নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
নারায়ণগঞ্জের খোলা বাজারে অবাধে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে রফতানির প্রতিশ্রুতিতে পণ্য উৎপাদনের শুল্কমুক্তভাবে আমদানি করা কাঁচামাল লবন, পলিথিন, সূতা ও কেমিক্যালসহ বিভিন্ন পন্য । আশ্চর্য হলেও সত্য জেলায় দায়িত্বরত আইনশৃংখলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থাকে ম্যানেজ করে অসাধু লবণ ব্যবসায়ী চক্র, চোরাই সূতা বিক্রেতা চক্র ও পলিথিন বিক্রর সাথে জড়িত কয়েকটি চক্র নানাভাবে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছে ।
আর এই অসাধু কারবারী চক্রকে সহায়তা করছে জেলায় দায়িত্বরত শুল্ক গোয়েন্দা সংস্থা, এনবিআর (রাজস্ব কর্মকর্তা) পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা বিসিক এর কয়েক কর্মকর্তাসহ জেলা প্রশাসনের অসাধু কিছু ব্যাক্তি। নিয়মিত এই চক্রটির সাথে অসাধু লবন কারবারী, চোরাই সূতা কারবারী, কেমিক্যাল কারবারী পলিথিন কারবারী চক্র।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন ব্যবসায়ী পৃথকভাবে আলোচনাকালে বলেন, প্রশাসরে লোকজনই অসাধু ব্যবসায়ীদের মদদ দিয়ে শুল্কমুক্তভাবে আমদানি করা কাঁচামাল খোলা বাজারে বিক্রি কিংবা পাচার করতে নানাভাবে সহায়তা করে। জেরায় দায়িত্বরত সাধু কর্মকর্তাদের ইশারা ছাড়া কোন অসাধু ব্যবসায়ী এমন হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার সাহস করতে পারবে না । ঘুষ দিলেই সব ঠিক। এই বিশাল পরিমাণ কর ফাঁকির কারণে সরকার লবন খাত থেকেই প্রতি বছর ৭শ/৮শ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে বলে নারায়ণগঞ্জ লবন ব্যবসায়ীদের নেতা পরিতোষ সাহা স্বীকার করেন । এতো বিশাল পরিমাণ রাজস্ব হারানোর বিষয়েও জেলা প্রশাসনের কোন মাথা ব্যাথা নাই শুধু মাত্র ঘুষ লেনদেনের কারণে ।
নারায়ণগঞ্জের রফতানির প্রতিশ্রুতিতে পণ্য উৎপাদনের শুল্কমুক্তভাবে আমদানি করা লবন মিল মালিক সংগঠনের মূল হোতা শহরের পূবালী সল্টের কর্ণধার পরিতোষ সাহা অকপটেই স্বীকার করেন বিদেশ থেকে ইন্ড্রাষ্টিয়াল লবন আমাদনী করে তা খাবারের লবন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে । এই লবন খাবারের লবন হিসেবে আমদানী করা হয় না। সালফেটের ঘোষনা দিয়ে আমদানী করা হয় সোডিয়াম ক্লোরাইড । সরাকারী শুল্ক ৩৭% । এই লবন আমদানী করে কোলা বাজারে বিক্রির কারণে সরকার হারাচ্ছে ৭শ/৮শ কোটি টাকার রাজস্ব।
জান যায়, রফতানির প্রতিশ্রুতিতে পণ্য উৎপাদনের শুল্কমুক্তভাবে আমদানি করা কাঁচামাল খোলা বাজারে বিক্রি কিংবা পাচার ঠেকাতে মাঠে নেমেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এনবিআর। গত ১৫ দিনে অন্তত ১৬টি কাভার্ড ভ্যান জব্দ করা হয়েছে যাতে এ ধরনের পণ্য রয়েছে।
সূত্র জানায়, দীর্ঘ দিনের এই অনিয়ম ও ব্যবসায়ীদের এই অবৈধ কাজ প্রতিহত করার লক্ষ্যে সম্প্রতি ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটে নতুন কমিশনার নিয়োগ দেয় এনবিআর। বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়ার নির্দেশনায় নতুন কমিশনার হুমায়ূন কবীর এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলেই জানায় সূত্রটি।
কমিশনারের নেতৃত্বে ছয়টি প্রিভেনটিভ টিম মাঠে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের দিন-রাত অভিযানে গত দুই সপ্তাহে ১৬টি কাভার্ড ভ্যান জব্দ করা হয়েছে।
এসব কাভার্ড ভ্যানে ফেব্রিক্স, পিপিদানা (প্লাস্টিক তৈরির কাঁচামাল), এসিডিটিক এসিড, ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট কার্ড, পেডিং (ব্লেজার বা জ্যাকেট তৈরির কাঁচামাল)। যার বাজার মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা।
এসব পণ্যের বিপরীতে প্রযোজ্য শুল্ক করের পরিমাণ প্রায় ৬ কোটি টাকা বলেও নিশ্চিত করেছে সূত্রটি।
পণ্যগুলো নোমান গ্রুপ, নাইস ডেনিম, ফারদিন অ্যাকসেসরিজ লিমিটেড, অলিম্পিক অ্যাকসেসরিজ লিমিটেড, রেজা ফ্যাশন লিমিটেডের বলে জানা গেছে।
এনবিআর বলছে, এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দ্য কাস্টমস অ্যাক্ট ১৯৬৯, বন্ডেড ওয়্যার হাউজ বিধিমালা ২০০৮ এর আওতায় বিভাগীয় মামলা করা হবে। সেই সঙ্গে তাদের বন্ডিং কার্যক্রম ও আমদানি-রফতানির তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, অসাধু ব্যবসায়ীদের এমন তৎপরতা সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে বন্ডেড পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ক্ষতির মুখে পড়ছে দেশীয় শিল্প কারখানা।
আর বৃহৎ ক্ষতির বিষয় হলো, প্রত্যাশিত রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে বাধা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্র আরও জানায়, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করায় আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে প্রায় চার শতাধিক মামলা আদালতে বিচারাধীন। আর মামলাগুলোতে প্রায় ৭শ’ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র জানাচ্ছে, ব্যবসায়ীদের দাবি আমলে নিয়েই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে জোর দিয়ে কাজ করছে।
এনবিআর’র পদক্ষেপে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন দেশীয় শিল্প কারখানার মালিকরা। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) পক্ষ থেকে সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন একটি পত্রের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বলেও জানায় সূত্র।
এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে এনবিআর কাজ করে যাচ্ছে। আমরা বন্ড সুবিধার পণ্য খোলা বাজারে বিক্রি রোধে অভিযান পরিচালনা করছি। আমাদের কাস্টমস বন্ড কমিশনারদের সেই লক্ষ্যে কাজ করছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের পণ্য অবৈধভাবে খোলা বাজারে বিক্রির সময় জব্দ করা হয়েছে- তাদের বিরুদ্ধে কাস্টমস আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এমনকি তাদের বন্ড লাইসেন্স বাতিল করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বন্ড সুবিধা দেওয়া হয় দেশীয় শিল্পকে বাঁচানোর জন্য। কিন্তু বন্ড সুবিধা নিয়ে সেই বন্ডেড পণ্য যদি খোলা বাজারে বিক্রি করা হয়, তাহলে সেটা অন্যায়। আমাদের অভিযান শুরু হয়েছে এবং চলবে। যত বড় প্রতিষ্ঠানই হোক, অন্যায় করলে ক্ষমা করা হবে না।
Discussion about this post