বিশেষ প্রতিনিধি :
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বুড়িগঙ্গা নদীতে নিখোঁজের পাঁচদিন পর বাংলা ক্যাট কোম্পানির প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জিসানের পেট কাটা লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস।
শুক্রবার বেলা এগারোটায় মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান এলাকায় ধলেশ্বরী নদী থেকে লাশটি উদ্ধার করে ডুবুরি দল।
এ ঘটনায় এখনো নিখোঁজ রয়েছেন জিসানের সহকর্মী প্রকৌশলী লিখন সরকার। তবে এ ঘটনাকে হত্যাকান্ড বলে দাবি করে সুষ্ঠু তদন্ত চেয়েছেন নিহত জিসানের স্বজনরা।
ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার বিসিক স্টেশনের সিনিয়র অফিসার মো: কাজল মিয়া জানান, নিখোঁজ দুই প্রকৌশলীর সন্ধানে শুক্রবার সকাল থেকেই বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে তল্লাশি অভিযান শুরু করে ডুবুরি দল। এক পর্যায়ে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান এলাকায় ধলেশ্বরী নদী থেকে ডুবন্ত অবস্থায় জিসানের মরদহে উদ্ধার করা হয়। খবর পেয়ে স্বজনরা গিয়ে জিসানের লাশ শনাক্ত করেন।
তবে জিসানের স্বজনদের দাবি, নদীতে ডুবে তার মৃত্যু হয়নি। জিসানকে হত্যা করা হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের ক্ষত চিহ্ন পাওয়া গেছে।
জিসানের বড় ভাই মো: শোয়েব আহমেদ বলেন, আমার ভাইয়ের আশ আমরা অক্ষত পাই নি। তার মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়েছে, পেট কাটা রয়েছে এবং সেখান দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।
জিসানের ফুপাতো ভাই মো: সম্রাট বলেন, আমার ভাইয়ের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। অবশ্যই কেউ তাকে হত্যা করেছে। কারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে প্রশাসন তাদের যেন খুঁজে বরে করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করে।
এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে জিসানের বড় ভাই মো: শোয়েব আহমেদ আরো বলেন, আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রয়োজনে আমরা মামলা করব। যারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে তাদের দ্রুত গ্রেফতার চাই।
এদিকে জিসানের লাশ ময়না তদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্তের পর সেখান থেকে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন ফতুল্লা থানার ওসি মো: আসলাম হোসেন।
একই সাথে এখনো নিখোঁজ থাকা লিখন সরকারের সন্ধানে ফায়ার সার্ভিসের তল্লাশি অভিযান চলছে জানিয়ে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের নারায়লগঞ্জ জেলা উপ-পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, ঘটনার দুইদিন পর খবর পেয়ে আমরা গত তিনদিন যাবত নিখোঁজদের সন্ধানে তল্লাশি চালিয়েছে। একজনের লাশ ইতিমধ্যে উদ্ধার করেছি। নিখোঁজ অপরজনকেও আমরা উদ্ধার না করা পর্যন্ত তল্লাশি অভিযান অব্যাহত রাখব।
গত ৫ জানুয়ারী দিনগত রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার রাজাপুর এলাকায় বুড়িগঙ্গা এন্টারপ্রাইজের ভেকু মেরামতের কাজ শেষ করে ফেরার পথে নিখোঁজ হন বাংলা ক্যাট কোম্পানির দুই মেকানিক্যাল ইনিঞ্জনিয়ার মাহফুজুর রহমান জিসান ও লিখন সরকার। এ ঘটনায় জিসানের স্ত্রী রাকিয়া সুলতানা রাজধানীর আশুলিয়া থানায় বাদি হয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
তবে জিসানের পরিবার শুরু থেকেই দাবি করে আসছেন, এ ঘটনার সাথে ফতুল্লার রাজাপুর এলাকার বুড়িগঙ্গা এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারি সজীব ও তার কর্মচারী পায়েলকে দায়ী করে আসছেন। তাদের দাবি, সজীব ও পায়েল ঘটনার বিষয়ে সবকিছু জানেন। কেননা জিসান ও লিখন নিখোঁজের বিষয়টি সজীব গোপন রেখেছেন এবং তার সাথে যোগাযোগ করলে বিভিন্ন সময়ে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করেছেন। এছাড়া সজীবের বড় ভাই ওই এলাকার ইউপি মেম্বার। সেই প্রভাবে সজীব বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তাদের দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনার রহস্য বের হয়ে আসবে বলে মনে করছেন নিহত জিসানের স্বজনরা।
জিসানের ফুপাতো ভাই সম্রাট জানান, জিসান ও লিখন দুজনই পরিবার নিয়ে রাজধানীর আশুলিয়া এলাকায় একই মালিকের বাড়িতে ভাড়া বাসায় থাকতেন। জিসানের তিন বছরের ও তিন মাসের দুইটি পুত্র সন্তান রয়েছে। নিখোঁজের ঘটনার পর থেকে জিসানের স্ত্রী রাকিয়া সুলতানা শোকে পাথর হয়ে গেছেন। পির্তৃহারা এই দুই শিশু সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন স্বজনরা।
Discussion about this post