এরই মধ্যে এমন কুখ্যাত অপরাধী নানা অপকর্মের হোতা অনলাইন ক্যাসিনোর ডন মো. সেলিম প্রধানের জামিনের বিষয়ে কোন কোন সহযোগিরা নানাভাবে তদ্বির করেছেন তার ফিরিস্ত উদঘাটন করতে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা গোপনে শুরু করেছে তদন্ত । আর এই সেলিম প্রধানের পক্ষে রূপগঞ্জ থানা বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা এবং বন্দরের একজন ক্যাসিনোকান্ডের হোতা নিয়মিত অত্যান্ত কৌশলে ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণের কিছু দালালদের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে জামিনের বিষয়ে । যে চক্রটি সেলিম প্রধানের থাইল্যান্ডের কারবার দেখাশুনা করতের তৎপর রয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে । যে কোন মূল্যে সেলিম প্রধানকে জামিন করাতে সায়েম এবং অন্তর নামের দুই অপরাধীর বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহ করতে মাঠে রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা।
এতো অপরাধের বিশাল ফিরিস্তির পর অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের মামলায় অনলাইন ক্যাসিনোর ‘গডফাদার’ মো. সেলিম প্রধানকে বিশেষ জজ আদালতের দেওয়া জামিন বাতিল করেছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ থেকে অন্যত্র বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বদলিকৃত আদালতের বিচারককে রেকর্ড পাওয়ার চার মাসের মধ্যে মামলার বিচার শেষ করতে বলা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত ডিভিশন মামলার শুনানি শেষে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এ রায় দেন।
এদিকে সেলিম প্রধানকে জামিন প্রদানকারী ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান হাইকোর্টে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয়। এর পরেও যদি জামিন প্রদান নিয়ে ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকলে ক্ষমা চাই। উচ্চ আদালত যেভাবে নির্দেশনা দেবে ভবিষ্যতে সেভাবেই মামলা পরিচালনা করব। বিশেষ জজ আদালতের বিচারকের এই ব্যাখ্যা গ্রহণ করেছে হাইকোর্ট । পাশাপাশি সেলিম প্রধানের জামিন বাতিল করে দিয়েছে আদালত। হাইকোর্টে দুদকের পক্ষে খুরশীদ আলম খান, রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক শুনানি করেন।
গত ৩১ জানুয়ারি দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল ও ফাতেমা খানম নীলুর অভিযোগের প্রেক্ষিতে জজ আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামানের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিলো হাইকোর্ট। কোন যুক্তিতে বিচারের মাঝপথে এসে এরকম দুর্ধর্ষ একজন আসামিকে জামিন দেওয়া হয়েছে সেজন্য ব্যাখ্যা তলব করে আদালত।
গত ৩১ জানুয়ারি দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল ও ফাতেমা খানম নীলুর অভিযোগের প্রেক্ষিতে জজ আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামানের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিলো হাইকোর্ট। কোন যুক্তিতে বিচারের মাঝপথে এসে এরকম দুর্ধর্ষ একজন আসামিকে জামিন দেওয়া হয়েছে সেজন্য ব্যাখ্যা তলব করে আদালত।
প্রসঙ্গত, প্রায় ৫৮ কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ২২ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। ওই মামলায় ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর তাকে গ্রেফতার করা হয়। মামলায় বিচারের শুরু থেকে একাধিকবার জামিন চেয়েও পাননি জামিন। কিন্তু গত ১৩ ডিসেম্বর সেলিমকে জামিন প্রদান করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান। যখন আসামিকে জামিন দেওয়া হয় তখন ওই মামলার ২৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত হয়েছে। পাশাপাশি দুই সপ্তাহ পূর্বে বিশেষ জজ আদালতের বিচারক জামিন আবেদন খারিজ করে দেন।
যেখানে তিনি বলেছেন যে, জামিন পেলে আসামি পলাতক হবেন । সেখানে দুই সপ্তাহ পর কিভাবে এই দুর্ধর্ষ আসামির জামিন মঞ্জুর করেন সে নিয়ে হাইকোর্টে অভিযোগ করে দুদক। যার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট সেলিম প্রধানের জামিন বাতিল প্রশ্নে রুল জারি করে।
২০১৯ সালের ০৩ অক্টোবর দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত হয় অনলাইন ক্যাসিনোর ‘গডফাদার’ মো. সেলিম প্রধানের নান তথ্য । কে এই সেলিম প্রধান এমন হাজোরো প্রশ্নের পর অনুসন্ধ্যানে বেড়িয়ে আসে অজানা অনেক তথ্য । যা নিম্নে তুলে ধরা হলো :
জাপান-বাংলাদেশ প্রেসে ছিল ‘বালাখানা’ রূপগঞ্জের সেলিমই এখন সেলিম প্রধান
রূপগঞ্জের গাউছিয়া থেকে বামে মোড় নিয়ে কিছুদূর গেলেই মর্তুজাবাদ এলাকা। প্রায় ২৬ বছর আগে এ এলাকার জরাজীর্ণ ‘চাঁন মিয়া ও স্ত্রী সফুরা খাতুন মঞ্জিল’।
এলাকাবাসীর কাছে অবশ্য এক যুগ আগেও সেলিম প্রধানের পরিচয় চাঁন মিয়ার ছেলে সেলিম মিয়া। কয়েকশ’ কোটি টাকার মালিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেলিম মিয়া হয়ে যান সেলিম প্রধান।
তবে বিশাল বিত্তবৈভব আর রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাবে সেলিম প্রধান ও তার পরিবারের ব্যাপারে এলাকার মানুষ কথা বলতে এখনও ভয় পান।
এদিকে পৈতৃক বাড়ি এমন জরাজীর্ণ থাকলেও গাউছিয়া থেকে অল্প দূরেই ভুলতা ফ্লাইওভারের শেষ মাথায় সাওঘাট এলাকায় সেলিম প্রধানের সেই আলোচিত ‘জাপান বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপারস’ নামের বহুতল প্রতিষ্ঠান।
যেখানে ছাপানো হয় বাংলাদেশের সব ব্যাংকের চেক বই, এফডিআরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দলিলাদি।
সরেজমিন রূপগঞ্জের মর্তুজাবাদ এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেলিম প্রধান এক সময় এলাকায় সমিতি শুরু করেছিলেন।
ওই সমিতির বেশ কিছু টাকা মেরে পাড়ি জমান জাপানে। জাপান থাকা অবস্থায় তার প্রিন্টিং প্রেসের ব্যবসার গোড়াপত্তন হয়। কিন্তু জাপানের টোকিওতেও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে কালো তালিকাভুক্ত হন।
জাপান থেকে বহিষ্কার করা হলে তিনি আমেরিকায় চলে যান। সেখানে এক আমেরিকানকে বিয়েও করেন। আমেরিকান স্ত্রীকে কাজে লাগিয়ে ফের জাপানে ঢোকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
একপর্যায়ে বাংলাদেশে ফিরে সেলিম প্রধান ওরফে সেলিম মিয়া বিএনপি-জামায়াত আমলে সখ্য গড়ে তোলেন তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আলোচিত ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের সঙ্গে। হয়ে যান তার ব্যবসায়িক পার্টনার।
এলাকাবাসী জানান, তারা সেলিম প্রধানকে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা হিসেবে জানলেও তিনি কোনো পদে ছিলেন না। সেলিম প্রধানের আপন চাচাতো ভাই আবু সায়েম জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের শীর্ষ পদে আসীন হয়েছেন সেলিম প্রধানের বদান্যতায়।
আবু সায়েম নিজেও জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিংয়ের পরিচালক ছিলেন। এলাকাবাসী জানান, হঠাৎ সেলিমের পরিবর্তন ছিল চোখে পড়ার মতো। এলাকায় আসতেন বছরে ৩-৪ বার। সঙ্গে থাকত দামি গাড়িবহর, অস্ত্রধারী বডিগার্ড।
অপরদিকে সেলিমের সেই আলোচিত প্রিন্টিং প্রেসে গিয়ে প্রবেশের অনুমতি মেলেনি। সেখানে কর্তব্যরত দুই ব্যক্তি নিজেদের পরিচয় দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, হেড অফিসের অনুমতি ছাড়া সেখানে প্রবেশ করা যাবে না।
স্থানীয় বাসিন্দা ও শ্রমিকদের কয়েকজন জানান, গোপন তথ্য। মূলত বিদেশে ও দেশে ক্যাসিনোর পাশাপাশি স্পা ব্যবসা করা সেলিম নিয়মিত আসতেন এ প্রেসে। প্রেসের ভেতরে রয়েছে তার ‘বালাখানা’।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় গভীর রাতে সেলিম এখানে আসতেন ঘনিষ্ঠদের নিয়ে। বিদেশি নাগরিকদেরও নিয়ে আসতেন। সঙ্গে থাকতেন সুন্দরী ললনারা। ভোর পর্যন্ত চলত মদ্যপান, হৈহুল্লোড়।
জানা গেছে, র্যাবের হাতে গ্রেফতার সেলিম ‘প্রধান গ্রুপ’-এর কর্ণধার। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপারস লিমিটেড, পি ২৪ ল ফার্ম, এইউ এন্টারটেইনমেন্ট, পি ২৪ গেমিং, প্রধান হাউস ও প্রধান ম্যাগাজিন।
এর মধ্যে পি ২৪ গেমিংয়ের মাধ্যমে তিনি জুয়াড়িদের ক্যাসিনোয় যুক্ত করতেন। ব্যাংককের পাতায়ায় তার বিলাসবহুল হোটেল, ডিসকো বারসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধু অনলাইন ক্যাসিনো পরিচালনাই নয়, সেলিম রাজশাহীসহ সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় গবাদিপশুর সব খাটাল ও মাদক সিন্ডিকেটের হোতা। এমনকি সীমান্তে জাল টাকার মূল সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণও তার হাতে।
Discussion about this post