“একটি বেসরকারি টিভিতে নিউজ হলো আইভী ভূমিদস্যু, সরকারের সব জায়গা দখর করে নিয়ে যাচ্ছে। আমি বলেছি, হ্যা আমি ভূমিদস্যুই কিন্তু আমি ভবন তুলি নাই। আমি নগরবাসীর জন্য মাঠ ও পার্ক করে দিয়েছি। তারা যা বলুকনা কেন, আমার জনগণ পার্ক, মাঠ পেয়ে খুশি।
আমাকে এখন অনেক মন্ত্রনালয় পছন্দ করে না। যেমন রেলওয়ে। কিছু কিছু মন্ত্রণালয় আমার নামই শুনতে পারে না। কারন আমি নাকি তাদের কাজে বাঁধা দেই। আমি কাউকেই বাঁধা দিতে চাই না, কিন্তু আমাদের নারায়ণগঞ্জ আমরা গড়তে চাই। ‘সবুজ শ্যামল জনপদ, নগর –হবে নিরাপদ’ এই শ্লোগান নিয়ে এগুতে চাই। আমি রেলের জায়গা নগরবাসীর জন্য দখল করেছি। সেই দখলকৃত জায়গায় মাঠ করে দিয়েছি, যেটা কর্নফুলী ডকইয়ার্ড দখল করতে চেয়েছিলো। আমি চারদিকে গাছ লাগিয়েছি। এটা যদি অন্যায় হয় তাহলে অন্যায় মেনে নিতে প্রস্তুত। আমাদের অনেক বাঁধা, কিন্তু কোন বাঁধা আমাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি ।“
এভাবেই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী সোমবার (৪ জুলাই) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের পরিবেশ দূষণ রোধের লক্ষে আয়োজিত গণশুনানিতে সভাপতির বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেন ।
এই সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি।
অনুষ্ঠানে সিটি মেয়র ডা. আইভী তার বক্তৃতায় সাবের হোসেন চৌধুরী এমপির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘২০০৩ সালে চেয়ারম্যান হওয়ার পর শহর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রথম পরিচয় হয় সাবের হোসেন চৌধুরীর সাথে। ওই মঞ্চে আমি তার পাশে বসা ছিলাম। উনি অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ ছিলেন, আমাকে তখন কিছু পরামর্শ দিয়েছিলেন। আমি ওই মুহুর্তে আবেগী হয়ে ওনার কথাগুলো শুনিনি। এজন্য পরে আমি অনেক পস্তাইছি। আসলে রাজনীতিতে কাউকে ছাড় দিতে নাই। নিজের অবস্থান নিজেরই তৈরি করে নিতে হয়।’
‘অনেক খাল উদ্ধার করেছি, রক্ষণাবেক্ষণ করছি । এই কাজগুলো করা অনেক কঠিন ছিল। বাবুরাইল খালের যে অবস্থা ছিল সেই অবস্থা থেকে বর্তমান অবস্থায় আনা সহজ ছিল না। ২০০ কোটি টাকা দিয়ে আইভী কেন পার্ক করবে, লেক করবে; এইটা নিয়ে অনেকে বিরোধীতা করেছিলেন। তখন আমি বলেছিলাম, ২০০ কোটি কেন ৫০০ কোটি টাকা দিয়ে হলেও আমি নগরবাসীকে বিশুদ্ধ বাতাসের ব্যবস্থা করে দেবো। শেখ রাসেল পার্ক করতে গিয়ে আমার ঠিকাদারকে জেলও খাটতে হয়েছিল। তারপরও সেই কাজটি আমি করে দেখিয়েছি। এই আত্মবিশ্বাস থেকে আমি সিদ্ধিরগঞ্জ খাল নিয়ে কাজ শুরু করেছি। এইটা নিয়েও সড়ক ও জনপথ বিভাগের বাধার সম্মুখীন হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘এই শহরে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয়। আমার মনে হয় না এই দেশের অন্য কোন জনপ্রতিনিধি এমন যুদ্ধ করে কাজ করছে। রাস্তা বড় করতে, গাছ, খাল, নদী, পুকুর রক্ষা করতে গিয়ে যুদ্ধ করতে হয়। আমার বিরুদ্ধে সংসদীয় কমিটি, প্রধানমন্ত্রী, ডিজিএফআইয়ের কাছে বড় বড় চিঠি যায়। যেই কাজটা ২ বছরে হওয়ার কথা সেইটা ৫-৭ বছর লেগে যাচ্ছে।’
সবুজ নগরী গড়ার লক্ষে নগরবাসী ও অভিজ্ঞদের পরামর্শ চান সিটি মেয়র। তিনি বলেন, ‘এইভাবে সিমেন্ট কারখানার ধুয়া নিয়ে আমরা বাঁচতে চাই না। আমাদের ব্রঙ্কাইটিস আর শ্বাসকষ্ট হবে, সেইটা আমরা চাই না। রাতারাতি খাসের জমি বিক্রি করে দেওয়া হয়। কিন্তু মাঠ, পার্ক কিংবা খোলা উদ্যান করার জন্য খাসের জায়গা চিঠি দিয়েও আমরা পাই না।’
আইভী বলেন, ‘শীতলক্ষ্যার পাড় ধরে ১৭ কিলোমিটার রাস্তা, ওয়াকওয়ে, বনায়ন করতে চাচ্ছি। এতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ১২টি প্রতিষ্ঠান। তার মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রও রয়েছে। তারা সকলেই নদী দখল করে আছে। ব্যক্তি পর্যায়ে ডেকে কথা বলেছি। কেউ কেউ সহযোগিতা করছেন কিন্তু অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি আমাকে নিয়ে নানা কথা বলছেন। সমাধান আমাকে দিতেই হবে, আমি কারও কথা শুনবো না। এইসব কারণে কিছু কিছু মন্ত্রণালয় আমাকে পছন্দ করে না। আমি নাকি তাদের কাজে বাধা দেই। আমি কারও কাজে বাধা দিতে চাই না। আমি আমাদের নারায়ণগঞ্জ আমাদের মতো করে গড়তে চাই। সবুজ শ্যামল নগরী আমরা গড়তে চাই। সবুজ শ্যামল জনপদ, নগর হবে নিরাপদ; এই স্লোগান নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ (বেলা) ও এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) আয়োজনে এই গণশুনানিতে সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ছিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক)। এই সময় আরও উপস্থিত ছিলেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আজিজুল হক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাওন শায়লা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বেলা’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা।
Discussion about this post