নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের দুই সদস্য ছিনিয়ে নেওয়া চক্রের প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন পালিয়ে যাওয়া জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিবের স্ত্রী ফাতেমা তাসনীম ওরফে শিখা। পলাতক জঙ্গি সোহেল নারায়ণগঞ্জের একটি বাসায় অন্তত দুবার যাওয়া-আসা করেছেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
নারায়ণগঞ্জের ওই বাসায় থাকতেন সোহেলের স্ত্রী ফাতেমা তাসনীম শিখা। তার কাছেই আসা-যাওয়া ছিল সোহেলের। গোপন খবরে শুক্রবার (৭ এপ্রিল) রাতে ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে শিখা ও তাকে আশ্রয় দেওয়া হুসনা আক্তারকে গ্রেফতার করে সিটিটিসি।
সিটিটিসি বলছে, আদালত চত্বর থেকে পুলিশকে আক্রমণ করে ছিনতাই হওয়া আনসার-আল-ইসলামের দুই জঙ্গি দেশেই আছে। সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে তারা দুজন পৃথক স্থানে অবস্থান করছে। আদালত থেকে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ৬ মাস আগে থেকে কারাগারে গিয়ে গ্রেফতার শিখা সোহেলের সঙ্গে পালানোর যাবতীয় কৌশল রপ্ত করেন। আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলতেন শিখা। জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার দিনও শিখা স্পটে ছিলেন এবং দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার পর একটি আনসার ক্যাম্পে নিয়ে যান।
শনিবার (৮ এপ্রিল) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এ কথা জানান। তিনি বলেন, গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের নানা দিক সম্পর্কে বিস্তারিত জানা গেছে।
ঢাকার আদালত চত্তর থেকে পালানোর পর শিখার নারায়ণগঞ্জের বাসায় সোহেলের যাতায়াত ছিল কিনা জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, দুইবার গিয়েছিল। আমরা অভিযানে সোহেলকে পাইনি। পলাতক জঙ্গিদের গ্রেফতারে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি ।
তিনি বলেন, আনসার আল ইসলামের সদস্যরা ৪ জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য কর্তব্যরত পুলিশের ওপর হামলা করে। এসময় মইনুল হাসান শামিম ওরফে সিফাত (২৪) ও মো. আবু সিদ্দিক সোহেলকে (৩৪) ছিনিয়ে নিয়ে মোটর সাইকেল যোগে পালিয়ে যায় তারা। এ ঘটনায় পলাতক জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেলের স্ত্রী ফাতেমা তাসনীম ওরফে শিখা, পলাতক আসামি ও হামলাকারী সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেন।
গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, শিখা ২০১৪ সালে এমআইএসটি থেকে প্রথম শ্রেণিতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন। তার ভাই মোজ্জাম্মেল হোসেন ওরফে সায়মনের মাধ্যমে সে আনসার আল ইসলামের আদর্শে দীক্ষিত হয় এবং পরবর্তীতে সায়মনের মাধ্যমে আবু সিদ্দীক সোহেলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।
সোহেল আনসার আল ইসলামের সামরিক (আসকারি) শাখার সদস্য ছিলেন। সোহেলের সঙ্গে বিয়ের পর থেকে শিখা আরও গভীরভাবে সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
২০১৭ সালে মুক্তমনা ব্লগার অভিজিৎ, দীপন ও নীলাদ্রি হত্যা মামলার আসামি হিসেবে আবু সিদ্দিক সোহেল গ্রেফতার হয়। গ্রেফতারের পর থেকে বিভিন্ন অ্যানক্রিপ্টেড অ্যাপস মাধ্যমে শিখা কারাবন্দি সোহলসহ সংগঠনের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সংগঠনের কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ শুরু করে।
জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা সম্পর্কে গ্রেফতাররা আরও জানায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতাদের পরিকল্পনা ও নির্দেশনা মোতাবেক গত বছরের ২০ নভেম্বর আদালতের কার্যক্রম শেষে পুলিশের ওপর হামলা করে জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করা হয়। শিখা এ কার্যক্রমে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। পরিচয় গোপন করে আনসার আল ইসলামের সদস্যরা জঙ্গি ছিনতাইয়ের পুরো পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও সমন্বয় করার উদ্দেশ্যে ঢাকা এবং এর পার্শ্ববর্তী জেলায় একাধিক বাসা ভাড়া নেয় তারা। সেখানে আনসার আল ইসলামের শীর্ষ এবং সামরিক শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আয়মান এবং শিখাসহ অজ্ঞাতনামা সদস্যদের নিয়ে নিয়মিত মিটিং করতেন।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, হামলা বা জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব পর্যায় থেকে এসেছিল। এর বাইরে পরিকল্পনায় আরও যারা রয়েছে তাদের নাম পেয়েছি। তবে, তদন্তের স্বার্থে বলছি না।
জঙ্গি ছিনতাই পরিকল্পিত হলে গোয়েন্দারা আগে জানলো না কেন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, সবকিছুই যে গোয়েন্দারা জানতে পারবে এমন কোনো কথা নেই। কাজটি তারা অতি গোপনে করেছে। স্ত্রী পরিচয় দিয়ে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গির সঙ্গে দেখা করেছে ।
স্বামী-স্ত্রী যখন হাজতখানায় দেখা করেছে। ইশারা-ইঙ্গিতে তারা একথাগুলো (পালিয়ে যাবার প্লান) বলেছে। আমরা যারা এসব নজদারি করি, তাদের নজর এড়িয়ে তারা কাজটি করতে সক্ষম হয়েছে।
দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার দিন আবু সিদ্দিক সোহেলের স্ত্রী শিখা আদালত চত্বরে ছিল কি না প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, হ্যাঁ, তারা সেখানেই ছিল। পৃথক দুটি মোটরসাইকেলে জঙ্গিরা পালিয়ে গিয়েছিল। সেটা মনিটরিং করেছে শিখা আর সায়মান। এ অভিযানে ১০/১২ জন অংশ নিয়েছিল।
Discussion about this post