বেলা এগােরো টায় গ্রেফতার এবং বিকেল পাঁচটায় জামিন ! পুলিশের নানা কারিশমায় তেলচোরদের গ্রেফতার নাটক মঞ্চায়ন ও জামিন নাটকের যবণিকা টানলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ । এমন ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে খোদ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের মাঝে । এমন সমালোচনা থেকে জানা যায় চাঞ্চল্যকর তথ্য।
বুধবার বিকেল ৫ টায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ফাহমিদা খাতুনের আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের কোন জোড়ালো আবেদন না থাকায় এবং থানা পুলিশের রিমান্ডের কোন আবেদন না থাকার কারণে গ্রেফতারকৃত তেলচোরদের অন্যতম হোতা সিরাজ মন্ডলসহ সকল আসামীকে জামিন প্রদান করা হলে তারা ইতিমধ্যেই নারায়ণগঞ্জ আদালত থেকে মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন আদালতের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র ।
এমন ঘটনায় আদালত চত্তরেও ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে খোদ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ । নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, থানা থেকে যে চক্রান্ত হয়েছে সেই মোতাবেক কাজ হয়েছে আটককৃত তেলচোরদের ক্ষেত্রে । যা আশ্চর্যজনক ঘটনা ।
আদালত ও সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি
সিদ্ধিরগঞ্জে কুক্ষাত তেলচোরদের একাংশের গডফাদার নানা অপরাধের হোতা সিরাজুল ইসলাম মন্ডল ১১ সহযোগীসহ গ্রেফতার করার ঘটনায় আশরাফ বাহিনীর মাঝে দেখা দিয়েছে আনন্দের বন্যা ।
বুধবার সকাল ১১ টায় সিদ্ধিরগঞ্জে এসও রোড এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করে থানার এসআই ওমর ফারুক ।
গ্রেফতারকৃত সিরাজুল ইসলাম মন্ডল নাসিক সিদ্ধিরগঞ্জের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর।
সে পুলিশ সদস্য মফিজ হত্যা মামলার চার্জশিট ভুক্ত আসামি। তার বিরুদ্ধে নাশকতাসহ একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, সাবেক কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম মন্ডল, তার সহযোগী মাহবুবুর রহমান, সেলিম মজুমদার, সুমন, ইমন, মাদক ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বাক্কু, রনি, ফারুক, ছালাম, কসাই বাবু, সালাউদ্দিন ও সম্রাট ।
গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামরুল ফারুক বলেন। গ্রেফতারকৃতরা একটি মারামারি মামলার এজাহার ভুক্ত আসামী।
উল্লেখ, গত ২৩ এপ্রিল ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে শ্রমিক নেতা আশরাফ উদ্দিনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ভাংচুর ও মারধরের ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মারামারি মামলা হয়। ঐ মামলায় গ্রেফতারকৃরা এজহার ভুক্ত আসামী।
এমন ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের মাঝে সৃষ্টি হওয়া ব্যাপক সমালোচনার ঝড় থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবৎ সিদ্ধিরগঞ্জে এমন তেলচুরির সাম্রাজ্য নিয়ে কুক্ষাত অপরাধী সিরাজ মন্ডল ও তার প্রতিপক্ষ আরেক গডফাদার কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতির সাথে যোগ দিয়ে গত ২৩ এপ্রিল তেল চোরদের আরেক হোতা আশরাফ উদ্দিনের দ্বন্ধের সৃস্টি হয়। চরম এই দ্বন্ধের কারণে উভয় পক্ষকে থামাতে র্যাব ও পুলিশ উপস্থিত হয়ে ফাকা গুলি করতে বাধ্য হয় । এই ঘটনায় মামলা দায়ের করে উভয় পক্ষই । কিন্তু পুলিশের একটি দূর্ধর্ষ অসাধু চক্র উভয় পক্ষের কাছে থেকে কৌশলে মোটা অংকের অনৈতিক লেনদেনের পর তেলচোরদের গডফাদার সাবেক কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম মন্ডলসহ তার সহযোগিদের গ্রেফতার করে নাটক মঞ্চায়ন করে । অপরদিকে আটকের পর দ্রুত তাদেরকে আদালতে পাঠানোর পাশাপাশি আদালত থেকে আজ বুধবারের মধ্যেই জামিন করানোর শর্ত সাপেক্ষে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে জামিন করানোর সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করেন থানা পুলিশের এক কর্মকর্তা । এমন জামিনের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয় মারামারি মামলার আসামীদের জামিন কার্যক্রমের নাটক ।
আসামীদের আটক করে সিদ্ধিরগঞ্জ খানার কোন হাজতে রাখা হয়েছিলো তা কেউ বলতে পারছে না বলেও মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ ।
পুলিশের আরেকটি সূত্র জানায়, তেল চুরি ছাড়াও পুরানো ক্ষোভ থেকে কাউন্সিলর মতি তার নিয়ন্ত্রিত বাহিনীর অন্যতম হোতা আশরাফকে দিয়ে হামলা চালানোর ঘটনায় ফের উত্যাপ্ত হয়ে উঠে সিদ্ধিগঞ্জের তেল চুরির সেক্টর । চোরাই তেলের সাম্রাজ্য নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পাশাপাশি ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারীতে মতির রক্ত ঝড়ানোর ক্ষোভ থেকেই একের পর এক অঘটন ঘটে যাচ্ছে সিদ্ধিরগঞ্জে । আর এই দ্ধন্ধকে পুঁজি করে পুলিশের অসাধু সদস্য ও নেতাদের কেউ কেউ ফায়দা হাসিল করেই যাচ্ছে ।
(২৫ এপ্রিল প্রকাশিত তথ্য সূত্রে আরো জানা যায় )
তেলের সাথে স্লাইস মিশ্রণ, চুরির মহোৎসবে ফের অঘটনের শংকা !
বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারনে সারাদেশের মানুষ যেখানে জবুথুবু অবস্থা তখন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জের চোরাই তেলের ব্যবসা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে তেল চোরদের হোতা সাবেক কাউন্সিলর সিরাজ মন্ডল ও এক সময়ের পুলিশের সোর্স বর্তমান তেলচুরির সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণকারী আশরাফের দ্বন্ধকে পুঁজি করে প্রভাবশালী একটি রাজনৈতিক পক্ষ এবং প্রশাসনের অসাধু চক্র আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে।
এমন গভীর চক্রান্তের জের ধরে জ্বালানী তেল চোর চক্রের এক পক্ষের মামলা গ্রহণ করে অপর তেলচোরদের গডফাদার সিরাজ মন্ডলসহ তার সহযোগী ৬৬ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এমন হামলা ও মামলাকে সামনে রেখে বিশাল বাণিজ্য করতে মাঠে রয়েছে চক্রান্তকারী একাধিক প্রভাবশালী পক্ষ ।
সিদ্ধিরগঞ্জে এমন অপরাজনীতিকে সামনে রাখে অবৈধ চুনা ব্যবসা, চোরাই তেলের ব্যবসা, পরিবহনের বিশাল চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের নেপথ্যে কলকাঠি নেড়ে যাচ্ছে রাজনৈতিক দলের নেতারা ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিদ্ধিরগঞ্জের সাধারণ ব্যবসায়ীরা বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জের কলকাঠি নাড়েন কারা ? কাদের ফোন ও উপঠৌকনের পর তেল চোরদের এক পক্ষের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আরেক তেলচোরদের হোতার মামলা ই প্রমাণ করে, আসলে কি হচ্ছে নেপথ্যে ।
সাত খুনের মতো ওই রকম বড় ধরনের অঘটনের আশংকা প্রকাশ করে এক ব্যবসায়ী আরো বলেন, সাত খুনের বিচার যা ই হয়েছে তা নিয়ে কোন বিতর্ক না হলেও ওই ঘটনার আগে ও পরের ঘটনা নারায়ণগঞ্জের সকলেই খুব ভালো করেই অনুধাবন করেছেন । তেমনি অঘটনের শংকা প্রকাশ করছে সিদ্ধিরগঞ্জবাসী ।যা নিয়ে কেউ মুখ খুলে বলতে পারছেন না কেউ।
জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবৎ ডিবিএল, বৃটিশ আমেরিকান ট্যাবাকো কোম্পানি, নাসির গ্রুপসহ দেশের বৃহৎ কয়েকটি কোম্পানির জ্বালানী তেল সরবরাহের কাজ করে আসছিলো সিদ্ধিরগঞ্জের আসরাফ উদ্দিন, সিরাজ মন্ডলের পৃথক সিন্ডিকেট । একইভাবে ফতুল্লার আরো একটি সিন্ডিকেট তেল সরবরাহ করে আসছে নামমাত্র পরিবহন খরচে ৷ সপ্তাহে কয়েকবার এই জ্বালানী সরবরাহ করে বিশাল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে এই চক্রটি ।
নামমাত্র খবচায় বিশাল এই জ্বালানী তেল পরিবহণ করে রাতারাতি বিশাল অর্থ বিত্তের নেপথ্যের কাহিনী কি ?
এমন প্রশ্নে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করে জানায়, চোরাই ফার্নিশ তেলের সাথে স্লাইস তেল মিশ্রিত করে প্রতি ট্রিপে ৫ লাখ টাকা আয় করে এই চক্রটি । ফার্নিশ তেলের মুল্য ৪২ টাকা লিটার । আর স্লাইস (বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ফেলে দেয়া তেল) নামনাত্র মুল্যে ক্রয় করে ফার্নিশ তেলের সাথে মিশ্রণ ঘটিয়ে নামীদামী বৃহৎ কোম্পানিগুলোর সাথে প্রতারণা করে হাতিয়ে নিচ্ছে বিশাল অর্থ । ফার্ণিশের সাথে স্লাইসের মিশ্রণ ছাড়াও প্রতিটি তেলবাহী ট্যাংকলড়িতে চোরাই চেম্বারে নিম্নে প্রতি ট্রিপে এক হাজার লিটার জ্বালানী চুরির মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে সকল চোরাই সিন্ডিকেটের হোতারা। আর এই চোরাই অর্থের বিশাল ভাগবাটোয়ারার বৃহৎ একটি অংশ অসাধু রাজনীতিবিদ, প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের মাঝে বন্টন করে সকল পক্ষকে করায়ত্ব করে যাচ্ছে চোরাই চক্রের হোতারা ।
এমন বিশাল জ্বালানী তেলের চোরাই সাম্রাজ্য নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহল, প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই বৃহস্পতিবার দফায় দফায় হামলা পাল্টা হামলা চালায় তেলচোর সিরাজ মন্ডলের বাহিনী এবং চেলচোর আশরাফ বাহিনী ।
এমন হামলায় উভয় পক্ষ সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও আশরাফ উদ্দিনের দায়ের করা অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণ করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ ৷ এ মামলায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সিরাজ মন্ডলকে প্রধান আসামী করে ২৭ জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাত আরো ৩০/৪০ জনকে আসামী করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করেছে।
এ ঘটনায় পুলিশ এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে বা পারলেও উভয় পক্ষ বিশাল অর্থে পুলিশ ম্যানেজ করার গুঞ্জন রয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জে।
২০১৪ সালে সাত খুনের পুর্বে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি, র্যাব ১১ এর তৎকালীন অসাধু কর্মকর্তা (ফাসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী তারেক সাঈদ, এমএম রানা, আরিফ হোসেন) নূর হোসেনের অর্থায়নে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে অপরাধীদের লালন পালন করায় দেশের ইতিহাসে কলংকময় অধ্যায়ের সৃষ্টি হয় । এমন অস্থিরতা আবারো দেখা দিয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জে।
এমন দাবী অনেকের। অভিযোগের এমন রেকর্ড সংরক্ষিত রয়েছে নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট এর দপ্তরে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামরুল ফারুক জানান, সিরাজ মন্ডল ও আশরাফের দ্বন্দ্বের ঘটনায় এক পক্ষ মামলা দায়ের করেছে। ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে ।
Discussion about this post