খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধা একেএম নাসিম ওসমান কে নিয়ে মন্তব্যকালে বলেছেন, “৭৫ এর ১৪ আগষ্ট ছিলো নাসিম ওসমানের বিয়ে। নাসিম ওসমানের বন্ধু ছিলেন শেখ কামাল। শেখ কামাল ছিলো ওই বিয়েতে। কামাল ফিরে আসে। পরদিন বৌভাত হওয়ার কথা ছিলো। আর সেই রাতেই ঘাতকরা জাতির পিতাসহ পুরো পরিবারকে হত্যা করলো । আর নববধু স্ত্রীকে রেখে বৌ ভাত ফেলে রেখেই নাসিম ওসমান প্রতিশোধ নিতে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে ভারতে গেলেন। নাসিম ওসমান আমাকে বড় বোন হিসেবে অনেক সম্মান করতো। নাসিম ওসমান এই সেতুর জন্য বারবার আমার কাছে অনুরোধ করেছে । নাসিম ওসমান কে নিয়ে অনেক স্মৃতি। ভিত্তি প্রস্তরকালে তিনি চলে গেলেন । তাই তার নামেই এই সেতুর নামকরণ করেছি ।”
প্রধানমন্ত্রী যখন নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রাণের সেতু (বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিম ওসমান শীতলক্ষ্যা ৩য় সেতু) উদ্বোধন করলেন তখন সেই অনুষ্ঠানে ছিলেন না নাসিম ওসমানের স্ত্রী পুত্র কিংবা কন্যাদের কেউ । নারায়ণগঞ্জ শহর ও বন্দরে এই সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে ব্যানার ফেস্টুন টাঙ্গানো হলেও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সকলের দৃষ্টি খুজেছে নাসিম ওসমানের স্ত্রী সন্তানদের। অনুষ্ঠানস্থলে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, “নাসিম ওসমানের নামে সেতু, তার স্ত্রী সন্তানরা কই ?“
নারায়ণগঞ্জ তথা বন্দরবাসীর প্রাণের সেতু উদ্বোধনকালে অনেকের প্রশ্ন নিয়ে প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের সহধর্মিনী পারভীন ওসমান সাথে যোগাযোগ করেল তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, “নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম নাসিম ওসমান। জাতীয় পার্টির এই প্রেসিডিয়াম সদস্য মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সদর-বন্দর আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। তার নামে শীতলক্ষ্যার উপর নির্মিত সেতুর নামকরণ করা হয়েছে। তবে সেই সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দাওয়াত পাননি তার পরিবারের লোকজন।”
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সৈয়দপুর ও বন্দর উপজেলার মদনগঞ্জ এলাকাকে সংযুক্ত করেছে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু। এই সেতুর নামকরণ করা হয়েছে সদর-বন্দর আসনের প্রয়াত সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম নাসিম ওসমানের নামে।
সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে গণভবন থেকে ভার্চু্য়ালি এই সেতুটি উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সেতুর পূর্বপ্রান্তে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন নাসিম ওসমানের পরিবারের কেউ। এ নিয়ে উপস্থিত লোকজনের মধ্যে আলোচনা তৈরি হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নাসিম ওসমানের ছোট দুই ভাই সাংসদ সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমান উপস্থিত থাকলেও নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন ওসমান ও তার একমাত্র ছেলে আজমেরী ওসমানকে দেখা যায়নি। সেতু উদ্বোধনের আগে ভার্চুয়ালি দেওয়া বক্তব্য যখন নাসিম ওসমানকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কথা বলছিলেন তা শোনার জন্য উপস্থিত ছিলেন না তার পরিবারের কেউ। যার নামে এই সেতু তার পরিবারের কাউকে অনুষ্ঠানস্থলে দেখতে না পাওয়ায় উঠেছে নানা প্রশ্ন।
পারভীন ওসমান আরো বলেন, “তাকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। কেন দাওয়াত পাননি তা যারা আয়োজন করেছেন তারাই ভালো বলতে পারবেন।
তিনি বলেন, ‘সেতুটি করা হয়েছে প্রয়াত সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম নাসিম ওসমানের নামে। তার পরিবারের সদস্য হিসেবে আমরা অন্তত দাওয়াত কার্ড পেতে পারতাম। তেমন কোন দাওয়াত কার্ড আমাদের দেওয়া হয়নি।’
নাসিম ওসমানকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের প্রেক্ষিতে পারভীন ওসমান বলেন, ‘আপাকে (প্রধানমন্ত্রী) আমার পরিবারের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ। এর চেয়ে বেশি কিছু পাওয়ার নেই। আমি যা পাওয়ার পেয়ে গেছি।’
প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য এবং নাসিম ওসমানের স্ত্রী সন্তানদের কেউ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে নগরীজুড়ে।
Discussion about this post