রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে একজন সামান্য ছিচকে অপরাধী কি করে একটি অঞ্চলের অপরাধের সম্রাট হতে পারে তার জ্বলন্ত উদহারণ হলো রূপগঞ্জের চনপাড়া বস্তির ডন খ্যাত বজলু। যাকে ছোট বেলায় সকলেই বজলা বলে ডাকতো সেই বজলা ২০০৮ সালে সাবেক সেনাপ্রধান এবং সাবেক সংসদ সদস্য কে এম শফিউল্লাহর বিরুদ্ধে মিছিল করে সহসিকতার পরিচয় দিয়ে উঠে আসে রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দুতে। দীর্ঘদিন দাবড়িয়ে বেড়ানো সেই বজলা ওরফে বজলু ওরফে ডন বজলু ওরফে বজলুর রহমানের জীবন অবসান ঘটেছে কারাগারে থাকাবস্থায় চিকিৎসাকালীন সময়ে ।
অর্থাৎ রূপগঞ্জ উপজেলার চনপাড়া বস্তি এলাকার চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারি কুখ্যাত বজলুর রহমান ওরফে বজলু (৫২) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
শুক্রবার (৩১ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার মৃত্যু হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের তত্ত্বাবধানে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন বজলুর রহমান। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় তিনি মারা যান বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
গত বছরের ১৯ নভেম্বর আলোচিত বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে বজলুকে আটক করে র্যাব-১। সে সময় তার বিরুদ্ধে র্যাবের ওপর হামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলা চলছিল।
তখন র্যাব-১ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নোমান আহমদ জানিয়েছিল, গ্রেফতার বজলু চনপাড়া এলাকায় হত্যা, মাদক বেচাকেনা, চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি এবং যৌনপল্লি পরিচালনা করে আসছিলেন।
গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, ৫ রাউন্ড গুলি, ২২০ গ্রাম হেরোইন, একটি মোবাইল ফোন, ভারতীয় ২৫ হাজার জাল রুপি, বাংলাদেশি ৭৫ হাজার জাল টাকা এবং মাদক বিক্রির নগদ ২১ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
র্যাব জানায়, গ্রেফতার বজলু একজন চিহ্নিত অস্ত্রধারী, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারি। তিনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার চনপাড়া বস্তি এলাকার মাদক ব্যবসার অন্যতম মূলহোতা ও নিয়ন্ত্রক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় তার বেশ কয়েকজন সহযোগী কাজ করেন।
বজলুর রহমান ওরফে বজলু রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (প্যানেল চেয়ারম্যান-১) ছিলেন। তিনি স্থানীয় উঠতি বয়সের ছেলেদের কাছে বজলু ভাই নামে পরিচিত। বিভিন্ন সোর্স তার ছত্রছায়ায় এলাকার ছেলেদের টাকা দিয়ে নানা ধরনের অপকর্ম যেমন- হত্যা, মাদক বেচাকেনা, চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি, কিশোর গ্যাং, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি এবং যৌনপল্লি পরিচালনা করেন। কেউ চাঁদা না দিলে তার কপালে নেমে আসতো নির্যাতনের ভয়াবহতা। এসব আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত এক-দেড় বছরে নিহত হয়েছেন ছয়জন।
নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী নরঘাতক নূর হোসেনের মতোই আরেক কুখ্যাত অপরাধী হিসেবে সর্বত্রদাবড়িয়ে বেড়াতো এই ডন বজলু ।
গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর অপরাধী গ্রেফতারে র্যাব চনপাড়া এলাকায় অভিযান চালালে বজলুর রহমানের নির্দেশে অপরাধীরা র্যাবের ওপর হামলা চালায়। এসময় তারা আসামি ছিনিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা করে।
গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার বজলুর রহমান এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করেন।
জানা যায়, র্যাবের করা চারটি পৃথক মামলায় বজলরুর এতদিন জেলহাজতে থাকলেও জামিন পাওয়ার কৌশল হিসেবে অসুস্থতার ভান করে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী সেলিনা।
চনপাড়া বস্তি এলাকার চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারি কুখ্যাত বজলুর রহমান ওরফে বজলু (৫২) চিকিৎসাধীন অবস্থায় এমন মৃত্যুর খবর টি নিশ্চিত করেছেন রূপগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত আতাউর রহমান । তিনি নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে বলেন, রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহেদ আলী মুঠোফেনে থানায় এমন মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
Discussion about this post