সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়ন কাউন্সিলের সামনে অবৈধ গ্যাস বিচ্ছিন্ন করণের প্রতিবাদে কয়েক শত নারী পুরুষ একত্রিত হয়ে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করণে বাঁধা ও টায়ার জ্বালিয়ে ১ঘন্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অববোধ করে রাখে।
এ সময় ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তীতে পড়ে এ রোডে চলাচলারত যানবাহন ও যাত্রীরা। পরে পুলিশ এসে তাদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিলেও যানবাহন ধীর গতির কারণে দুপুর থেকে এখন পর্যন্ত যানজট চলামান রয়েছে।
জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে তিতাস গ্যাস ডিষ্টিভিউশন কোং একটি টিম একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্টেটের নেতৃত্ব পিরোজপুর ইউনিয়ন কাউন্সিলের সামনে অবৈধভাবে সংযোগ দেয়া গ্যাস বিচ্ছিন্ন করণের কাজ শুরু করে। গ্যাস বিচ্ছিন্ন করণের খবর শুনে পিরোজপুর ইউনিয়নের কয়েকহাজার নারী পুরুষ ঝাড়ুু ও লাঠি নিয়ে তিতাস কর্মকর্তাদের উপর হামলা করে গ্যাস সংযোগ যাতে বিচ্ছিন্ন না করে সেজন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে। পরে তারা রাস্তার উপর টায়ার জ্বালিয়ে তারা মহাসড়কের উপর অবস্থান নেয়। খবর পেয়ে কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশ ও থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে এসে তাদের সরে যেতে বলে। এতে নারাজ হয়ে বিক্ষোভকারীরা আরো উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এসময় তারা গ্যাস সংযোগ যাতে বিচ্ছিন্ন না করে সে জন্য পুলিশকে অনুরোধ করে। এ পর্যায়ে পুলিশ তাদের আশ্বাস মেনে নিলে গ্রামবাসী মহাসড়ক ছেড়ে যায়। গ্রামবাসীর বিক্ষোভের কারণে দুপুর থেকে মহাসড়কে দুই পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজট পিরোজপুর কাউন্সিল থেকে মেঘনা বাউশিয়া ঘাট ও মোগরাপাড়া চৌরাস্তা থেকে মদপুর পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার যানজট ছড়িয়ে পড়ে এতে চরম ভোগান্তীতে পড়ে এ রোড়ে চলাচলরত যানবাহন ও যাত্রিরা। পুলিশ যানজট নিরসনে চেষ্টা করলেও অতিরিক্ত গাড়ীর চাপে ধীর গতিতে যানবাহন চলাচল শুরু করে।
চট্টগ্রাম গামী যাত্রী ওবায়দুর জানান, দুপুর দিকে মদনপুর এলাকায় যানজটে পড়ি। এখন সন্ধ্যা ৫টা বাজে এখনও মোগরাপাড়া বাসষ্ঠ্যান্ড ক্রস করতে পারছিনা কখন যে মেঘনা সেতু পার হবো আল্লাহ জানেন।
ট্রাক চালক ইসহাক জানান, জরুরী মাল নিয়ে চট্টগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশ্য রওয়ানা দিয়ে ছিলাম। মদনপুর না আসতেই দেখি যানজট। প্রথমে ভেবে ছিলাম মদনপুরের জ্যাম পরে শুনলাম এ জ্যাম বাউশিয়া ঘাট পর্যন্ত চলে গেছে।
সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইব্রাহিম মিয়ার নেতৃত্বে তিতাস কর্তৃপক্ষ অবৈধ এসব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে।
এদিকে, সংযোগ বিচ্ছিন্নের খবর পেয়ে ওই আট গ্রামের নারী-পুরুষ একত্রিত হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
আন্দোলনে অংশ নেয়া বিলকিছ বেগম বলেন, আামদের এই গ্যাস যদি অবৈধ হয় তাইলে গ্যাস দিছিলো কারা ? পরিশ্রমের টাকায় গ্যাস সংযোগ নিয়েছি । বৈধ না করে গ্যাস কাটতে দেওয়া হবে না। আমরা বৈধ গ্যাস চাই। বৈধ না হইলে কারা গ্যাস দিছিলো তাদের খুইজ্জা বাইর কইরা তাদের শাস্তি দিয়া গ্যাস বৈধ করেন। আমাদের কে কেন কষ্ট দিবেন। আমরা তো তিতাসের লোকজনরে টাকা দিয়াই গ্যাস নিছি ।
ভাটিবন্দর গ্রামের হালিমা বেগম বলেন, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে টাকা দিয়ে গ্যাস নিয়েছি । সংযোগ কেটে দিলে আমাদের টাকা ফেরত দিতে হবে।
সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান বলেন, মহাসড়ক অবরোধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। পরে তাদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
তিতাসের সোনারগাঁ জোনের আঞ্চলিক বিপণন বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সুরুজ আলম বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে প্রায় সাড়ে তিন হাজার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বিক্ষোভকারী নারী-পুরুষ বৈধ গ্যাস সংযোগের দাবি তুলেছেন।
সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইব্রাহিম মিয়া বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। খবর পেয়ে এলাকাবাসী মহাসড়ক অবরোধ করে। দেড় ঘণ্টা পর সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে ।
Discussion about this post