নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
জেলার সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুরস্থ রহিম স্টিল মিলে চুল্লির গলিত লোহা ছিটকে পড়ে দগ্ধ হয়ে সুরুজ মিয়া (৩৭) নামের এক শ্রমিক নিহত হয়েছে ।
শনিবার ৯ মার্চ ভোর রাতে উপজেলার কাঁচপুর এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত রহিম গ্রুপের প্রতিষ্ঠান রহিম স্টিল মিলস লিমিটেড এর কারখানায় এ দুর্ঘটনা ঘটলে কাউকেই রহস্যজনক কারণে মিলের ভিতরে প্রবেশ করতে দেয় নাই ষ্টিল মিল কর্তৃপক্ষ ।
এ বিষয়ে সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেটকে বলেন, নিহতের পরিবার কোন মামলায় যেতে চাচ্ছে না । আমরা চাচ্ছি একটি মামলা নিতে । এ লক্ষ্যে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে ।
নিহত সুরুজ মিয়া তিনি ওই কারখানার ক্রেন চালক। তার বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলায় বলে জানায় মিল কর্তৃপক্ষ ।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সকালে সংবাদ সংগ্রহের জন্য ঘটনাস্থলে যাওয়া সাংবাদিক ও নিহতের স্বজনদের কাউকেই কারখানার ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয় নি। নিরাপত্তা রক্ষীরা ভেতরে প্রবেশ কর্তৃপক্ষের নিষেধ জানিয়ে প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়।
রহিম স্টিল মিলের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে মুঠোফোনে জানান, শনিবার ভোর রাত তিনটার দিকে কারখানায় ক্রেন দিয়ে গলিত লোহা বহনকারী পাত্র (লেডেল) আকস্মিকভাবে লিকেজ হয়ে যায়। এসময় বেশ কিছু পরিমাণ উত্তপ্ত গলিত লোহা ছিটকে ক্রেনচালক সুরুজ মিয়ার শরীরে পড়লে তিনি দগ্ধ হন। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। সকালে খবর পেয়ে সোনারগাঁও থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, দুর্ঘটনার সময় কারখানায় কর্মরত সুরুজ মিয়ার আরও দুই ভাই সেখানে কাজ করছিলেন। তারা ঘটনা প্রত্যক্ষভাবে দেখেছেন। সুরুজ মিয়া ছাড়া আর কারো কোন ক্ষতি হয়নি। এ দুর্ঘটনার ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নিহত সুরুজ মিয়ার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে । যে কোন দুর্ঘটনায় কোন শ্রমিক, কর্মচারী বা কর্মকর্তা হতাহত হলে মালিকপক্ষ ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকেন। পাশাপাশি তার পরিবারের স্বজনদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। নিহত সুরুজ মিয়ার ব্যাপারেও সেরকম পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সোনারগাঁ থানার উপ-পরিদর্শক সলিমুল হক জানান, ঘটনাস্থল থেকে নিহত সুরুজ মিয়ার লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে রাখা হয়েছে। গলিত লোহা ছিটকে পড়ে তার পুরো শরীর ঝলসে গেছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের নারায়ণগঞ্জ উপ-সহকারি পরিচালক মামুনুর রশিদ জানান, সকালে রহিম স্টিল মিলে অগ্নি দগ্ধ হয়ে একজন নিহত হওয়ার খবর পেয়ে আদমজী ইপিজেড স্টেশন থেকে দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। তবে সেখানে গিয়ে জানা যায়, অগ্নিকাণ্ড হয় নি। চুল্লি থেকে উত্তপ্ত গলিত লোহার ফুলকি ছিটকে পড়ে ক্রেনচালক নিহত হয়েছেন। আর কেউ হতাহত হয় নি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
অপর একটি সূত্র থেকে জানা যায়, রহিম ষ্টিল কর্তৃপক্ষ নিহতের পরিবারের সাথে টাকার বিনিময়ে ঘটনা ধামাচাপা দিতে চেষ্টা চালাচ্ছে । কখনো থানায় আবার কখনো ষ্টিল মিলের ভিতরে নিহত সুরুজ মিয়ার লাশ রেখেই পরিবারের সাথে দরদাম চালিয়ে যাচ্ছে । শোকে মূহ্যমান পরিবারটি নিশ্চুপ অবস্থাতেই রয়েছে । তারা এই ঘটনায় কোন মন্তব্য করতে পারছেন না ।
এর আগেও ২০১৭ সালের ১৭ জুন বাবুর মিয়া নামের এক শ্রমিক রহিম ষ্টিল মিলে রহস্যজনক কারণে দগ্ধ হয়ে মৃত্যু হলে টাকার বিনিময়ে ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছিলো রহিম ষ্টিল কর্তৃপক্ষ । একই কায়দায় সুরুজ মিয়ার ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে ।
Discussion about this post