২০১৪ সালে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়, “সচিবদের ভুয়া সনদ: ‘যারা চোর ধরবে তারাই চোর !’ এমন সংবাদকে কন্দ্রে করে তৎকালীন সময়ে সরকারের ৫ জন শীর্ষ কর্মকর্তাসহ প্রায় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল হয় । অর্থাৎ ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাদের এমন সনদ বাতিল হওয়ার পরও ওই সচিব শ্রেনীর ওই প্রতারকসহ সকল প্রতারকদের দৌড়াত্ম ছিলো মারাত্মক।
এমন ঘটনার এতো বছর অর্থাৎ নয় বছর পর এবার নারায়ণগঞ্জে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে একজন ভূয়া মক্তিযোদ্ধা নারায়ণগঞ্জ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিরিন বেগমের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করাকে কেন্দ্র করে।
তিনি একাধারে তোলারাম কলেজ, মহিলা কলেজ, হরগঙ্গা কলেজ, গাজীপুর কলেজের প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন । বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
কিছুটা বিলম্বে হলেও প্রায় সকল গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হয়, “নারায়ণগঞ্জ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিরিন বেগমের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করা হয়েছে। ‘প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা না হওয়ার’ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গেজেট অধিশাখার এক প্রজ্ঞাপনে তাঁর সনদ বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় গত ৪ মার্চ বৃহস্পতিবার।
প্রজ্ঞাপন সূত্রে জানা যায়, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকার) ৭৪তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন ২০২২–এর ৬(গ) ধারা অনুযায়ী প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে শিরিনের নাম বাতিল করা হয়। তাঁর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট নম্বর ছিল ১৯৩১ ।
শিরিন বেগমের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল এমন সংবাদ প্রকাশের পর ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয় নারায়ণগঞ্জসহ সর্বত্র । খোদ আওয়ামীলীগের অনেকে নেতাই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, আওয়ামীলীগ এমন একটি সংগঠন সেখানে কোন প্রতারকদের ঠাঁই হয় না। সাময়িক সুবিধা নিতে পারে কিন্তু দিন শেষে প্রতারকরা আস্তাকুঁড়ে পতিত হতেই হয়।
তোলপাড়ের পর ৩ মার্চ শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ কমার্স কলেজে এক সংবাদ সম্মেলনে শিরিন বেগম বলেন, “আমি একজন মহিলা। এই জন্য আমার বিরুদ্ধে একটি কুচক্রী মহল নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছে। তারা আমাকে নানাভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা করছে। আমি নারায়ণগঞ্জের একমাত্র পিএইচডি করা মহিলা। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স কৃতিত্বের সাথে পাশ করেছি। আমাকে নারায়ণগঞ্জের শিক্ষামাতা হিসেবে হিসেবে উপাধি দেয়া হয়েছে। বর্তমানে আমি নারায়ণগঞ্জ কমার্স কলেজে প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করছি।”
এ সময় তার পাশে বসে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জনৈক খোন্দকার মাসুদুর রহমান দিপু । দুইদিন যাবৎ এই জনৈক দিপু কে ঘিরেও ব্যাপক সামলোচনার ঝড় উঠে নগরীতে।
অনেকেই সমালোচনা করে বলেছেন, দিপু নামের এই ব্যক্তি ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মনিরুল ইসলামের ভাই / শ্যালকের পাশাপাশি সাংবাদিক, সমাজ সেবক, গংগঠক, মানবাধিকারকর্মীসহ নানা পরিচয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগরীতে চষে বেড়ান বীরের বেশে। তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে বলে চাউর রয়েছে ।
খোন্দকার মাসুদুর রহমান দিপুর বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ মহানগরীতে অভিযোগ রযেছে বিভিন্ন সাংবাদিক /সম্পাদক/বিভিন্ন সংগঠনের নেতা পরিচয় দিয়ে তিনি অটো রিকশা থেকে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ। তার রয়েছে একটি প্রতারক বাহিনী । ট্রাফিক পুলিশের দূর্বলতাকে পুঁজি করে খোদ পুলিশ সুপারের পাশে দাড়িয়ে এই প্রতারক চক্রও চাঁদাবাজির মহোৎসব চালাচ্ছে।
জেলা পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এই সাংবাদিক নামদারী খোন্দকার মাসুদুর রহমান দিপু শত শত অটো রিকশা থেকে প্রতিদিন ৫০ টাকা হারে অর্থাৎ প্রতি মাসে ১৫০০ টাকা হিসেবে চাঁদাবাজির মহোৎসব চালাচ্ছে বিরামহীনভাবে। কখনো কখনো এই দিপু নিজেকে সংসদ সদস্য (মাইক পাপা ৪) এর কাছের লোক হিসেবেও পরিচয় দিয়ে অটো রিকশার চাঁদাবাজর মহোৎসব চালাচ্ছে। এই দিপুর সাথে আরো কয়েকজন নামধারীরা (অটো সাংবাদিক) খোদ অটো রিক্শার দরিদ্র চালকগণও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “প্রতিদিন ৫০ টেহা কইরা দিপু স্যারেরে দিতে হয়। তিনিই ট্রাফিক পুলিশরে দিয়া দেয়।, কে এই দিপু স্যার ? এমন প্রশ্নে অটো রিকশা চালকগণ আরো বলেন, “তিনি সাংবাদিক গো নেতা। নারায়ণগঞ্জের সবচাইতে বড় সাংবাদিক দিপু স্যারের মতো আরো কয়েকজন নেতা আছে যারা এই স্টিকার দিয়া চান্দা নেয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিরিন বেগমের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করাকে কেন্দ্র করে এবার নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য শামীম ওসমান শনিবার (৪ মার্চ) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ ক্রিয়েটিভ গ্রাজুয়েট অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে মুজিব শতবর্ষের স্মরণে স্মারণিকার মোড়ক উন্মোচন ও অভিষেক অনুষ্ঠানে বলেছেন, “শিরিন বেগমের নাকি মুক্তিযুদ্ধের সনদ বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সনদ কখন বাতিল করা হয় ? যখন কেউ সনদ পায়। উনি তো সনদই পায়নি বাতিল হলো কিভাবে ? ধরেন কেউ মেট্রিক পরীক্ষাই দেয়নি তাহলে তার সার্টিফিকেট বাতিল হয় কিভাবে ? উনি কোর্টে গেছেন এটা উনার ব্যাপার, সেটা ভিন্ন সাবজেক্ট । এই যে বড় বড় জাতীয় পত্রিকা এসব নিউজ কেন করছেন, কারণ শিরিন আপার মতো মানুষরা মুক্ত চিন্তায় বিশ্বাস করেন এবং মুক্ত চিন্তা করে সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান। তিনি তো মানুষ গড়ার হাতিয়ার । যোগ্যতা না থাকলে কি তোলারাম কলেজ, মহিলা কলেজ, হরগঙ্গা কলেজ, গাজীপুর কলেজের প্রিন্সিপাল হতে পারেন ? তাহলে কাকে খাট করার চেষ্টা করছেন । উনারা আটকাতে চান, উনারা অপপ্রচার করছেন।”
শামীম ওসমানের এমন বক্তব্যের পর নগরীতে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষন। অনেকেই বলেছেন, “শামীম ওসমানের এই তথ্য যদি সত্যিই হয় তাইলে তাঁর (শিরিন বেগমের) মুক্তিযোদ্ধার গেজেট নম্বর ১৯৩১ বাতিল হলো কেমনে ? সর্বত্রই হাজারো প্রতারনার মাঝে কোনটি সত্যি কোনটি মিথ্যা তার হিসাব করাই কঠিন। এ যেন প্রতারকদের ছাড়াছড়ি। সচিবগণ যখণ এমন প্রতারণা করতে পারে তখন আর কাকে আর বিস্বাস করা যায়।
Discussion about this post