নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জে আদমজী এইপিজেডের ডিএনভি ক্লোথিং লিমিটেড কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে। পাওনা পরিশোধ না করে বিনা নোটিশে শ্রমিক ছাটাই ও কারাখানায় শ্রমিক নির্যাতনের প্রতিবাদে এ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে শ্রমিকরা।
শ্রমিকরা বৃহস্পতিবার ১৪ ফেব্রুয়ারী সকালে নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-শিমরাইল সড়কের সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকায় ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে।
শ্রমিকদের অভিযোগ, গত ১৩ ফেব্রুয়ারী বিনা নোটিশে হঠাৎ করেই বেপজার মাধ্যমে ডিএনভি ক্লথিং লিমিটেড কর্তৃপক্ষ ৫৩জন শ্রমিককে ছাটাইয়ের চিঠি ধরিয়ে দেয়। এ বিষয় নিয়ে মালিক পক্ষের সাথে শ্রমিকদের একটি পক্ষ কথা বলতে গেলে কর্তৃপক্ষ ওই ৫৩ জনসহ মোট ১৫০ জন শ্রমিককে পাওনাদি পরিশোধ না করে বিনা নোটিশে ছাটাই করে । আরও অভিযোগ পাওয়া যায়, দাবী আদায়ের কথা বলতে গেলে শ্রমিকদের মালিকপক্ষ নানা ভাবে হয়রানি সহ মারধর করে।
পরে শ্রমিকদের উপর নির্যাতন করে ইপিজেড এলাকা থেকে বের করে দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ ও আদমজী ইপিজেডের বেপজা সদস্যরা।
কর্মসূচী চলাকালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক ইব্রাহীম ও শিল্প পুলিশের একটি দল উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে শ্রমিকরা ডিএনভি ক্লথিং লিঃ এর কর্মকর্তাদের নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরে নির্যাতিত ও বিনাবেতনে ছাটাইকৃত শ্রমিকদের পুনঃবহালের দাবী জানান। এ সময় নারী শ্রমিকরা তাদের উপর অমানষিক নির্যাতনের করুন কাহিনী বলতে গিয়ে কান্নায় ফেটে পড়ে।
গার্মেন্টস কর্মী হোসনে আরা ও আয়রনম্যান রহিমা জানান- আমরা কোন অন্যায় করিনি, তারা আমাদের মারপিট করেছে, গলায় ওড়না পেচিয়ে ফাঁস দিতে চেয়েছে। আমাদের শারীরিক নির্যাতন করেছে। আমাদেরকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে বরখাস্ত পত্রে স্বাক্ষর করে নিয়েছে।
সুইং আপারেটর নুপুর বলেন, আমাকে চুল ধরে টানা হেচর করে চর থাপ্পর দিয়ে বের করে দিয়েছে। আমার আইডি নং- ১৪২৪৭। আমাদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদ জানাই ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুরুষ কর্মী জানান গার্মেন্টসের সিইও নির্মল, এ্যাডমিন ফারুক, রিমি ম্যাডাম, লাইনচিফ বিল্লাল, কাবিলা, শাকিল, হৃদয়, ম্যানেজার মিলন, আজমলসহ আরও অনেকে আমাদেরকে মারধর করে বিনা বেতনে গামের্ন্টস থেকে বের করে দেয়।
সালাউদ্দিন নামে এক পিএমকে বহিষ্কার করায় শ্রমিকরা তার পক্ষে সাফাই গাইতে গেলে কারখানা কর্তৃপক্ষ এসব কর্মকান্ড করে।
এদিকে অপর একটি সূত্র জানায়, ফ্যক্টরীটির একটি চক্র দীর্ঘদিন যাবৎ সাধরণ শ্রমিকদের কাজে বাধা দিয়ে আসছিল। এছাড়া ফ্যক্টরীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে ফ্যাক্টরী থেকে বের করে দেয়ার পাশাপাশি কয়েকজন কর্মকর্তাকে শারীরিক নির্যাতন করেছিল। কৌশলে বিভিন্ন গার্মেন্টসে শ্রমিক হিসাবে যোগদান করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী করাই এ চক্রটির কাজ।
ফ্যাক্টরীরর জিএম এডমিন এটিএম মোস্তফা (অবঃ মেজর) জানান, কিছু শ্রমিক অযৌক্তিক ইনক্রিমেন্টসহ অন্যান্য দাবি দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন করে আসছিল। পিএম সালাহউদ্দিন মাদকসেবী। আমরা ব্যাপারটি বুঝতে পারায় সে নিজ থেকে ইস্তফা দেয়। সে চলে যাওয়ায় তার কয়েকজন সহযোগী অসন্তুষ্ট হয়ে ফ্যাক্টরীতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরী করে।
তিনি বলেন, আমরা শ্রমিকদের ছাটাই করিনি। তাদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব না দিয়ে আন্দোলন শুরু করে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন জানান, ডিএনভি ক্লোথিং কারখানার ৫০-৬০ জন শ্রমিককে ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে ঘন্ট্যাব্যাপী মানববন্ধন পালন করে শ্রমিকরা। এ সময় কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
ঘটনার বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন শাহ পারভেজ জানান, গত ৫-৬ দিন যাবৎ ওইখানে মালিক-শ্রমিকদের সাথে সমস্যা ছিলো। একপর্যায়ে শ্রমিকদের ছাটাইয়ের অভিযোগ পাওয়া যায়। তবে শ্রমিকদের মারধরের বিষয় এখনো পর্যন্ত কোন কিছুই শুনিনি
Discussion about this post