এবার গরমের সঙ্গে শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে ধুলার পরিমাণ বেড়ে মানুষের কষ্ট আর দুর্ভোগ আরও বাড়ছে। সারাদেশে চলমান দাবদাহ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। দেশের ৯০ শতাংশ এলাকাজুড়ে বয়ে যাওয়া তাপদাহ আরও ৭ দিন ধরে চলতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আর এমন তাপদাহের মধ্যে চলছে মুসলিম সম্প্রদায়ের পবিত্র রমজান । প্রতি বছরের ন্যয় এবারো নারায়ণগঞ্জের কয়েকশত হোটেল রেস্তোরাঁয় এই রমজানে পঁচা বাসী খাবার বিক্রি করেই যাচ্ছে । এই কয়েক শত হোটেল রেস্তোরাঁর মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নিজেদের সুণাম বজায় রাখতে খাবারের মান ঠিক রাখলেও প্রায় ৯০ শতাংশ হোটেল রেস্তোরাঁয় গত ২০ রমজান থেকেই পোড়া তেলে বারবার খাবার তৈরী করে তা ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করেই যাচ্ছে ।
“একদিকে পোড়া তেলে ভাজা খাবার, অপরদিকে অবিক্রিত থাকা প্রতিটি হোটেল রেস্তোরাঁয় হালিম, আস্ত মুরগির ফ্রাই, জালিকাবাব, সুতিকাবাব, টিকা কাবাব, শাহি কাবাব, ডিম চপ, ডিম কোপ্তা, সাসলিক, ভেজিটেবল রোল, চিকেন রোল, দইবড়া, হালিম, লাচ্ছি, পনির, পেস্তা বাদামের শরবত, লাবাং, মাঠা, কিমা পরোটা, ছোলা, মুড়ি, ঘুগনি, সমুচা, বেগুনি, আলুর চপ, পেঁয়াজু, শাহি জিলাপিসহ প্রায় ৩০ প্রকারের জিলাপি ফ্রিজে অথবা বিশেষ পন্তায় সংরক্ষণে রেখে তা আবার পরের দিন বিক্রি করছেই । যা দেখার জন্য নারায়ণগঞ্জের ভোক্তা অধিকারসহ সরকারী কয়েকটি সংস্থা থাকলেও তারা একেবারেই ওপেন সিক্রেট মাসোযারা গ্রহণ করায় এমন পঁচা বাসী খাবার প্রকাশে প্রতিটি হোটেল রেস্তোরাঁয় বিক্রি করছে । এ বিষয়ে কোন সরকারী সংস্থা মাথা ব্যাথাও নাই।
ফলে ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের মাত্রা মারাত্মক আকার ধারন করায় জনস্বাস্থ্য যেমন চরম ভোগান্তিতে পরেছে তেমন নারায়ণগঞ্জের স্বাস্থ্য বিভাগ অসহায় অসুস্থদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে । একদিকে প্রায় প্রতিটি হোটেল রেস্তোরাঁয় যেমন সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে দুপুরের খাবার ও সন্ধ্যয় ইফতার সামগ্রীর পুরোটাই পঁচা বাসী ভেজাল বিক্রির মহোৎসব চলছে । আবার ফুটপাতে সরবতের পানি, আখের রস, তরমুজ কাটা, ভাঙ্গি কাটা খোলামেলা বিক্রি করায় এই খাবার থেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের সংখ্য অনেকে।
আর এই হোটেল রেস্তোরাঁর মালিক ও সমিতির পক্ষ থেকে ভোক্তা অধিকার, সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জন প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনের স্যানেটারী ইন্সপেক্টরসহ, থানা পুলিশ এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকতাদের সাথে ঈদ হান্টিংয়ের নামে সাক্ষাৎ করায় “জনস্বাস্থ্য জাহান্নামে যাক” এমন নীতি গ্রহণ করে কোন সংস্থা ই এই পর্যন্ত এমন ভেজালের বিরুদ্ধে কোন সাড়াসী অভিযান চালাতে দেখা যায় নাই । তাইলে এই সংস্থা গুলি আসলে কি করেন ?”
এমন প্রশ্ন করে স্বাস্থ্য বিভাগের একজন কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে উল্লেখিত মন্তব্য করেন।
এই কর্মকর্তা আরো বলেন, আজ বৃহস্পতিবার ( ১৩ এপিল) রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ডায়রিযায় আক্রান্তের সংস্থা ৪৩ জন। ১৩ এপ্রিলের এই সময় পর্যন্ত চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন ১০৭৯ জন। মাত্র ১৩ দিনের এই আক্রান্তের হিসাব কতটা মারাত্মক । অর্থাৎ, “কার বা গোয়াল আর কে ইবা দেয় ধুয়া !“
নারায়ণগঞ্জ মহানগরীতে ডায়রিয়া আক্রান্তদের জন্য একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া)। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি মাসে এ কয়দিনে হাজারেরও বেশি ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। গত মাসে যার পরিমাণ ছিল তুলনামূলক কম।
এ রিপোর্ট লেখো কারনি সময়ে হাসপাতালে ১৩ এপ্রিল রাতে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসা গ্রহণ করতে আসা ১০ মাস বয়সী শিশু ইমরান কে নিয়ে এসেছেন তার মা ও অপর একজন আত্মীয়।
তিনি নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে বলেন, ‘সন্ধ্যায় ইফতারের সময় কিনে আনা আখের রস খেয়ে বমি শুরু হয় বাচ্চার। কিছু খেতে পারে না। চোখ বন্ধ হয়ে আসে। মাথা ঘুরে পড়ে যায়। তাই আজ সকালে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। ডাক্তার বলেছে ডায়রিয়া হয়েছে।’
হাবিব (১৫) ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসা গ্রহণকালে বলেন, আমি আজ দুপুর ১ টায় শহরের মাউরা হোটেলে ভাত, দুই ধরণের ভর্তা (কলা আর টাকি মাছ), লাউ আর টেংরা মাছ দিয়ে খাবার খাই। এর এক ঘন্টা পর থেইক্কাই আমার পেট মোচর দিয়ে বমি বমি হইতেছে । এর সাথে শুরু হয় পাতলা পায়খানা। খাবারের সময় আমার কাছে মনে হইছে ভর্তা মাছ আর লাউ সব খাবারই বাসী । কেমন যেন ভর্তাগুলি শক্ত । আর লাউ দূর্ঘদ্ধ । এমন গন্ধের কারণ জানতে চাইলে মেসিয়ার জানায়, গরম পরছে তো তাই একটু গন্ধ হইতে পারে। এখন এই কথা আর কারে কমু ।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি গৃহবধু নাসিমা (৪৫) বলেন, ‘হঠাৎ করেই পাতলা পায়খানা শুরু হয়ে যায়। পরে তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়েছি। একটার পর একটা স্যালাইন দিতেছে।’
জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ শিউলি বেগম বলেন, ‘আমাদের এখানে প্রতিদিন গড়ে ৫০-৭০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। এদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা বেশি। রোগীদের কলেরা স্যালাইন দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সাধারণত স্যালাইন পুশ করার পর রোগীদের আর কোনো সমস্যা থাকে না। গরমের কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ে। এটা পানিবাহিত রোগ। পানির কারণেই রোগটা বেড়ে যায়।
নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মুশিউর রহমান বলেন, হঠাৎ করে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় নানা সমস্যা হতে পারে। তবে আমার এখনো এখনো সেই অর্থে ডায়রিয়া রোগী বৃদ্ধি পায়নি। তবে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে। সকলকে কাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া জরুরী ।
Discussion about this post