একদিকে চলছে চাঞ্চল্যকর সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলার বিচার কাজ । অপরদিকে এই খুনের দায়ে দীর্ঘদিন পর আটক জাকির খানের হাতকড়া পরা দাঁত বের করা হাসি। এই মামলার অপর দূর্ধর্ষ আসামী জঙ্গল ওরফে জঙ্গইল্লা এখন রাস্তার টোকাই। ছোট বাচ্চু, বন্দুক শাহিন আর রুবেল পরপাড়ে।
আর শীর্ষ সন্ত্রাসী জাকির খানের আদেশ পালন করতো ভৃত্যে মতো, যে জঙ্গল ওরফে জঙ্গইল্লা ধরাকে সরাজ্ঞান করতো সেই অপরাধী জঙ্গল ওরফে জঙ্গইল্লা প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে টোকাই চুরি ছিনতাই করে চর থাপ্পর হজম করে দিন পাড়ি দিচ্ছে সড়কে ফুটপাতে। একদিকে সাব্বির আলম খন্দাকারের শোক র্যালী অপরদিকে এই নগরীর কালীরবাজার চারার গোপ এলাকায়আজ শনিবার দুপুরেও দেখা গেছে খেজুরের প্যাকেট চুরি করে বিক্রি করছে দেড়শো টাকায়।
এমন দৃশ্য দেখে অনেকেই বলেছেন, “জাকির খানের কথা মতো জঙ্গল ওরফে জঙ্গইল্লা সকল অপরাধ করতো সেই পতিতাপল্লীর জাকির খান এখন কোথায় আর এই জঙ্গইল্লা এখন কি করছে ? এটি ই হলো প্রকৃতির বিচার !“
নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী নেতা ও বিকেএমইএ`র সাবেক সহ-সভাপতি সাব্বির আলম খন্দকারের ২০ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সমাবেশ, শোক র্যালি ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সমাবেশ থেকে খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাস ও মাদক মুক্ত ও ১৮ ফেব্রুয়ারিকে সন্ত্রাস ও মাদক বিরোধী দিবস ঘোষনার দাবী জানান বক্তারা।
শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০ টায় `শহীদ সাব্বির আলম খন্দকার ফাউন্ডেশন` এর আয়োজনে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে এই সমাবেশ হয়। সমাবেশ শেষে শোক র্যালি বের করা হয়। শোক র্যালি নিয়ে মাসদাইর সিটি কবরাস্থানে গিয়ে শাব্বির আলম খন্দকারের কবর জিয়ারত, দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
সাব্বির আলম খন্দকারের ভাই অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দাকার বলেন, ‘আমার ভাইকে কোন ব্যক্তিগত কারণে হত্যা করা হয়নি। শুধু মাত্র সমাজসেবায় মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমার ভাই আইনশৃঙ্খলার মিটিংয়ে সন্ত্রাসী চাঁদাবাজীদের নাম উল্লেখ্য করে এবং তারা কে কত টাকা পায় এসব বলার কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আজও আমার ভাইয়ের হত্যা বিচার পাইনি। শুধুমাত্র টাকার কাছে হেরে গেছি। হত্যাকারীরা টাকা দিয়ে ত্রুটিপূর্ণ চার্জশীট করিয়েছে। তাই আজও বিচার পাইনি। খুনিরা আবারো আমাদের খুন করার হুমকি দিচ্ছে।
১৮ই ফেব্রুয়ারিকে সন্ত্রাস ও মাদক বিরোধী দিবস ঘোষনার দাবী করে বক্তারা বলেন, আজ যেই মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্বে সরকার সহ দেশবাসী কথা বলছে, সেই মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শহীদ শাব্বির আলম খন্দকার নব্বইয়ের দশক থেকেই সোচ্চার ছিলেন। তিনি মাঠ পর্যায়ে মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্বে প্রতিরোধ গড়ে তোলায় মাদক ও সন্ত্রাসের গডফাদারদের চক্ষুসূলে পরিনত হন। সমাজের ও দেশের চিন্তা করেই একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হয়েও অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েও তার হত্যার বিচার পাইনি তার পরিবার।
সাব্বির আলম খন্দকার বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বা বিকেএমইএ`র সহ- সভাপতি, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক, নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি ছিলেন। ২০০২ সালের ২২ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাসে অনুষ্ঠিত জেলার ৩২ টি ব্যবসায়ী সংগঠনের সাথে সেনাবাহিনীর মত বিনিময় সভায় শহীদ সাব্বির আলম খন্দকার “আমার জানাযায় অংশ গ্রহন করার আহবান জানিয়ে বক্তব্য শুরু করছি” বলে নারায়ণগঞ্জের সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের নাম, ঠিকানা ও তাদের গডফাদারদের নাম প্রকাশ করেন। পরে ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সকালে মাসদাইরে সাব্বির আলম খন্দকারকে গুলি করে হত্যা করে অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীরা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সাব্বির আলমের ছোটভাই মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, তার বড় মেয়ে খন্দকার ফাতেমা-তুজ-জোহরা সবনম, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নুরুদ্দিন, জামাল উদ্দিন কালু, হাজী নুরুদ্দিন, আব্দুস সবুর খান সেন্টু, আওলাদ হোসেন, নজরুল ইসলাম টিটু, অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ ভাসানী ভূঁইয়া, অ্যাডভোকেট বোরহান উদ্দিন, অ্যাডভোকেট শরীফুল ইসলাম শিপলু, অ্যাডভোকেট নরুল আমিন মাসুম, অ্যাডভোকেট আলী হোসাইন, রানা মুজিব, রশিদুর রহমান রুশো ও বজলুর রহমান সহ বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন।
প্রসঙ্গত, ২০০২ সালে অপারেশন ক্লিনহার্ট চলাকালীন সময়ে ওই বছরের ২২ অক্টোবর প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এক সভায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন সাব্বির আলম খন্দকার। ওই বক্তব্যে তিনি নারায়ণগঞ্জের সন্ত্রাসী, গডফাডার ও মাদক ব্যবসায়ীদের নাম প্রকাশ করেছিলেন। সেই সাথে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছিলেন। আর ওই বক্তব্য প্রদানের কয়েক মাস পর ২০১৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দুর্বৃত্তদের গুলিতে তিনি নিহত হন। কিন্তু এই হত্যাকান্ডের ২০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত সেই হত্যাকান্ডের বিচারকাজ শেষ হয়নি।
Discussion about this post