নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের নিয়ন্ত্রনাধীন বন্দর থানার গঙ্গাকূল “ম” খন্ড মৌজায় শীতলক্ষ্যা নদীর জায়গায় নির্মিত যুবরাজ মার্কেটি অপসারণে মো. জাকির ওরফে জাকির শাহ পীরকে নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ।
২৯ অক্টোবর রোববার যুগ্ম পরিচালক (বন্দর) শেখ মাসুদ কামাল স্বাক্ষরিত একটি চিঠির মাধ্যমে যুবরাজ মার্কেটের মালিক মো. জাকির হোসেন বরাবর ওই নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর অনুলিপি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, নৌ পুলিশ সুপার, বন্দরের ইউএনও, বন্দরের এসিল্যান্ড, বন্দরের ওসি, নৌ পুলিশের ওসিকেও দেওয়া হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, নদী ভরাটের এবং অবৈধ দখলের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষিতে হিউম্যান রাইট্স এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ কর্তৃক মহামান্য হাইকোর্টে দায়েরকৃত রীট পিটিশন নং-৩৫০৩/০৯ এর প্রেক্ষিতে মহামান্য আদালত নদী দখলদার উচ্ছেদসহ নদীকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা, নদীর তীরভূমিতে স্থায়ী কাঠামো অপসারণ এবং বালু বা অন্য কোনোভাবে নদী ভরাট সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার আদেশ দেন। এছাড়া মহামান্য হাইকোর্টের রীট পিটিশন-১৫৩৩৩/১২ এর আদেশেও অনুরুপভাবে নদী ভরাট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে জেলা প্রশাসন, নারায়ণগঞ্জ, জরীপ অধিদপ্তর, বিআডব্লিউটিএ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তর সমন্বয়ে সিএস নক্সা অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার উক্ত এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে। নদীর সীমানা চিহ্নিত করার পর গৃহীত জিপিএস অনুযায়ী বিআইডব্লিউটিএ হতে উক্ত এলাকায় লাল নিশান এবং লাল মার্কা দেয়া হয়। নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের নিয়ন্ত্রনাধীন বন্দর থানার গঙ্গাকূখ “ম” খন্ড মৌজায় সাম্প্রতিককালে আপনি শীতলক্ষ্যা নদীর জায়গায় লাল নিশান ও মার্কা অতিক্রম করে অবৈধ এবং বেআইনীভাবে যুবরাজ মার্কেট নামে একটি পাকা মার্কেট নির্মাণ করেছেন। উক্ত নির্মাণ কাজ শুরুর প্রাক্কালে আপনাকে সরাসরি মহামান্য হাইকোর্টের আদেশটি অবহিত করা হয়েছে এবং এ অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। তারপর বিভিন্ন সময়ে বারণ করা স্বত্তেও বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ এর কারণে সরকার সরকার ঘোষিত লকডাউনের মধ্যে আপনি নির্মাণ কাজ চলমান রাখেন এবং নির্মাণ সম্পন্ন করেন। আপনার এরূপ কার্যক্রম সরকারী আদেশ লঙ্ঘনসহ সরাসরি মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ বরখেলাপ।
এমতাবস্থয়, নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের নিয়ন্ত্রনাধীন নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার গঙ্গাকূল “ম” খন্ড মৌজায় শীতলক্ষ্যা নদীর জায়গায় নির্মিত অবৈধ যুবরাজ মার্কেট নামীয় পাকা স্থাপনাটি পত্র জারির সাত দিনের মধ্যে নিজ খরচে সম্পূর্ণরুপে অপসারণ করে তীরভূমি ও নদী পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হলো। এ নোটিশটি চূড়ান্ত নোটিশ হিসেবে বিবেচনা করার জন্য বলা হলো। পরবর্তিতে উক্ত স্থাপনা উচ্ছেদে আপনাকে আর কোনো প্রকার নোটিশ প্রদান করা হবে না। অন্যথায় উক্ত স্থাপনা উচ্ছেদের লক্ষ্যে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে এবং উচ্ছেদের সমুদয় ব্যয় আপনার নিকট থেকে আদায় করা হবে। একই সঙ্গে মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ অবমাননায় আপনার বিরুদ্ধে আদালত অবমামনার অভিযোগ দাখিল করা হবে।
এর আগে ১০ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব তীরে বন্দর ঘাট এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ।
ওই সময়ে বন্দরের গঙ্গাকুল মৌজায় পীর জাকির শাহের নির্মাণাধীন যুবরাজ মার্কেটের শতাধিক দোকানঘর উচ্ছেদ করতে গেলে বিআইডব্লিউটিএ অভিযানে বাধা প্রদান করে দখলদাররা। এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডায় হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এসময় পীর জাকির শাহ এর কাছ থেকে দোকান ক্রয়কারী এক ব্যক্তি ভেকুর অপারেটরকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। তাদের মার্কেটে ভেকু দিয়ে ভাঙচুর করলে ভেকু অপারেটরকে হত্যা করে সে ফাঁসিতে ঝুলবে বলেও হুশিয়ারী দেয়। পরে পীর জাকির শাহের নিয়োজিত আইনজীবী হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ দেখালে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ পিছু হটে।
পরে ১৫ নভেম্বর বন্দর একনং খেয়াঘাটস্থ ময়মনসিংহ পট্টি এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে বিশাল সমাবেশ করে বিআইডব্লিউটিএ’র প্রতি হুশিয়ারী দেন পীর জাকির শাহ। এছাড়া বর্তমান সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের লোকজন তার কাছের লোক বলেও বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তাদের প্রতি সাবধান বানী উচ্চারণ করেন তিনি। অথচ এই পীর জাকির শাহের বিরুদ্ধে শুধু বিআইডব্লিউটিএ’র জমিই নয় রেলওয়ের পুকুরও দখল ও ভরাটের অভিযোগ রয়েছে।
সেদিন বন্দর ১ নং খেয়াঘাটস্থ ময়মনসিংহ পট্টি এলাকায় বিআইডব্লিউটিএ`র অবৈধ উচ্ছেদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভায় সভাপতি`র বক্তব্যে জাকির শাহ বিআইডব্লিউটিএ`র কর্মকর্তাদের প্রতি হুংকার দেন।
এসময় তিনি বলেন, বেহাইয়া ও বেসরম কিছু অফিসার আছে তারা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করে সরকারের বদনাম করার চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার মা। আমি আমার মায়ের কাছে যাব এবং সেখানে আমি আপনাদের কথা বলব। এদেশে কিছু মন্ত্রী ও কিছু এমপি আমার মুরিদান রয়েছে। আমাদের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ সাহেবের স্ত্রী রাশিদা বেগম ২০ বছর পূর্বে আমাকে বাবা ডেকেছে। এখানে আমার অনেক মুরিদানের জায়গা সম্পত্তি রয়েছে। সম্পদ রক্ষা করা ইমানী দায়িত্ব। এ আসনের সাবেক এমপি নাসিম ওসমান আমার ছেলে। সে আজ বেঁচে থাকলে এখানে আমাকে আজ আসতে হতোনা। অনেক পীর ফকিররা রাজনীতি করে আমি রাজনীতি করিনা।
তিনি আরো বলেন, এখানে এসেছি সত্যটা বলার জন্য। বন্দর জন্মভূমি এই কারনে আমাকে এখানে আসতে হয়েছে। পাট মন্ত্রনালয় থেকে বন্দরে সাধারণ জনগণ সরকারকে টাকা পয়সা দিয়ে সাব কবলা দলিল মূলে সাব রেজিস্ট্রি মাধ্যমে উক্ত জমি ক্রয় করে । অথচ মাসুদ করিম নামে একজন লোক মানুষের ক্রয়কৃত সম্পত্তী ভাংচুর চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে। এবং কিছু স্থাপনা ভাঙ্গার চেষ্টা চালাচ্ছেন। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারীতে নদীকে জীবন্ত সত্বা ঘোষণা করে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এরপর সিএস জরিপ অনুযায়ী নদীর সীমানা উদ্ধারের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এদিকে শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব তীরে বন্দর ঘাট এলাকায় পীর জাকির শাহের যুবরাজ মার্কেট নামের একটি মার্কেট নির্মাণ করছেন যাতে তিনি শতাধিক দোকান ঘর নির্মাণ করেছেন। গেল বছরের শেষ দিকে ডিসেম্বর মাসে হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী বিআইডব্লিউটিএ’র উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে ওই মার্কেট রক্ষায় আদালতে একটি রীট পিটিশন দায়ের করেছিলেন পীর জাকির শাহ। হাইকোর্ট ৬ মাসের স্থিতিবস্থা জারি করেন।
কুতুববাগ দরবার শরীফ এর পীর সাহেব কেবলা জান আলহাজ্ব হযরত মাওলানা জাকির শাহ্্ (মাঃজিঃআঃ) এর পক্ষে মোঃ বিননূর হাসান অরূপ জানান, ক) তফসিল বর্ণিত ভূমি নারায়ণগঞ্জ জেলা বন্দর থানাধীন গঙ্গাকুল বন্দর “ম” খন্ড মৌজায় এস.এ-১৫৫, আর.এস-২৯০ নং খতিয়ানে, এস.এ-২৬৪, আর.এস-৬, ৭, ৯ ও ১০ দাগের ভূমি এস.এ এবং আর.এস রেকর্ডীয় মালিক মেসার্স র্যালী ব্রাদার্স কোম্পানী লিঃ নিরঙ্কুশ মালিক ও ভোগদখলদার নিয়ত থাকাবস্থায় বর্ণিত র্যালী ব্রাদার্স লিঃ এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে বিগত ২৩/০২/১৯৯৭ ইং তারিখে রেজিস্ট্রারকৃত ৪২৯৮ নং চুক্তিনামা দলিল মোতাবেক সাব কবলা দলিল রেজিস্ট্রির জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি গণপ্রতাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে পাট মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিজ্ঞ নারায়ণগঞ্জ প্রথম সাব জজ আদালতে মোকদ্দমা নং-৭৬/১৯৮৯ দায়ের প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত সকল আইনী প্রক্রিয়া শেষে বিগত ২৯/০১/১৯৯০ ইং তারিখে রায় এবং পরবর্তীতে একই আদালতে ডিক্রী জারী মোকদ্দমা নং- ৯/১৯৯০ এর ডিগ্রীর বুনিয়াদ বিজ্ঞ আদালত বিগত ১৫/০৭/১৯৯৬ ইং তারিখে ২৫৪৬ নম্বর দলিলের মাধ্যমে রেজিস্ট্রী করিয়া দেন এবং পরবর্তীতে ৩১/২০০০ নং অর্থ ঋণ মোকদ্দমার বিগত ৩০/০৯/২০০২ ইং তারিখে ডিগ্রীতে রেকর্ডীয় মালিক র্যালী ব্রাদার্স লি: বাংলাদেশে অবস্থিত সকল ভূ-সম্পত্তির নিরঙ্কুশ মালিক ও ভোগদখলদার সরকারের পাঠ মন্ত্রনালয় তফসিল বর্ণিত ভূমি বিক্রীর জন্য পত্রিকায় টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে সর্বশেষ সরকারের বস্ত্র ও পাঠ মন্ত্রানালয়ের নামে নামজারী ও জমাভাগ প্রাপ্ত নালিশা ও সম্পত্তি উক্ত মন্ত্রনালয় বিগত ০১/০১/২০১৪ইং তারিখে স্মারকে সাব রেজিষ্টার বন্দর নারয়নগঞ্জকে দলিল সম্পাদন ও রেজিষ্টারের জন্য পত্র প্রেরন করলে স্বাক্ষরকারী পূর্ববর্তী মো: সাহেদ আলীর বরাবরে রেজিষ্ট্রী করে দেয় এবং উক্ত সাহেদ আলী তার কন্যা নাজনিন আক্তার হেবাপ্রাপ্ত হয় এবং উক্ত নাজনীন আক্তার হতে স্বাক্ষরকারী রেজি: কৃত হেবার ঘোষনা দলিলের মাধ্যমে সত্যাধিকারী ও ভোগদখলদার নিয়ত হয়। বিগত ২৬-০৬-২০১৬ইং তারিখে ১৬৯৭/২০১৫-২০১৬নং নামজারী কেস মূলে নামজারীর প্রস্থ হয়ে সরকারের ভূমি উন্নয়নকর সহ অন্যান্য পাওনাদী যথারীতি পরিশোধ পূর্বক অদ্যবদি সরজমিনে মালিক ও ভোগ দখলদার নিয়ত হয় এবং এই মর্মে সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তফসিল বর্ণিত ভূমির নিরঙ্কুশ মালিকানার প্রত্যয়ন প্রাপ্ত হয়। উল্লেখ্য যে, তফসিল বর্ণিত ভূমি বিগত আর.এস রেকর্ড মোতাবেক মিল, বাড়ীর, নাল ও নয়নজুলী শ্রেণীর উচু ও উন্নত জমি যা শীতলক্ষা নদীর অন্তভুক্ত নয়।
Discussion about this post