স্টাফ রিপোর্টার :
ইয়ার্ণ মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের ব্যানারে পরিচালিত রমরমা জুয়ার আসর থেকে আটক ১৫ জুয়ারীকে জামিন দিয়েছে আদালত । শনিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ফাহমিদা আলমের আদালতে জামিন প্রার্থনা করলে ধার্য্য তারিখ পর্যন্ত শহরের টানবাজার এলাকার সূতা চোর হিসেবে পরিচিত ১৫ জুয়ারীকে জামিন প্রদান করে আদালত।
শহরের জুয়ার হাট হিসেবে পরিচিত বাসষ্ট্যান্ড থেকে বিশেষ পেশার নামধারীদের আস্তানা গুটিয়ে দেবার ক্ষোভ থেকে এবার সদর থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে শাহজাহান ও তাদের দোষররা এমন অভিযানের সাথে থেকে শুক্রবার সন্ধ্যায় ১৫ জনকে আটক করেছে বলে নির্ভরযোগ্য অনেক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
শনিবার ৯ মার্চ সকাল ৯টার পূর্বেই নারায়ণগঞ্জ সদর থানা পুলিশ শহরের ইয়ার্ণ মার্চেন্ট ক্লাব থেকে আটক করা ১৫ জুয়ারীকে আদালতে পাঠানোকালে আটককৃত জুয়ারী লিটন (৩৬) ও আবদুর রহমান (৪২) জানায়, ইয়ার্ণ মার্চেন্টের জুয়ার আসর চলছিলো কয়েক বছর যাবৎ। ইয়ার্ণ মার্চেন্টের সভাপতি সোলায়মান নিজেই ক্লাবের একেকটি কক্ষে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করে জুয়ারীদের কাছে ভাড়া দেয় ৫০/৬০ হাজার টাকায়। আর এই ইয়ার্ণ মার্চেন্টের ম্যানেজার কৃষ্না জুয়ার পুরো সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতো । জুয়ারীদের আটকের পর থেকে থানায় ও আদালতে সার্বক্ষনিক অবস্থান নিয়ে জুয়ারীদের ছাড়াতে নানা তদ্বির করতে দেখা যায় কৃষ্নাকে । কৃষ্নাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সকল অপরাধের তথ্য বেড়িয়ে আসবে । সদর থানা পুলিশের অনেকেই সব সময় ইয়ার্ণ মার্চেন্ট ক্লাবের হোটেল থেকে বিনামূল্যে খাবার সরবরাহ করার কারণে গত শুক্রবার কৃষ্নাকে গ্রেফতার করেও ছেড়ে দেয় বলে জানায় জুয়ারীরা ।
৫/৬টি রুমের মধ্যে যে কোন ব্যক্তি জুয়া খেলতে গেলেই এন্টি ফি দিতে হয় ৫শ টাকা। এরপর বিদেশী স্টাইেলে জুয়ার টাকা জমা রেখে টোকেন দিয়ে জুয়া চলে আসছিলো। কিছু দিনে আগে বাসষ্ট্যান্ডে শাহজাহানের জুয়া বন্ধ হলে এখানে অনেকেই এখানে আসে জুয়া খেলতে। তাই গত শুক্রবার রাতে শাহজাহান ও তার বিশেষ পেশার এক ব্যক্তি নিজে উপস্থিত হয়ে পুলিশের সাথে কন্ট্রাক্ট করে ইয়ার্ন মার্চেন্টে হানা দেয়।
শাহজাহান ও তাদের দোষরদের কি লাভ এই আস্তানায় হানা দিয়ে এমন প্রশ্নে লিটন আরো জানায়, আমি বাসষ্ট্যান্ডের জুয়ার আস্তানা থেকেও গ্রেফতার হয়েছিলাম। এমন অনেকেই জুয়ার নেশায় বিভিন্ন আস্তানায় চলে যায় । সম্প্রতি জানতে পারি শাহজাহান ও তার শেল্টারদাতারা আবার শহরের অজ্ঞাত স্থানে ফ্লাট ভাড়া নিয়েছে । আমরা যারা টানবাজারের সোলায়মান সাবের ইয়ার্ণ মার্চেন্টের জুয়ার আস্তানায় না আসি এবং শাহজাহানের আস্তানায় জুয়া খেলতে যাই এই জন্যই এইভাবে আবার আমাদের আটক করানো হয়েছে । কারণ বিগত দিনে এই স্ট্যান্ডের আস্তানা থেকে প্রতিমাসে ২ লাখ টাকা দিতো থানায় । যার কারণে বছরের পর বছর জুড়ে কোন বাধা ছাড়াই জুয়া চলে আসছিলো। আর ইয়ার্ণ মার্চেন্টের চোরাই সূতার বিশাল টাকার একটি অংশ থানায় দেয় বলে এখানে কেউ কোন ডিস্টার্ব করে না বলেই এই আসরটি জমে উঠেছিলো।বাসষ্ট্যান্ড, টারবাজার ছাড়াও এখনো শহরের কালীরবাজার স্বর্ণ পট্টি, বঙ্গবন্ধু সড়কের কালচারাল ক্লাব, নয়ামাটিসহ অনেক এলাকায় এম রমরমা জুয়া চালাচ্ছে শহরের প্রভাবশালী অনেকেই ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শহরের টানবাাজর এলাকার অনেক সাধারণ ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিশাল ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত এম সোলায়মানের পত্যাক্ষ এবং পরোক্ষ মদদে বিদেশী স্টাইলে টোকেন নিয়ে ইয়ার্ণ মার্চেন্টের ক্লাবে রমরমা জুয়ার আসর চলে আসছিলো । এই আস্তানায় বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি মাদারীপুর জেলার সূতা চোর হিসেবে পরিচিত চক্রের অনেকেই ধরা পরে । এই চোর চক্রটিকেও নানাভাবে শেল্টার দিয়ে আসছিলো এম সোলায়মান ও ইয়ার্ণ মর্চেন্টের কর্মকর্তারা।
জুয়ার আস্তানায় হানা দেয়ার বিসয়ে নারায়ণঞ্জ সদর থানার ইন্সপেক্টর অপারেশন জয়নাল আবেদীন বলেন, এ বিষয়ে অনেক অভিযোগ থাকলেও ইয়ার্ণ মার্চেন্টের সভাপতি বারবার তদ্বির করতো । এখনো তদ্বির অব্যাহত রয়েছে ।
আদালত সূত্র থেকে আরো জানা যায়, জয়ার আসর থেকে গ্রেফতারকৃত (১) মো: হাজী সাইদের (৩৭) পিতার নাম হাজী সোহরাব, স্থায়ী ঠিকানা বাহাদুর পুর শিবচর, মাদারীপুর, অস্থায়ী ইসদাইর, বুড়ির দোকান, ফতুল্লা, (২) মোঃ সুমন (২৬) পিতা আবদুর রহমান, গোয়ালাকান্দা, শিবচর, এ/পি টানবাজার, নারায়ণগঞ্জ (৩) নূরুল আমিন (৩৯) পিতা হাজী আঃ রহমান, বেংচরা, হাজীপুর, শিবচর, এ/পি সাহাপাড়া নারায়ণগঞ্জ, (৪) মোঃ লিটন (৩৬) পিতা সামছুল হক, তল্লা ফতুল্লা, (৫) খবির হোসেন (৫৪) পিতা আবঃ মান্নান, বাহাদুরপুর, শিবচর এ/পি বাংলা বাজার, ফতুল্লা (৬) মোঃ আবুল হোসেন (৪৫) পিতা খলিল মৃধা, সাং খুলুখন্ড, নড়িয়া এ/পি ডনচেম্বার, নারায়ণগঞ্জ, (৭) আনোয়ার হোসেন (৩০) পিতা আবদুর রহমান, সোনাপুর, চান্দিনা কুমিল্লা (৮) মজিবুর রহমান বাচ্চু (৩৮) পিতা আবুল ফকির ভেদুরিয়া, বরিশাল, (৯) জয় (১৮) পিতা শাহজাহান, কাঠ হুগলি, নড়িয়া (১০) রানা হোসেন ( ৩০) পিতা মারফত আলী, পাতলা ঝিনাইদহ এ/পি টানবাজার নারায়ণগঞ্জ, (১১) শামীম (৫৩) নাজির উদ্দিন, নাবীগঞ্জ , বন্দর, নারায়ণগঞ্জ, (১২) সুব্রত ওরফে শুভ সাহা (৪০) পিতা অমূল্য সাহা, ভোলাচং, ব্রক্ষ্মনবাড়িয়া এপি আমলাপাড়া, নারায়ণগঞ্জ, (১৩) রহমত উল্লাহ (৪৭) নুরু উদ্দিন, নবীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, (১৪) মেহেদী হাসান (৩৫) মোকছেদ মিয়া, নবীনগর, ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া এ/পি ইসদাইর, ফতুল্লা এবং (১৫) আবদুর রহমান (৪২) পিতা আবদুর রশিদ, বাহাদুর পুর, শিবচর এ/পি মাসদাইর তালা ফ্যাক্টরী, ফতুল্লাকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানোর পর ইয়ার্ণ মার্চেন্টের সভাপতিসহ অনেকেই ফোন করে আটককৃতদের জামিনে ছাড়াতে তদ্বির করেন। (এমন বক্তব্যের রেকর্ড সংরক্ষিত রয়েছে) ।
Discussion about this post