কয়েকদিন আগে তার শালা হাসান তাকে চড় মেরে আব্বাসের স্ত্রী, সন্তানসহ তার শ্যালিকা নাজমিনের ফ্ল্যাটে চলে আসে। আর তার জের ধরেই বৃহস্পতিবার সকালে আব্বাস এই তিনটি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটায়।
সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি :
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে নিজের মেয়েকে জখম করে দুই কন্যাসহ শ্যালিকাকে জবাই করে হত্যার ঘটনায় ঘাতক দুলাভাই আব্বাসকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টায় জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক এনামুল হক সঙ্গীয় ফোর্স সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার হাউজ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
কয়েকদিন আগে তার শালা হাসান তাকে চড় মেরে আব্বাসের স্ত্রী, সন্তানসহ তার শ্যালিকা নাজমিনের ফ্ল্যাটে চলে আসে। আর তার জের ধরেই বৃহস্পতিবার সকালে আব্বাস এই তিনটি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটায়।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে জেলা পুলিশ লাইনসে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, আব্বাস প্রাথমিকভাবে হত্যাকান্ড ঘটানোর কথা স্বীকার করেছেন। সে ইয়াবায় আসক্ত।
এর আগে একই দিন সকালে সিদ্ধিরগঞ্জের ১নং ওয়ার্ডের পাইনাদী সিআই খোলা এলাকার আনোয়ারের ৭ম তলা ভবনের ৬ষ্ঠ তলার পূর্বপাশের একটি ফ্লাট বাসা থেকে মা ও দুই মেয়ের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় আহত অবস্থায় আরেকজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পারিবারিক কলহের জের ধরে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা পুলিশের। পরে ময়না তদন্তের জন্য লাশ নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ।
নিহতরা হলো, মহানগরের আদমজী সুমিলপাড়া আইলপাড়া এলাকার সুমন মিয়ার স্ত্রী নাজনিন বেগম (২৮), তার মেয়ে নুসরাত (৫) ও খাদিজা (২)। নাজনিনের বোনের মেয়ে প্রতিবন্ধি সুমাইয়াকে (১৫) ছুরিকাঘাত করা হয়। তাকে আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এসময় নিহতের স্বামী ও শ্বশুর বাড়ীর লোকজন উপস্থিত হলেও তার পরিবারের কাউকে পাওয়া যায় নাই ।
নিহতের স্বামী সুমন জানান, তিনি সিদ্ধিরগঞ্জের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সানারপাড় এলাকার জোনাকি পেট্রোল পাম্পে রাতে ডিউটি শেষে সকাল ১০টায় বাসায় ফিরেন। ওইসময় বাসার দরজা খোলা ছিল। ভিতরে প্রবেশ করতেই স্ত্রী সন্তানদের লাশ দেখতে পায়। আর আহত অবস্থায় আত্মীয় সুমাইয়া পড়ে আছে। পরে অন্য ভাড়াটিয়া ও আত্মীয় স্বজনকে সহ পুলিশকে খবর দেয়। পড়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার শুরু করে। তবে কে বা করা করেছে এ বিষয়ে এখনও নিশ্চিত কিছুই বলতে পারছে না।
খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে আসেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ফারুক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মনিরুল ইসলাম, জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনাম আহমেদ।
দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ বলেন, মূলত পারিবারিক কলহের জের ধরেই এ তিনটি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। আজ সকাল ৮টায় ঘটনাটি ঘটেছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে এ হত্যাকান্ডের ঘাতক হলেন আব্বাস। আব্বাসের সাথে তার স্ত্রীর বিরোধ ছিল। ওই বিরোধের কারণে জিদ করে আব্বাসের শ্যালিকার বাসায় তার স্ত্রী চলে আসে। সে একটি গার্মেন্টে চাকরি করে। বৃহস্পতিবার সকালে সে কারখানায় চলে যায়। শ্যালিকার সঙ্গে আলাপকালে কোন বিরোধের জের ধরেই শ্যালিকা ও তার দুই মেয়েকে ছুরি দিয়ে জবাই করে হত্যা করেছে। আর আব্বাস তার প্রতিবন্ধী মেয়েকেও জখম করেছে।নিহতের শ্বশুর নিজাম জানায়, আমার ছেলে সুমন নাজনিনের সাথে প্রেম করে বিয়ে করার পর থেকে এই এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছে। আমরা মাঝে মধ্যে এ বাসায় আসা যাওয়া করতাম। কিন্তু কখনো তাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে অমিল দেখিনি। সকাল ১০টার দিকে আমার ছেলে পেট্রোল পাম্প থেকে নাইট ডিউটি করে বাসায় এসে তার স্ত্রী সন্তানদের লাশ পরে থাকতে দেখে আমাদেরকে খবর দেয়। আমরা এ ঘটনার জন্য দৃষ্টান্ত মূলক বিচার দাবী করছি।
জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, ট্রিপল মার্ডারের কয়েক ঘন্টা পর আব্বাসকে সিদ্ধিরগঞ্জের পাওয়ার স্টেশনের একটি কমিউনিটি সেন্টারের টিবেলের নিচে পালিয়ে থাকা অবস্থায় তাকে গ্রেপ্তার করে। ঘাতক আব্বাস পটুয়াখালী জেলার পইক্কা গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। সে সিদ্ধিরগঞ্জ বাতেনপাড়া এলাকায় ভাড়া থাকতো। পেশায় সে বাবুর্চী।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে সিদ্ধিরগঞ্জের সিআইখোলা এলাকার আনোয়ারের বাড়ির ৬তলা ভবনের ৬ তলার সুমন মিয়ার ফ্ল্যাট থেকে গলাকাটা অবস্থায় স্ত্রী নাজমিন (২৮), দুই মেয়ে নুসরাত (৮) ও খাদিজার (২) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে রক্তাক্ত জখম অবস্থায় ঘাতক আব্বাসের মেয়ে এবং নিহত নাজমিনের ভাগ্নি সুমাইয়কে (১২) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঘটনার পর থেকে এই হত্যাকান্ডের হোতা হিসেবে নিহত নাজনিনের দুলাভাই আব্বাসকে সন্দেহ করে আসছিল স্বজন ও পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই নিহত নাজমিনের ভগ্নিপতি ও আহত সুমাইয়ার বাবা আব্বাস পলাতক ছিলো।
নিহতের ছোট ভাই হাসান জানান, আমার বড় বোনের স্বামী আব্বাস প্রায়ই মাদক সেবন করে এসে সকলকে মারধর করতো। বুধবার রাতে আমার ভাগ্নি আব্বাসের মেয়ে পালিয়ে আমার ছোটবোন নাজমিনের বাড়িতে আসে। তাকে নিতে এসেই সে আমার বোন নাজমিন ও তার দুই মেয়েকে গলাকেটে হত্যা করেছে। এছাড়া তার নিজের মেয়েকেও আহত করে।
বৃহস্পতিবার সকালে সে কারখানায় চলে যায়। শ্যালিকার সঙ্গে আলাপকালে কোন বিরোধের জের ধরেই শ্যালিকা ও তার দুই মেয়েকে ছুরি দিয়ে জবাই করে হত্যা করে। আর আব্বাস তার প্রতিবন্ধী মেয়েকেও জখম করেছে। আমরা আব্বাসকে ধরতে অভিযান শুরু হয়েছে। এর কয়েক ঘন্টা পর আব্বাসকে গ্রেপ্তার করা হয়।
Discussion about this post