের পক্ষে সহকারী পরিচালক ডা. মুহাম্মদ মইনুল হক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই বদলির আদেশ দেয়া হয়।
বদলিপ্রাপ্ত কর্মচারীরা হলেন নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের প্রধান সহকারী নাসরিন সুলতানা ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর সোহেল রানা। তাদের মধ্যে নাসরিন সুলতানাকে ঢাকার দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং সোহেল রানাকে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নং স্বাঃ অধিঃ/প্রশা-৩/ বিবিধ-৫১২/১৯ নং স্বারকে গত ৬ এপ্রিল হাসপাতলের প্রধান সহকারী নাসরিন সুলতানা ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর সোহেল রানার বদলী আদেশে আদেশ জারির ৫ দিনের মধ্যে ছারপত্র গ্রহণ করিতে হইবে। অন্যথায় ৬ দিন হতে সরাসরি অব্যাহতি পাইয়াছেন বলে গণ্য করা হইবে ।
এমন আদেশের পরও গতকাল সোমবার ১৭ এপ্রিল আদেশ বলে অব্যাহতিপ্রাপ্ত হাসপাতলের প্রধান সহকারী নাসরিন সুলতানা ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর সোহেল রানাকে নারায়ণগঞ্জ ৩শ শয্যা হাসপাতালের পূর্বের পদে বসে কাজ করতে দেখা গেছে ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নাসরীন সুলতানা মুক্তা ২০১৯ সালে ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের প্রধান সহকারী হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায় হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে আচরণ শুরু করেন। সেই সাথে তাকে ম্যাডাম কিংবা বড় বাবু বলে ডাকতে হবে বলেন। হাসপাতালের কর্মচারীদের ফাইল সই করতে টাকা লাগবে অন্যথায় সই করবে না।
তবে এ বিষয়ে নাসরীন সুলতানা মুক্তা গণমাধ্যমকে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। কি কারণে বদলি কেন বদলি করলো আমার কোনো কিছুই জানা নেই ।
সোহেল রানা বলেন, গত ৬ এপ্রিল আমাকে বদলি করা হয়েছে। কিন্তু কেন করা হয়েছে আমি জানি না। আমি কখনও কোনো অনিয়মের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম না। আমি কখনও কোনো অন্যায় কাজ করি নাই। আমি আবেদন করবো এই বিষয়ে তদন্ত করার জন্য।
এমন বদলীর ঘটনা ধামাচাপা দিতে এরই মধ্যে নাারয়ণগঞ্জের একজন প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা ও তার প্রবাবশালী পুত্রের কাছে দৌড়ঝাপ করছে সোহেল রানা। আর ওই নেতা ও তার পুত্রের পরামর্শ অনুযায়ী বদলীর আদেশ স্থগিত করার আবেদন করে এখনো পূর্বের পদে অধিষ্ঠিত রয়েছে এই দুই কর্মচারী । সরকারী এই আদেশকে বৃদ্দাঙ্গুলী দেকিয়ে একনো ওই নেতা ও তার পুত্রের কাছে দৌড়ঝাপ চালাচ্ছে নাসরিন সুলতানা ও সোহেল রানা ।
নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসা তত্ত্বাবধায়ক (উপ-পরিচালক, স্বাস্থ্য) ডা. মো. আবুল বাসার গণমাধ্যমকে বলেন, দুইজনকে বদলি করা হয়েছে। সেই সাথে এটা স্থগিতের জন্য তাঁরা আবেদনও করেছেন জানি। তাঁরা আমার কাছ থেকে এখন পর্যন্ত রিলিজ নেয়নি। আমার কাছে আসেওনি। তাঁরা অফিসেও আসছেন না। আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তাঁরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন।
Discussion about this post