কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও বন্দরের একক আধিপত্য বিস্তারকারী খান মাসুদের দুই গ্রুপের আভ্যন্তরীন কোন্দলের ঘটনায় আবারো উতপ্ত হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জের বন্দরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লা। খান মাসুদের উভয় গ্রুপের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় আতংকের নগরীতে পরিণত হয়েছে বন্দর । আগ্নেয়াস্ত্র, বিভিন্ন ধরনের ধারালো অস্ত্র নিয়ে উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় মেরাজ নামের এক যুবককে কুপিয়ে খুন করেছে খান মাসুদ বাহিনীর একাংশের সন্ত্রাসীরা।
এমন ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে কুখ্যাত সন্ত্রাসী খান মাসুদ তার নিয়ন্ত্রিত শতাধিক কিশোর গ্যাং সদস্যদের জড়ো করে কাউন্সিলর শাহীন মিয়ার বাড়িতে হামলা ও ভাংচুরসহ বন্দর সালেহনগর এলাকার কয়েকটি বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর করে তান্ডব চালাচ্ছে কিছুক্ষন পর পর ।
এ রিপোর্ট লেখাকালীন পর্যন্ত রাত সাড়ে বারোটায় একজন গৃহবধু মুঠোফোনে নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে বলেন, পুলিশ থাকলেও খান মাসুদ নিজে দাঁড়িয়ে থেকে প্রায় শতাধিক কিশোর জড়ো করে তাদের হাতে লাঠি, চাকু, হকিষ্টিক দিয়ে সালেহ নগরের দিকে পাঠাচ্ছে । এতে আতংক যেন কোন অবস্থাতেই থামছে না বন্দরবাসীর । এলাকায় কিছুক্ষন আগে ডিবি পুলিশ দেখা গেলেও এখন আর দেখা যাচ্ছে না । ফলে খান মাসুদ বাহিনী চিৎকার গালিগালাজে আতংক সৃষ্টি করেই যাচ্ছে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের স্বজনরা জানান, সোমবার (৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ইফতারের সময় রূপালী আবাসিক এলাকায় মেরাজের ওয়ার্কশপে ধারালো অস্ত্রসহ একদল সন্ত্রাসী ঢুকে তাকে ও তার বন্ধুকে কুপিয়ে জখম করে ৷ গুরুতর আহতদের প্রথমে নারায়ণগঞ্জে জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পর আহতদের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় জরুরী বিভাগের চিকিৎসক সাবিনা ইয়াসমিন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর মেরাজ কে মৃত ঘোষনা করে ঢামেক মর্গে পাঠায় চিকিৎসক ৷
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, রাত সাড়ে আটটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মেরাজুল ৷ আলামিন নামে অপরজন চিকিৎসাধীন আছেন ৷
নিহত মেরাজুল বন্দরের ছালেহনগর এলাকার আজহারুল ইসলামের ছেলে ৷ আহত আল আমিন রুপালী আবাসিক এলাকার জাভেদ মিয়ার ছেলে ৷
স্থানীয় সোয়েব ও রবিনের নেতৃত্বে মানিক, রানা ও নাদিমসহ কয়েকজন মিলে ধারালো অস্ত্রসহ মেরাজুল ও আলামিনের উপর হামলা চালায় হয় বলে অভিযোগ নিহতের স্বজনদের ৷
অভিযুক্তদের মধ্যে সোয়েব ও রবিন স্থানীয় কাউন্সিলর শাহীন মিয়ার চাচাতো ভাই ৷ অভিযুক্ত যে কয়জনের নাম এসেছে তারা সকলেই চিনারদীর রাজুর অনুসারী বলে জানান স্থানীয়রা ৷
নিহতের ভাই মো. সম্রাট বলেন, ‘হামলাকারীদের মধ্যে কাউন্সিলরের আত্মীয়-স্বজনও আছে ৷ ওদের সাথে ড্রেজার ব্যবসা নিয়া আমার ভাইর ঝগড়া ছিল ৷ হামলা যারা করছে তাদের কয়েকজনের মুখ বাঁধা ছিল বলে যারা দেখছে তারা কইছে৷’
স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্র বলছে, বন্দরের নূরবাগের রাজু আহমেদ ও চিনারদীর আকিব হাসান রাজুর উভয় বাহিনীকে বন্দরের যুবলীগ নেতা খান মাসুদ নিয়ন্ত্রণ করেন ৷ গত ১৩ মার্চ সংঘর্ষের পর উভয়পক্ষ দু’টি মামলা করে থানায় ৷ আকিব হাসান রাজুর পক্ষের মামলায় নিহত মেরাজ সাত নম্বর এবং আহত আলামিন পাঁচ নম্বর আসামি ছিলেন ৷ সম্প্রতি হাইকোর্ট থেকে জামিন নেবার পর এলাকায় ফিরলে সোমবার সন্ধ্যায় তাদের উপর হামলার ঘটনা ঘটলো ৷
নিহত মেরাজ ও আহত আলামিন দু’জনই রাজু আহমেদ ওরফে স্ট্যান্ড রাজুর অনুসারী ৷ গত ১৩ মার্চের ওই সংঘর্ষের জেরেই এ হামলা হয়েছে বলে ধারণা স্থানীয়দের ৷
এদিকে মেরাজের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতে তার পক্ষের লোকজন প্রতিপক্ষের উপর হামলা ও স্থানীয় কাউন্সিলরের বাড়ি ও কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে ৷
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শাহীন মিয়া বলেন, ‘আমি হামলার খবর কিছুই জানি না ৷ আমার পাশের বাড়ি সোয়েব ও রবিনদের ৷ ওরা সম্পর্কে আমার চাচাতো ভাই ৷ ওরা চুইল্লা রাজুর পক্ষের লোকজন৷ দুই রাজুর মধ্যে আগে থেকেই দ্বন্দ্ব৷ ওই দ্বন্দ্বের জেরেই এটা ঘটছে বলে শুনতেছি ৷ কিন্তু এ ব্যাপারে অযথাই জড়িয়ে রাত দশটার দিকে আমার বাড়িঘরে হামলা করছে স্যান্ড রাজুর লোকজন৷ নাদিম নামে একটা ছেলেকেও তারা কুপিয়েছে বলে শুনেছি ৷’
সন্ধ্যার ওই হামলার ঘটনার পর থেকে বন্দরের রূপালী আবাসিকসহ আশেপাশের এলাকাগুলোতে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে৷
রাত সাড়ে এগারোটায় বন্দর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘এলাকায় পুলিশ আছে ৷ ঠিক কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করছে৷ হতাহতের ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন৷ তবে এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি ৷’
তবে পুরো বন্দর এলাকায় থমথমে অবস্থার সৃষ্টি হলেও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানা সমালোচনার ঝড় বইছে। অনেকেই ক্ষোভের সাথে বলেন, “কুখ্যাত অপরাধী খান মাসুদ তার বাহিনীর অন্যতম সন্ত্রাসী মাসুম ওরফে মেতরা মাসুম, বিশেষ পেশার নামধারী ডালিম প্রতিদিন পুলিশের টহল টিমের সদস্যদের জন্য নানাভাবে আপ্যায়ন মাসশেষে থানার ক্যাশিয়ারের মাধ্যামে লাখ লাখ টাকা মাসোয়ারা প্রদান করে সকল ধরণের অপরাধ করেই যাচ্ছে খান মাসুদ। একই সাথে পুলিশ ম্যানেজের পাশাপাশি এই খান মাসুদ তার অপরাধ সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে কখনো স্থানীয় সংসদ সদস্য, কখনো জাতীয় পাটি, কখনো হাজি সাব, কখনো প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা ও তার পুত্রের নাম ব্যবহার করে সকল ধরণের অপরাধ চালিয়েই যাচ্ছে বিরামহীন গতিতে । ফলে এই খান মাসুদ ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে স্থানীয় কোন গণমাধ্যমকর্মীরাও মুখ খুলতেও সাহস করে না।
Discussion about this post