নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিতে নগরীতে প্রতিমাসের ৮ তারিখ ধারাবাহিকভাবে আলোকপ্রজ্জলন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।
তবে এবার শুধু তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী নয়, সারা বিশ্বের করোনায় আক্রান্ত হয়ে নিহতদের স্মরণে ও বিশ্ব শান্তির কামনায় একযোগে গৃহে সামাজিক দূরত্ব মেনে মোমশিখা প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করলো নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।
৮ জুলাই বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের আহবানে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা প্রায় দুই শতাধিক বাড়িতে এই কর্মসূচি পালন করেন।
সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায় বলেন, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীকে হত্যা করা হয়। এর দুইদিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে আমরা তার লাশ উদ্ধার করি। এ হত্যাকান্ডের পর থেকে বিচারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখে আমরা নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট আলোকপ্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছি। সরকারের বৈষম্যমূলক বিচার ব্যবস্থার কারণে দীর্ঘ সাত বছরেও এ হত্যার বিচার হয়নি। আজকে আমরা এমনি এক বাস্তবতায় এসে উপনীত হয়েছি, যখন প্রত্যেককে স্ব-স্ব গৃহে অবস্থান করাটাই সবচেয়ে জরুরী কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর তাই ত্বকী হত্যার ৮৮ মাস উপলক্ষে আমরা ত্বকীর সাথে সাথে স্মরণ করছি সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে নিহতদের। নিজ নিজ গৃহে থেকে আমরা সকলে সবার সাথে যুক্ত হয়েছি।
কর্মসূচি উপলক্ষে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক, নিহত ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি বলেন, দেশে বিচারব্যবস্থা স্বাধীন হলে একটি হত্যার বিচারের অভিযোগ তৈরী হয়েও তা সাত বছর আটকে থাকতে পারে না। আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ফিরে পেতে চাই। যেখানে সকলের বিচার পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকবে, কথা বলার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে। সংবাদপত্র, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা সহ দেশের প্রতিটি নাগরিক সংবিধানে উল্লেখিত অধিকার পাবে। সরকারের কতিপয় ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে দেশের স্বাধীনতা জিম্মি হয়ে থাকবে না। আমরা সাগর-রুনি, তনু সহ নারায়ণগঞ্জের আশিক, চঞ্চল, মিঠু, বুলু হত্যার বিচার চাই। দেশে ও বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই, তাদের প্ররিবারের প্রতি জানাই সমবেদনা।
নিজ নিজ অবস্থানে থেকে এ কর্মসূচিতে অংশ নেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব হালিম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহাবুবুর রহমান মাসুম, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায়, সাবেক সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল, প্রদীপ ঘোষ বাবু, সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল, মনি সুপান্থ, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, খেলাঘর নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি রথীন চক্রবর্তী, উদীচী জেলা সভাপতি জাহিদুল হক দীপু, সাধারণ সম্পাদক পলাশ দে, সমগীতের সভাপতি অমল আকাশ, সিপিবি জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, বাসদ জেলা কমিটির সমন্বয়ক নিখিল দাস, ন্যাপ জেলা সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলন জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন সহ প্রায় দুই’শ সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতা কর্মী।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দু’দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানায়, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ৫ মার্চ ২০১৪ তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চারসেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। অচিরেই তারা অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবে। কিন্তু সে অভিযোগপত্র আজো পেশ করা হয় নাই। ত্বকী হত্যার পর থেকে বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোকপ্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।
Discussion about this post