আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলের ২০১৩ সালের ৬ মার্চ শহরের পুরান কোর্ট এলাকার বাসা থেকে বেড়িয়ে নিখোঁজ হন মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী । এর দুই দিন পর ৮ মার্চ নগরীর চারারগোপ কালীরবাজারের কুমুদিনী খাল থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় উদ্ধর হয় নিখোঁজ ত্বকীর লাশ। তখন লাশ উদ্ধারের ঘটনায় লোমহর্ষক এমন নির্মম হত্যাকান্ড দেখে তখন কষ্টে, ক্ষোভে কেপে উঠে নারায়ণগঞ্জবাসী। সেই থেকে এই নির্মম হত্যাকান্ডসহ দেশের চাঞ্চল্যকর লোমহর্ষক কয়েকটি হত্যার বিচার দারীতে আন্দোলন করে যাচ্ছে ত্বকী মঞ্চ।
সেই চাঞ্চল্যকর ত্বকী হত্যার ১২১ মাস উপলক্ষে ৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় প্রতি মাসের ৮ তারিখের মতো এরারো প্রতিবাদ করেছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এবারো নগরীর আলী আহাম্মদ চুনকা নগর মিলনায়তন প্রাঙ্গণে আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি অনুষ্টানে রফিউর রাব্বি বলেন, দেশে বিচারহীনতা এখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। সরকার মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকারকে হরণ করে, ভোট দেয়ার অধিকারকে হরণ করে, মানুষের মৌলিত অধিকারসহ সাংবিধানিক অধিকারগুলোকে হরণ করে এক দুর্বৃত্তশক্তিকে প্রতিষ্ঠা করেছে। সরকারের অন্যায়, দুর্নীতি, দুঃশাসন ও এসবের বিরুদ্ধে কথা ও কলমে মানুষের প্রতিবাদ বন্ধ রাখার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছে। আর তাই দশ বছর পেরিয়ে গেলেও ত্বকী হত্যার বিচার শুরু হয় না। সাগর-রুনি ও তনু হত্যার বিচার হয় না। এ দায় যতটা না বিচার ব্যবস্থার তার চেয়ে বেশি সরকারের। আজকে সরকার; সরকারের বিরোধিতাকে রাষ্ট্রের বিরোধিতা আক্ষা দিচ্ছে। ভয় দেখিয়ে গণমাধ্যম ও ভিন্নমতকে দমন করে, মানুষের বাক স্বাধীনতাকে হরণ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলছে। অথচ মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের কথা বলার অধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য, বৈষম্য মুক্ত সমাজের জন্য। পাকিস্তানে সময়ও মানুষের ভোট দেয়ার অধিকার ছিল, নয়তো ১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেতো না। আজকে সে অধিকারও সরকার হরণ করেছে। সবকিছুকে দলীয়করণ করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের অর্জন গুলোকে ধ্বংস করেছে। জোর করে ক্ষমতায় থাকার জন্য রাষ্ট্রের সকল বাহিনীকে বিতর্কিত করে জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে। দেশের বাইরে এদের সুনাম ক্ষুন্ন করছে।
তিনি ত্বকী, সাগর-রুনি, তনুসহ নারায়ণগঞ্জের সকল হত্যার বিচার দাবি করেন।
মাহাবুবুর রহমান মাসুম প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রাখেন, শামীম ওসমান কী আইনের ঊর্ধ্বে? কেন তাকে আইনের আওতায় আনছেন না? তৈরী করে রাখা অভিযোগপত্রটি কেন আদালতে জমা দেয়া হচ্ছে না? আপনিতো বলেছেন অপরাধী যেই হোক তার বিচার হবে। তবে কেন ত্বকী হত্যার বিচার হচ্ছে না?
কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সহ সভাপতি মুহাম্মদ সেলিম । সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন নিহত ত্বকীর পিতা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান মাসুম, সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি প্রদীপ ঘোষ বাবু, মহিলা পরিষদের জেলা সভাপতি লক্ষ্মী চক্রবর্তী, সিপিবি শহর সভাপতি আবদুর হাই শরীফ, ন্যাপ জেলা সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলন জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, সামাজিক সংগঠন সমমনার সাবেক সভাপতি দুলাল সাহা প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানায়, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ৫ মার্চ ২০১৪ তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চারসেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। অচিরেই তারা অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবে। কিন্তু সে অভিযোগপত্র আজো পেশ করা হয় নাই। ত্বকী হত্যার পর থেকে বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোকপ্রজ্বালন সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।
Discussion about this post