নারায়ণগঞ্জ জেলায় অনেক তৃণমূল নেতাকর্মী সারা জীবন আওয়ামীলীগের জন্য নিজেদের সকল কিছু উৎসর্গ করে দিলেও কোন সময়ই দলের কাছ থেকে সুবিদা আদায় করতে হবে এমনটি চিন্তাও করেন নাই । এমন আওয়ামীলীগের নিবেদীত নেতাকর্মীরা সাম্প্রতিক সময়ে সানাউল্লাহ জমাদ্দারদের মতো বিএনপির সন্ত্রাসীরা যখন আওয়ামীলীগের নেতাদেরকে নানাভাবে ম্যানেজ করে প্রভাব বিস্তারসহ নানা অপকর্ম করে তখন কট্টর আওয়ামীলীগের কর্মীরা মনকষ্টে ভোগেন । এমন সৎ কর্মীর সংখ্যা অসংখ্য । যার আওয়ামীলীগের সুণাম রক্ষায় কাজ করলেও সুবিধাভোগি অনেক নেতা বিএনপি জামায়াতের অনেককেই দলে ঠাঁই দিয়ে অপকর্ম করার সুযোগ করে দিয়েছেন।
জিকে শামীম থেকে শুরু করে শরীয়তপুরের সখিপুর থানাধীন কৃষ্ণপুর গ্রামের মালেক জমাদ্দারের ছেলে সানাউল্লাহ জমাদ্দারদের মতো অপরাধীদের ধরতে এবার মাঠে নামার জন্য শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশকে সাধুবাদ জানাচ্ছে সাচ্চা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের সকলেই ।
স্টাফ রিপোর্টার :
শরীয়তপুরের সখিপুর থানাধীন কৃষ্ণপুর গ্রামের মালেক জমাদ্দারের ছেলে সানাউল্লাহ জমাদ্দার। নিজ এলাকায় বিএনপি ক্যাডার হিসেবে পরিচিত তিনি। এমনকি ২০০৫ সালে সখিপুর থানা এলাকায় স্থানীয় আওয়ামীলীগ কর্মী আবুল দেওয়ান (৫৫) নামে এক ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে নির্মম ভাবে কুপিয়ে হত্যা করে এই সানাউল্লাহ জমাদ্দার। এই ঘটনায় সখিপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং- ০২। তারিখ- ২০/০৯/২০০৫ইং।
এমন নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটিয়ে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানাধীন কুতুবপুর ইউনিয়নের নয়ামাটি মুসলিমপাড়া এলাকায় পাড়ি জমান তিনি। পরিস্থিতি বুঝে কুতুবপুরের কতিপয় আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে আতাঁত করেন সানাউল্লাহ । এমনকি বিএনপির এই ক্যাডার আওয়ামীলীগের অনুপ্রবেশের লক্ষ্যে সদস্য ফরমও সংগ্রহ করেছেন। যদিও এই অনুপ্রবেশ কারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামীলীগের নীতি নির্ধারকগণ।
এদিকে দুর্ধর্ষ এই বিএনপি ক্যাডার আওয়ামীলীগের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০টাকা কেজী দরের চাউলের ডিলারও বনে গেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, এক শ্রেনীর সুবিধা ভোগি নেতাদের অসৎ উপায়ে ম্যানেজ করে এই ডিলারশীপ নেন বিএনপি ক্যাডার সানাউল্লাহ।
সূত্র জানায়, আওয়ামীলীগ সরকারের অধীনে দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি (ওএমএস) এর আওতায় ১০ টাকা কেজী দরে চাউল বিক্রয় করা হচ্ছে। আর আওয়ামীলীগের সাচ্চা নেতা-কর্মীরাই পেয়ে থাকেন এই চাউলের ডিলারশীপ। কিন্তু কুতুবপুর ইউনিয়নে বহিরাগত এক বিএনপি ক্যাডার এই ডিলারশীপ পাওয়ায় স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এই নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে কুতুবপুরের পাগলা, নয়ামাটি ও মুসলিমপাড়া এলাকায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় আওয়ামীলীগের এক নেতা গণমাধ্যমকে বলেন, জানতে পেড়েছি সানাউল্লাহ জমাদ্দার একজন বিএনপির ক্যাডার। তার গ্রামের বাড়ীতে আবুল দেওয়ান নামে এক আওয়ামীলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। বহিরাগত এই বিএনপির ক্যাডার সানাউল্লাহ জমাদ্দার এখানে আসার পর কিছু সুবিধাভোগী আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে আঁতাত করেন এবং সক্রিয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের বঞ্চিত করে একের পর এক ফায়দা লুটে নিচ্ছেন। এই চালের ডিলার আওয়ামীলীগের কর্মীদের পাওয়ার কথা থাকলেও সানাউল্লাহ জমাদ্দার সেই ডিলার নিয়ে ব্যবসা করছেন। এটা সত্যিই বেমানান।
সূত্র আরো জানায়, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় আসার পর আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে সানাউল্লাহ জমাদ্দার। দল ক্ষমতায় থাকায় তার নির্যাতনে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা হয়েছেন দেশান্তরী। ২০০৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টার দিকে সখিপুর থানাধীন কৃষ্ণপুর গ্রামে নিজ বাড়ীতেই তার হাতে হত্যার শিকার হয় আওয়ামীলীগের কর্মী আবুল দেওয়ান। এই ঘটনায় সখিপুর থানায় দায়েরকৃত মামলায় অন্যতম আসামী করা হয় সানাউল্লাহ জমাদ্দারকে। ওই বিএনপি ক্যাডারের বাবা মালেক জমাদ্দার সহ তার ৬ ভাইকেই আসামী করা হয়। মামলাটি আজও চলমান।
আওয়ামীলীগ কর্মী আবুল দেওয়ান হত্যা মামলার বিচার শেষ না হতেই সুবিধা ভোগের আশায় আওয়ামীলীগেই যোগ দিচ্ছেন বিএনপির এই দুর্ধর্ষ ক্যাডার। ইতিমধ্যেই নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন কুতুবপুর ইউনিয়ন থেকে আওয়ামীলীগের সদস্য ফরম সংগ্রহ করেছেন তিনি। এতে ফুসে উঠেছেন স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা । ২০০৫ সালে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ড ঘটিয়ে সখিপুরে প্রকাশ্যেই ঘুড়ে বেড়ায় সানাউল্লাহ। ভয়ে কেউ কিছু বলারও সাহস পায়নি তখন। তবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গা ঢাকা দিয়েছে এই খুনি। পাড়ি জমিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন কুতুবপুর ইউনিয়নের নয়ামাটি মুসলিমপাড়া এলাকায়।
এখানকার একটি সুবিধা ভোগী মহলকে অসৎ উপায়ে ম্যানেজ করে নাম লেখাতে চাচ্ছেন আওয়ামীলীগে। অথচ, দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অনুপ্রবেশ নিয়ে সতর্ক করছেন বারংবার। ২০১০ সালের পর দলে অনুপ্রবেশকারীদের সদস্য করা হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও তৃণমূলের একাধিক নেতা এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সানাউল্লাহ জমাদ্দার একজন কট্টোর বিএনপি। সে শরীয়তপুরের সখিপুর থানাধীন কৃষ্ণপুর গ্রামে আওয়ামীলীগ কর্মী আবুল দেওয়ানকে প্রকাশ্যে নির্মম ভাবে কুপিয়ে হত্যা করে । জানতে পেড়েছি, তার নির্যাতনে ওই এলাকার আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা ছিলো কোনঠাসা হয়ে। অনেকেই ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের বাড়ীতে স্বশস্ত্র হামলা চালিয়ে ব্যাপক লুটপাট চালিয়েছেন তিনি। আর সেই বিএনপি ক্যাডার এখন সুবিধা ভোগের আশায় আওয়ামীলীগের সদস্য হতে দৌড়ঝাপ করছেন। আওয়ামীলীগ কর্মী হত্যাকারী এই বিএনপি ক্যাডারকে দলে অন্তর্ভূক্ত করা হলে কুতুবপুরের স্থানীয় আওয়ামীলীগ তা কখনই মেনে নেবে না বলেও হোসিয়ারী উচ্চারণ করেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
এ প্রসঙ্গে কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানান, কুতুবপুর ইউনিয়নের ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য লিষ্ট পেয়েছি । ৪ ও ৬নং ওয়ার্ডেরও আংশিক হাতে এসেছে। এগুলো যাচাই-বাছই চলছে। প্রত্যেকের বিষয়ে তদন্ত করা হবে। আমাদের ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি,-সাধারণ সম্পাদকদ্বয় এই বিষয়ে আমাদের কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। কোন সুবিধা ভোগিকে দলের সদস্য করা হবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন যে, ২০১০ সালের পর যারা আওয়ামীলীগে এসেছেন, তাদেরকে সদস্যপদ দেয়া হবে না। তাই অভিযুক্ত সানাউল্লাহ জমাদ্দারকেও আওয়ামীলীগের সদস্যপদে রাখার প্রশ্নই উঠে না।
Discussion about this post