“আইনশৃংখলা পরিস্থিতি কতটা মারাত্মক অবনতি ঘটলে মধ্যযুগীয় কায়দায় এই প্রেক্ষাপটে এমন নির্মম হত্যাকান্ড দেখতে হয়। আড়াইহাজারের একজন কর্মকর্তা বদলী হতে যেখানে আশি (৮০) লাখ টাকা ব্যয় করেন সেখানে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি আর কত ভালো আশা করা যায়। যে কর্মকর্তা রূপগঞ্জে চাকরীকালীন সময়ে খোদ পাট ও বস্ত্র মন্ত্রীর একজন স্বজনের অর্থ জালিয়াতিতে জড়িয়ে পরেন এরপর নারায়ণগঞ্জ ডিবিতে চাকরীকালীন সময়ে নানা কেলেংকারীতে জড়িয়ে স্বরাস্ট্রমন্ত্রীর বরাবর অভিযোগের পর প্রত্যাহার করা হয় সেই কর্তা কি করে আড়াইহাজারের মতো গুরুত্বপূর্ণ থানায় পোস্টিং পায় ?”
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে একজন সরকারী কর্মকর্তা উল্লেখিত মন্তব্য করেন । তিনি বলেন, ‘যার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা বিচারাধীন, পিবিআই তদন্ত করছে । ফেনসিডিলসহ মাদক ব্যবসায়ীকে আটকের পর ৫ লাখ টাকায় ছেড়ে দেয়ার ঘটনায় ক্লোজ করা হয় সেই কর্মকর্তা থানার আইনশৃংখলার দায়িত্ব পেলে কতটুকু ভালো হবে পরিস্থিতি ? জেলা পুলিশের মাঝেও “আশি লাখে আড়াইহাজার” এমন সমালোচনা রযেছে ।
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী, সরকারী কয়েকজন কর্মকর্তা এমন ঘটনায় কঠোর সমালোচনার রেকর্ড সংরক্ষনে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট এর দপ্তরে।
জানা যায়, জমি বায়নার টাকা না পাওয়ায় মাহাবুব (২৩) নামে এক যুবদল নেতাকে তুলে নিয়ে কুপিয়ে, পিটিয়ে ও চোখ উপড়ে হত্যাকান্ডের ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে আড়াইহাজার উপজেলাজুড়ে।
মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে দুপ্তারা ইউনিয়নের সিংরাটি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত মাহাবুব দুপ্তারা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সিংরাটি এলাকার হাজী আব্দুল হানিফার ছেলে। তিনি দুপ্তারা ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
এ ঘটনায় সন্দেহভাজন দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটকরা হলেন- কিসমত ও কামাল।
প্রত্যাক্ষদর্শী স্থানীয়রা জানান, একই গ্রামের হাশমত মিয়ার কাছে মাহাবুব একটি জমি বিক্রির জন্য ৩ লাখ টাকা বায়না নিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিন যাবত হাশমত বায়নার টাকা ফেরত চাচ্ছিলেন। বায়না টাকার জের ধরে সকালে স্থানীয় কালিবাড়ি এলাকা থেকে মাহাবুবকে দুপ্তারা ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি হাশমত আলীর নেতৃত্বে একদল লোক তুলে নিয়ে যায় ।
হাশমত আলী সিংরাটি এলাকার তার নিজ বাড়িতে নিয়ে একটি কক্ষে মাহবুবকে আটকে রাখেন। সেখানে মাহবুবকে মারধরের পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। তার চোখ উপড়ে ফেলা হয়। স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
নিহত মাহাবুবের চাচা মজিবর রহমান বলেন, ‘মাহাবুব টাকা ফেরতের জন্য সময় চায়। এ নিয়ে হাশমতের সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। সকালে মাহাবুব উপজেলার কালিবাড়ি এলাকায় গেলে সেখানে হাশমতের লোকজন প্রথমে মাহাবুবকে মারধর করে। এরপর সিএনজিতে তুলে হাশমতের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে হাশমত, তার ভাই কিসমত ও কামালসহ পরিবারের লোকজন পর্যায়ক্রমে তাকে মারধর করতে থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘খবর পেয়ে মাহাবুবের বাবা হানিফ মিয়া, মা তাহেরা বেগম, দুই ভাই মহিবুর ও হাবিবুর এবং আমি হাশমতের বাড়ি যাই। সেখানে গিয়ে দেখি মাহাবুবকে তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করছে। তারা লাঠি ও হাতুড়ি দিয়ে তাকে পেটাচ্ছে। ওই সময় আমরা টাকা পরিশোধ করে দেবো জানিয়ে মাহাবুবের প্রাণ ভিক্ষা চাইছি। কিন্তু আমাদের অনুনয় বিনয়ে তাদের মন একটুও গলেনি। উল্টো আমাদের সামনেই মাহাবুবের একটি চোখ উপড়ে ফেলা হয়। হাতুড়ি দিয়ে পর্যায়ক্রমে তার মাথায় আঘাত করে। এক পর্যায়ে মাহাবুব জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তারা আমাদের বলে এবার নিয়া যা। নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ইমদাদুল ইসলাম তৈয়ব বলেন, শুনেছি পাওনা টাকার জেরে মারধরের ঘটনায় মাহবুব নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহ ইসমত আলী এবং কামাল নামে দুই ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আড়াইহাজারে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ে এলাকায় ‘আশি লাখে আড়াইহাজার‘ এমন সমালোচনার বিষয়ে মন্তব্য জানতে নারায়ণগঞ্জ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) চাইলাউ মারমার মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি ফোন গ্রহণ না করায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নাই ।
Discussion about this post