স্বামী অপহরনের পূর্ব থেকেই পরিবেশ আন্দোলন ঘিরে যতটা সোচ্চার ছিলেন পরিবেশ আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান । স্বামী এ বি সিদ্দিককে অপহরণের সাথে সাথেই তিনি আরো সোচ্চার হয়ে এই আন্দোলনকারো কঠোর হবেন বলেদেৃঢ়তার সাথে মন্তব্য করেন। কিন্তু স্বামী এ বি সিদ্দিক উদ্ধার হওয়ার পর একেবারেই চুপসে যান এই পরিবেশ যোদ্ধা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ।
এর পর থেকে কারা ধরে নিয়েছিল, তার কোনো কূল-কিনারা হয় নাই এই নয় বছর অতিবাহিত হলেও। গত নয় বছরেও পরিবেশ আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও তার স্বামী এ বি সিদ্দিক আরে কোন কথাও বলেন নাই এতো বড় ঘটনার বিষয়ে।
২০১৪ সাথে ২৭ জুলাই নাারয়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনার মাত্র ১০ দিন পূর্বে একটি পোশাক কারখানার কর্মকর্তা এবি সিদ্দিক অপহরণ হলে সারাদেশে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয় । এবি সিদ্দিক ১৬ এপ্রিল অপহৃত হলে তা ছিল ব্যাপক আলোচিত ঘটনা। এই ঘটনা আড়াল করতে ১০ দিনর মধ্যে সাতজনকে অপহরণের পর আরেক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় পুরো দেশ জুড়ে । সেই অপহৃত সাত জনকে হত্যা করা শীতলক্ষায় প্রতিটি লাশের পেট ফুটো করে ইট বেঁধে ডুবিয়ে দেয়ার পর অনেকটাই আড়ালে এখন ওই ঘটনা।
স্বামী অপহরণের পর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় রিজওয়ানার করা ওই মামলা তদন্ত করতে বিশেষ একটি কমিটি করা হয়।“কোনো ক্লু নেই। যে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সে গাড়ির নাম্বার প্লেট ছিল ভুয়া। এই পর্যন্ত বলার মতো কোনো অগ্রগতি হয়নি। তারপরও নিরাশ হওয়াও কিছু নেই।”
কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজনকে তুলে নিয়ে হত্যার পর নারায়ণগঞ্জের পুলিশ প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল হয়। ফলে বদল হয় এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও।
প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম। তার পদে গত ১১ মে যোগ দেয়ার পর এনায়েত শফি ঢাকায় এসে বাদী রিজওয়ানা এবং অপহৃত এবি সিদ্দিকের সঙ্গে কথা বলেছেন তৎকালীন সময়ে ।
এদিকে ৯ বছর অতিবাহিত হলেও কোনো অগ্রগতি দেখাতে না পারলেও পুলিশের ওপর আস্থা অটুট রয়েছে রিজওয়ানার। এজন্য অপেক্ষা করতেও তৈরি এই আইনজীবী।
“এই ঘটনা তদন্তে পুলিশকে সময় দিতে হবে। ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় অপরাধীদের খুঁজে পেতে সময় লেগেছে। তাছাড়া বিচারের জন্যও সময়ের প্রয়োজন রয়েছে,” এভাবেই গণমাধ্যম কে বলেন পরিবেশ যোদ্ধা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
রিজওয়ানার কতৎকারীন সময়ের ভাষ্য, “নারায়ণগঞ্জের এখন যে অবস্থা, তাতে সেখানে গিয়ে তার কাজ করাটা নিরাপদ মনে করছি না। এজন্য তাকে বাসাতেই থাকতে হচ্ছে।”
পুলিশকে নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, “পুলিশ- র্যাব নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি ছাড়াও মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরা নিয়মিত খোঁজ রাখছেন। পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়টিও নজর দিচ্ছে পুলিশ।”
২০১৪ সালের ১৬ এপ্রিল বুধবার দুপুরে ফতুল্লার ভুঁইগড় এলাকায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে গাড়ি আটকে দুর্বৃত্তরা তুলে নিয়ে গিয়েছিল এবি সিদ্দিককে। একটি নীল রঙের গাড়িতে করে তাকে নেয়া হয়েছিল, যার নম্বর প্লেট ভুয়া বলে প্রমাণ পায় পুলিশ।
অপহরণের প্রায় ৩৫ ঘণ্টা পর মধ্যরাতে রাজধানীর কলাবাগান এলাকায় পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে একটি অটোরিকশায় পাওয়া যায় এবি সিদ্দিককে। তার বক্তব্য অনুযায়ী, অপহরণকারীরা মিরপুর ১ নম্বরের কাছে তাকে ছেড়ে দেয়।
ম্যাগসেসে পুরস্কারজয়ী রিজওয়ানার স্বামী অপহরণের পরপরই দেশে-বিদেশে উদ্বেগের মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মুহম্মদ মারুফ হাসানের নেতৃত্বে র্যাব পুলিশ সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
সেই তদন্ত এই নয় বছরেও কোন আলোর মুখ দেখে নাই ।
তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কমিটি সদস্য তৎকালীন সময়ের শীর্ষ কর্মকর্তাগণ বলেছিলেন, “এখন পর্যন্ত বলার মতো কিছু হয়নি। তবে আমরা রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
অপহরণের প্রায় ৩৫ ঘণ্টা পর এবি সিদ্দিককে পাওয়ার পরের দিন নারায়ণগঞ্জের আদালতে নেয়া হয়েছিল, ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দেন তিনি। তবে তাতে সুনির্দিষ্ট কারো নাম বলেননি তিনি।
এবি সিদ্দিকের বক্তব্য অনুযায়ী,তাকে ধরে নেয়ার সময় পরিচয় জানত না অপহরণকারীরা। পরে পরিচয় জেনে নিজেদের সমস্যা হবে বুঝতে পেরে ছেড়ে দেয়।
এবি সিদ্দিককে যে এলাকা থেকে ধরে নেয়া হয়েছিল, ওই এলাকা থেকেই গত ২৭ এপ্রিল অপহরণ করা হয়েছিল কাউন্সিলর নজরুলসহ সাতজনকে। তিনদিন পর তাদের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে পাওয়া যায়।
ওই অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডে র্যাবের কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে, তিনজন গ্রেপ্তার হয়ে এখন জিজ্ঞাসাবাদেরও মুখোমুখি। অভিযোগ এসেছে, অর্থ নিয়ে র্যাব এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে ।
এ ছাড়াও এই নয় বছরেও সর্বত্র চাউর রয়েছে, পরিবেশ যোদ্ধা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে শায়েস্তা করতে একটি ভূমিদস্যু চক্র সাত খুনের সাজাপ্রাপ্ত ওই কন্ট্রাক্ট কিলার বাহিনীকে দিয়েই এবি সিদ্দিককে অপহরণ করায়। পরবর্তীতে এবি সিদ্দিককে ৩৫ ঘন্টা আটক রেখে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। ফলে এখনো ওই ভয় থেকে বেড়িয়ে আসতে পারে নাই এবি সিদ্দিক ও তার সহধর্মীনী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান । এবি সিদ্দিক ও সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান মুখ খুললেই বেড়িয়ে আসতে পারে ওই চাঞ্চল্যকর ঘটনার রহস্য। পেছনে ভূমিদস্যূ চক্রের আবারো অঘটন ঘটাতে পারে এমন শংকায় একেবারেই চুপসে গেছেন অপহৃত এবি সিদ্দিক ও তার সহধর্মীনী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান । কারণ ওই ভূমিদস্য চক্র তাদের নিয়ন্ত্রিত কয়েকটি (মূখপাত্র ) গণমাধ্যেমের মাধ্যমে পরিবেশ আন্দোলনের অন্যতম যোদ্ধা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান কে গিরে নানা কল্পকাহিনী প্রচার করে নানাভবে বিভ্রান্ত করতে বারবার অপচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েই এমন অপহরণের ঘটনা ঘটায়। এই অপহরণের ঘটনায় মুখ খুললে আবারে কোন অঘটন ঘটাতে পারে এমন শংকায়ই চুপসে গেছেন এই পরিবেশ যোদ্ধা । এমনটি মনে করেন প্রায় সর্বস্তরের সচেতন মহল।
একই সাথে স্বামী অপহরণের পর ২০১৪ সালের ১৬ এপ্রিল বুধবার বেলা ৩টার দিকে স্বামী আবু বকর সিদ্দিক (এ বি সিদ্দিক) অপহৃত হওয়ার খবর পেয়েই নারায়ণগঞ্জে ছুটে আসেন পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক।
যেখান থেকে এ বি সিদ্দিককে অস্ত্রের মুখে তুলে নেয়া হয়, ফতুল্লা থানার ভুইগড় এলাকায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন রিজওয়ানা, সেখানে পুলিশ কর্মকর্তারাও ছিলেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “আমার জানা মতে, তার (সিদ্দিক) কোনো শত্রু নেই। আমাদের এমন কোনো টাকা-পয়সাও নেই যে, কেউ অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করতে পারে।
“আমার পেশাগত কর্মকাণ্ডে বসুন্ধরা, মধুমতি, আশিয়ান, শিপ ব্রেকারসহ কিছু ব্যক্তি-গোষ্ঠি চরমভাবে ক্ষুব্ধ। তারাই হয়ত পরিকল্পিতভাবে আমার স্বামীকে অপহরণ করেছে।”
রিজওয়ানার স্বামী এ বি সিদ্দিকের বেড়ে ওঠা নারায়ণগঞ্জে। তিনি ফতুল্লা পোস্ট অফিসে মোড়ের হামিদ ফ্যাশন লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক। এই প্রতিষ্ঠানটির মালিক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।
Discussion about this post