একদিকে বাবার আক্ষেপ :
বুয়েটের কেন্দ্রীয় মসজিদের ভেতরে জানাজার আগে ছেলের পক্ষ থেকে সবার কাছে ক্ষমা চাইলেন বাবা কাজী নূর উদ্দিন। জানাজা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ছেলে হত্যার বিচার চাইলেন। ছেলের লাশ নিয়ে বাসায় ফেরার সময় বুয়েটের এক শিক্ষক কে (ছাত্র কল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক মিজানুর রহমান) কাছে পেয়ে তিনি বললেন, ‘স্যার, একের পর এক মেধাবী শিক্ষার্থীরা খুন হচ্ছে। বিচার তো হচ্ছে না। আমার ছেলে হত্যার বিচার পাব তো ?’ এ সময় ফারদিনের বাবাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন মিজানুর রহমান।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর ওরফে পরশের লাশবাহী গাড়িটি ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে যখন আসে, তখন ঘড়িতে বেলা ২টা। শেষবার ফারদিনের প্রিয় ক্যাম্পাসে লাশ নিয়ে এসেছেন তাঁর বাবা কাজী নূর উদ্দিন। তিনি তখন শুধু সৃষ্টিকর্তার নাম নিচ্ছিলেন। আর কোনো কথা বলছিলেন না।
অপরদিকে মায়ের বিচার নিয়ে শংকা :
মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার দেলপাড়া কেন্দ্রীয় কবরস্থানের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কান্নাজড়িত কন্ঠে নিহত শিক্ষার্থী ফারদিন নূর ওরফে পরশের মা ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমার কলিজার টুকরা, আমার সোনামনি চলে গেছে। তাতে কারও কিচ্ছু আসে যায় না। আমার বাবা গেছে গা । এ সময় আক্ষেপ করে মা ফারজানা ইয়াসমিন ফারদিন নূর পরশ হত্যার ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা তিল তিল করে আমাদের সন্তানদের গড়ি, আর আমাদের সন্তানরা শেষ হয়ে যায়। এইটা তো সরকার দেখল না। আজকে কেস (মামলা) হবে, পরশুদিন বের হয়ে চলে যাবে, দেশে এই তো হচ্ছে। এ কারণেই আরেকটি ছেলের ক্ষতি হয়ে যায়। তা না হলে কারোর সাহস ছিল না আবরার মরার পরে বুয়েটের কোনো ছেলের গায়ে হাত তোলা।’
বাবা কাজী নূর উদ্দিনও আশঙ্কা প্রকাশ :
বুয়েট ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিনও আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ছেলে হত্যার বিচার না–ও পেতে পারেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ছেলেকে তো আর ফিরে পাব না। একটাই দাবি, হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে তাদের যেন বিচারের মুখোমুখি করা হয়। একটাই প্রত্যাশা, ফারদিনের মায়ের মতো আর কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। এ জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
ছেলেকে কারা হত্যা করছে, সে বিষয়ে কোনো ধারণা নেই কাজী নূর উদ্দিনের। তিনি বলেন, ‘আমি বা আমার ছেলে কারও ক্ষতি করিনি। আমার ছেলেকে কারা খুন করেছে, এ বিষয়ে কোনো ধারণা নেই। বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল হয়েছে। ফারদিনের চলাচলের ভিডিও ফুটেজ, সে কার সঙ্গে কথা বলেছে, কারা তাকে নিয়ে গেছে, ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেটি খুঁজে বের করবে।’
চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে, আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার দেলপাড়া কেন্দ্রীয় কবরস্থানের সামনে সাংবাদিকদের কাছে নিহত ফারদিন নূর ওরফে পরশের মা ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমার মেধাবী ছেলেটা বুয়েটে পড়তে যাইয়ে শ্যাষ হইয়ে আসছে। আমরা তিল তিল করে সন্তানরে গড়ছি, কিন্তু সন্তান শেষ হয়ে গেল। এত কলিজা কাদের আছে তাদের তো আপনারা খুঁজে বের করতে পারেন না।’
ফারদিনের মা বলেন, ‘আমার দাবি কী পূরণ করতে পারবেন আপনারা ? আমার সন্তান ৩ দিন ধরে নিখোঁজ। আপনারা তো খুঁজে আনতে পারেন নাই। আপনাদের কী বলব, আপনারা তো শুধু বলেই চলে যান।’
তিনি আরও বলেন, ‘বুয়েটে তো আরও একটি ছেলে মারা গেল, তো আপনারা কী করতে পারছেন বলেন? আপনারা তো শুধু রিপোর্ট লিখবেন। আর কিচ্ছু করার নাই আপনাদের।’
‘আমার কলিজার টুকরা, আমার সোনামনি চলে গেছে। তাতে কারও কিচ্ছু আসে যায় না। আমার বাবা গেছে গা ।’
Discussion about this post