মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম
মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমের বাবা সিরাজুল করিম মহাখালীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছে। কিন্তু সাহেদ করিম বা পরিবারের কাউকে তাঁরা খুঁজে পাচ্ছেন না। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুপুরের দিকে তাঁরা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, গত ৪ জুলাই রাতে সিরাজুল করিমকে তাঁর হাসপাতালে ভর্তি করতে নিয়ে আসেন সাহেদ করিম। তাঁর নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা ছিল। পরে তাঁর দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এ সময় তিনি জানতে চান নিজের হাসপাতাল থাকতে সাহেদ কেন তাঁর হাসপাতালে ভর্তি করতে চাইছেন। জবাবে সাহেদ বলেন, তাঁর হাসপাতালে ডায়ালাইসিসসহ অন্যান্য সেবার ব্যবস্থা নেই। ওখানে রাখা ঝুঁকিপূর্ণ। ভর্তির পর প্রথম দুই দিন তিনি খোঁজখবর করেছিলেন। যেদিন র্যাব তাঁর হাসপাতালে অভিযান চালায়, সেদিন রাতে তিনি ফোন করেছিলেন। এরপর থেকে তাঁর ফোন বন্ধ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে সাহেদের মোবাইল নম্বর ছাড়া আর কারও ফোন নম্বর নেই।
হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী সংকটাপন্ন রোগীদের দেখভালের জন্য কাউকে না কাউকে কেবিনে থাকতে হয়। গত ৭ জুলাই পর্যন্ত সাহেদ করিমের একজন সহকারী ছিলেন। গতকাল আর একজন এসেছিলেন। সকাল থেকে তাঁকে আর পাওয়া যাচ্ছে না। রোগীর অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। তিনি কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসে আছেন, তাঁর রক্তচাপের ওঠানামা মারাত্মক। এ পরিস্থিতিতে তাঁরা কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। শেষ পর্যন্ত দুপুরের দিকে তাঁরা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
গত ৬ জুলাই র্যাব রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় অভিযান করে। নানা প্রতারণার দায়ে সাহেদ করিমকে এক নম্বর আসামি ১৭ জনের নামে উত্তরা পশ্চিম থানায় র্যাব মামলা দায়ের করে। আজ সকালে রিজেন্ট গ্রুপের জনসংযোগ কর্মকর্তা তারেক শিবলীকে র্যাব গ্রেপ্তার করে। এখনো এ মামলার আটজনকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি তারা।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক আশিক বিল্লাহ বলেন, সাহেকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
এ দিকে সাহেদের স্ত্রী সাদিয়া আরাবী রিম্মি গণমাধ্যম কে বলেন, তিন দিন আগে তাঁর সঙ্গে স্বামীর শেষ যোগাযোগ হয়েছিল। তিনি ফোন করে জানিয়েছেন যেখানে আছেন ভালো আছেন। সাদিয়া বলেন, তাঁর শ্বশুরের কাছে একজনকে রেখেছিলেন। পরে জেনেছেন সেও গ্রেপ্তার হয়েছে। এ কারণে এখন কেউ নেই ।
এদিকে যতই সময় যাচ্ছে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদের প্রতারণা আর অপকর্মের খবর ততই প্রকাশ পাচ্ছে। স্বামীর এমন খবরে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন তার স্ত্রী সাদিয়া আরাবি রিম্মি। তবে স্বামীর পক্ষে সাফাই নয়, প্রতারণার জন্য শাস্তি চেয়েছেন রিম্মি।
বৃহস্পতিবার একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে সাহেদের স্ত্রী সাদিয়া আরাবি রিম্মি বলেছেন, ‘আমি কোনো দিনও চাই নাই সে পার পেয়ে যাক। ওর পরিবারের সবাই বলেছে অপরাধ করলে শাস্তি পাবেই।
সাহেদের স্ত্রীর দাবি, বিয়ের পর তার স্বামীর অপকর্মের বিষয়টি বুঝতে পারলেও সংসার টিকিয়ে রাখতে তাকে শোধারানোর সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু সে অপকর্ম ছাড়েননি। কিন্তু এবার যা শুনেছেন তাতে তারা লজ্জিত ও দুঃখিত।
গণমাধ্যমে একের পর এক অপকর্মের খবর প্রকাশ হওয়ায় তারা অনুভূতিহীন হয়ে পড়েছেন। প্রায় দু বছর ধরে শাহেদ পরিবারসহ থাকতেন ওল্ড ডিওএইচএসের চার নাম্বার সড়কের একটি বাসায়। সেখানে বসেই কথা বলেন তার স্ত্রী রিম্মি।
গত ৭ জুলাই সাহেদের মালিকানাধীন উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে করোনার নমুনা পরীক্ষা না করে রিপোর্ট দেয়াসহ নানা অভিযোগে অভিযান চালায় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে হাসপাতালটির উত্তরা ও মিরপুর শাখা সিলগালা করে দেয়া হয়। সব কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ওই ঘটনায় সাহেদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বেশ কয়েকজন আটক হলেও সাহেদ এখনো পলাতক আছেন। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য খুঁজছে র্যাব। তার বিরুদ্ধে আগেও প্রতারণার অনেকগুলো মামলা আছে দেশের বিভিন্ন থানায়। এসব মামলায় জেলও খেটেছেন সাহেদ।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছবি তুলে তাদের প্রভাব দেখিয়ে অপকর্ম করে আসছিলেন সাহেদ এমন তথ্য জানা গেছে। কখনো সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কখনো সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বেড়াতেন সাহেদ। কোনো সরকারি পদে না থেকেও চলতেন ফ্লাগওয়ালা গাড়ি নিয়ে। সঙ্গে থাকত গানম্যান। শুধু তাই নয়, হাসপাতাল দুটির ভবন মালিকদের ভাড়া দিতেন না না সাহেদ। অতিরিক্ত বিল নিয়ে কথা বললে রোগীর স্বজনদের মারধর করা হত বলেও অভিযোগ উঠেছে।
যেখানে পরিবার নিয়ে থাকতেন সেই বাড়িওয়ালাকেও নানা ধরনের হুমকি দিয়েছেন সাহেদ। সাহেদের বাড়ি সাতক্ষীরায় হলেও বেশ আগে সেখানকার সব সম্পত্তি বিক্রি করে ঢাকায় চলে আসেন বলে জানা গেছে।
স্বামীর বিরুদ্ধে যখন বিস্তর অভিযোগ তখন লজ্জিত রিম্মি জানান, অভিযানের পর সাহেদ আত্মগোপনে থাকলেও ফোনে কথা হয়েছে। জানিয়েছেন তিনি নিরাপদে আছেন। রিম্মি বলেন, ২০০৭ সালে বিয়ের পরের বছরই তার নানান অপকর্ম জানতে পারি। শোধারানোর সুযোগ দিয়েছিলাম কিন্তু ছাড়েননি। তার এসব অপকর্মের জন্য এর আগে কয়েকবার চলেও গিয়েছিলাম। কিন্তু তার অনুরোধে আবার ফিরে আসি। আমারও দুর্বলতা ছিলো সন্তানের জন্য।
রিম্মি বলেন, ‘গত তিন-চার বছর ধরে পরিবারের সদস্যদের ধারণা ছিল তার পরিবর্তন আসবে। এখন যা দেখলাম তাতে আমি লজ্জিত ও দুঃখিত। তার এসব কর্মকাণ্ডের খবর প্রকাশিত হওয়ায় আমি অনুভূতিহীন হয়ে পড়েছি।’ স্বামীর বিচার চান কি না- এমন প্রশ্নের জবাব সাহেদের স্ত্রী বলেন, আমি কোনোদিনও চাই নাই সে পার পেয়ে যাক। ওর পরিবারের সবাই বলেছে অপরাধ করলে শাস্তি পাবেই। আমি চাই না ও পার পেয়ে যাক ।
Discussion about this post