চট্টগ্রামে উড়োজাহাজ ছিনতাইচেষ্টার রহস্য দুই মাসেও বেরিয়ে আসেনি। কেন, কী উদ্দেশ্যে পলাশ আহমেদ নামে যাত্রী সেজে উড়োজাহাজে ওঠা এক যুবক এ ঘটনা ঘটিয়েছেন, তদন্তে এখনো তা অজানা। ওই যুবকের পেছনে কোনো গোষ্ঠী কিংবা ব্যক্তি রয়েছে কি না, তা জানার চেষ্টা করছে তদন্তকারী সংস্থা।
সংশ্লিষ্ট পাইলট ও ক্রুরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, উড়োজাহাজে ওঠার পর স্ত্রীর সঙ্গে ঝামেলার কথা বলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন যাত্রী পলাশ।
শুরু থেকে মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট চট্টগ্রাম। তদন্ত কর্মকর্তা এই ইউনিটের চট্টগ্রামের পরিদর্শক রাজেস বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, কেন, কী উদ্দেশ্য ২৫ বছরের পলাশ এ কাজ করেছেন, তা তদন্ত করা হচ্ছে। পলাশের ব্যবহৃত মোবাইল, ফেসবুক আইডি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সিআইডিতে দেওয়া হয়েছে। এখনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ‘ময়ূরপঙ্খী’ উড়োজাহাজটি (বিজি-১৪৭ ফ্লাইট) ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টা ১৩ মিনিটে ছেড়ে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঢাকা থেকে ওড়ার ১৫ মিনিট পর উড়োজাহাজটি ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে। তখনই পাইলট বিষয়টি চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণকক্ষকে জানান। এরপর কড়া নিরাপত্তায় বিমানটি ৫টা ৪১ মিনিটে চট্টগ্রামে অবতরণ করে। সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের জরুরি দরজা দিয়ে বের করে আনা হয়। এর প্রায় দুই ঘণ্টা পর আট মিনিটের কমান্ডো অভিযানে ওই যুবক নিহত হন এবং ছিনতাইচেষ্টার অবসান হয়।
এ ঘটনায় পরদিন রাতে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পরিবহন কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের প্রযুক্তি সহকারী দেবব্রত সরকার বাদী হয়ে পতেঙ্গা থানায় মামলা করেন। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা এ মামলায় পলাশ আহমদের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট চট্টগ্রাম তদন্তে নেমে পাইলট, কেবিন ক্রুসহ ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাঁরা জানান, উড়োজাহাজটি ওড়ার কিছু সময় পর পলাশ আসন পরিবর্তন করলে কেবিন ক্রু নির্ধারিত আসনে বসতে বলেন। এতে খেপে যান তিনি। একপর্যায়ে ককপিটের দরজায় লাথি মারতে থাকেন পলাশ। ওই সময় তাঁর হাতে পিস্তল ও বোমাসদৃশ বস্তু দেখা যায়।
গত ১৩ মার্চ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ব্যালিস্টিক পরীক্ষায় এই ছিনতাইচেষ্টায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি ‘খেলনা পিস্তল’ বলে প্রতিবেদন দেয়।
তদন্ত কর্মকর্তা রাজেস বড়ুয়া বলেন, তদন্ত অব্যাহত আছে। বিমানটির পাইলটসহ ২৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই চলছে।
তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পলাশ উড়োজাহাজে উঠে বোমাসদৃশ বস্তু ও খেলনা পিস্তল নিয়ে কেন এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন, তা জানেন না সাবেক স্ত্রী সিমলা। গতকাল বিকেলে মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পলাশের আচরণ ভালো না লাগায় তাঁকে তালাক দেওয়া হয়।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পলাশের সঙ্গে কোনো জঙ্গি কিংবা গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল কি না, তা জানা নেই।’
মামলাটির তদারককারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম ইউনিট চট্টগ্রামের প্রধান, উপকমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে। তবে এখনো জানা যায়নি কী উদ্দেশ্য পলাশ এই কাজ করেছেন। মামলাটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিছুদিন পরপর মামলার অগ্রগতি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
এদিকে খোজ নিয়ে জানা গেছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় দুধঘাটার বাবার নাম পিয়ার জাহানের পরিবার ছাড়া সকলেই এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ভুলে যেতে বসেছে । কেউ আর পলাশ আহমেদের কোন খজ খবর রাখে না ।
প্রাপ্ত তথ্য মতে এলাকার সোনারগাঁ উপজেলার দুধঘাটার অনেকের ভাষ্য জানা যায়, বাবার একমাত্র ছেলে ছিলো পলাশ আহমেদ । স্থানীয় তাহেরপুর মাদরাসা থেকে ২০১১ সালে দাখিল পাশ করার পর মাদরাসার নিয়ম নীতি রহস্যজনক কারণে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে শর্ট ফিল্মের সাথে জড়িয়ে পড়ে। এ থেকেই অনেক শর্ট ফিল্ম করলেও সাফল্যের মুখ দেখেনটি পলাশ । প্রকৃত নাম পলাশ হলেও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নাম ব্যবহার করে এলাকায় নায়ক নায়িকাদের নিয়ে বাড়ি আসতেন । এতে পরিবারে লোকজন পলাশ আহমেদের উপর প্রচণ্ডভাবে রাগান্বিত ছিলো । গত শনিবার রাতে পলাশ নিজের মোবাইল ফেলে বাড়ির সিমকার্ড ও মোবাইল নিয়ে দুবাই চলে যাচ্ছে বলে বেড়িয়ে যান । এরপরই ২৪ ফেব্রুয়ারী বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালায় পলাশ আহমেদ ।
Discussion about this post